ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

রাস্তায়ও ঠাঁই নেই ছোট আসমার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:০৫, ২৯ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১০:১৮, ২৫ জুলাই ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

ফুলের মতো ছোট্ট শিশু ফারজানা আক্তার আসমা। বয়স ৮ বছরের মতো। তার একটি পা নেই। অনেকের মতো অট্টালিকায় থাকে না। রাস্তার পাশে ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরেই তার বাস। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বাংলা মোটরের পাশে সোনারগাঁও রোডে তার সঙ্গে দেখা।   

কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম কি?   

স্ক্র্যাচে ভর দিয়ে একটু সামনে এগিয়ে এসে ‘ফারজানা আক্তার আসমা’।

তোমার বাবা কি করে?        

আসমার মুখটা হঠাৎ করে মলিন হয়ে গেল। সুন্দর যে হাসিটা ছিল সেটা যেন মিলিয়ে গেল। এরমাঝে একজন মাঝ বয়সী মহিলা এগিয়ে এলেন। তিনি জানতে চাইলেন কি হয়েছে?

আমি বললাম ওর কেউ কি আছে?

মহিলা জানালেন, সে তার নাতনি। জানতে চাইলাম, কিভাবে ও পা হারিয়েছে?

দাদির নাম হোসনে আরা। তিনি জানালেন, জন্মগতভাবেই সে পা হারা।

তার বাবা-মা কোথায়?                  

হোসনে আরা একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললেন, ওর মা তার জন্মের সময়ই মারা গেছে। আমার ছেলে তার মাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিল। আমরা কেউ রাজি ছিলাম না। পরে ছেলে সবার অমতে তাকে বিয়ে করে ফেলে। আমরাও পরে মেনে নেই। কি আর করা ছেলে পছন্দ করেছে। কিন্তু সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় ওর মা দুনিয়া থেকে চলে যায়। তারপর ওর সব দায়িত্ব আমার ওপরে এসে পড়ে। আমার তো বয়স হয়েছে অনেক কষ্ট হয় তবু নাতনিকেতো ফেলে দিতে পারি না। ওর জন্য আমার খুব চিন্তা হয়। আমি মরে গেলে ওর কি হবে। ওতো প্রতিবন্ধী।

ওর বাবাও কি নেই?     

হোসনে আরা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, ‘তার বাবা থেকেও নেই। মেয়েটা জন্মের এতিম।’ হোসনে আরার ছেলের কথা বলতে বলতে চোখে পানি চলে আসলো। চোখ মুছে বললেন, ওর মা মারা যাওয়ার পর ওর বাবার সঙ্গে অন্য একটি মেয়ের সম্পর্ক হয়ে যায়। সে গাজীপুরে একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। বিয়ে করে তারা সেখানেই থাকে। আমাদের কোনো খোঁজ খবর নেয় না। ফুটফুটে মেয়েটার প্রতিও তার কোনো খেয়াল নেই। আমার আরেকটি ছেলে আছে তার অবস্থাও ভালো না। আমাদের গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগাছা। ছেলের ওপর নির্ভর হয়ে চলতে হতো। গ্রামে তেমন কিছু নেই। ছেলেও তেমন খোঁজ খবর নেয় না। তাই নাতনিকে নিয়ে বাঁচার আশায় তিন বছর আগে এই ঢাকা শহরে চলে আসি। বাসা বাড়িতে কাজ করি। থাকার কোথাও জায়গা না পাওয়ায় ফুটপাতের ওপর এই ঝুপড়ি ঘরেই কোনো রকম থাকি। 

আসমাকে তার বাবার কথা জিজ্ঞেস করলে বলে, ‘বাবা মাঝে মাঝে ফোন করে। আসে না। এখানে আমার অনেক বন্ধু আছে তাদের সঙ্গে আমি খেলি।’

স্কুলে যাওয়া হয়? এর উত্তরে আসমা বলে, ‘এখানে একটা স্কুল আছে আমি মাঝে মাঝে যাই। আমার পড়ালেখা করতে মন চায়। ওই যে সাদা কাপড় পরে ‘ডাক্তার’ সেই রকম হইতে মন চায়। দাদির অনেক টাকা নেই। সারাদিন কাজ করে। আমাকে কিছু করতে দেয়না।’

আসমার স্বপ্ন অনেক বড় হওয়ার। কিন্তু কিভাবে সে বড় হবে সেটা সে জানেনা। স্ক্র্যাচে ভর দিয়ে ছুটে চলেছে অজানা গন্তব্যের দিকে। রাস্তার পাশের ঝুপড়ি ঘরেই ছোট্ট বয়সে কত কি স্বপ্ন দেখে। ঝলমলে রোদ ওঠলে খিল খিলিয়ে হেসে বেড়ায়। কিন্তু কেউ তার ভেতরের কষ্টটা দেখে না।   

এভাবে কত আসমা যে রাস্তার পাশে পড়ে আছে; সে খবর কে রাখে। রাস্তার ধুলাবালি আর ঝড় বৃষ্টিতে ওদের স্বপ্নগুলো কোথায় যেন হারিয়ে যায়। আবার কখনো কখনো বুলডোজারের চাপায় প্রাণ বাঁচাতে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করে। ঠাঁইহীন নগরে ছোট্ট ঠিকানা যেটুকু আছে সেটাও মাঝে মাঝে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। আর আসমা তখন ফ্লাড লাইটের আবছা আলোতে দাঁড়িয়ে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদে। আসমাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ কি নেই?

এসি 

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি