রিফাত হত্যা: মিন্নিকে নিয়ে কী হচ্ছে?
প্রকাশিত : ১৭:৪০, ১৮ জুলাই ২০১৯ | আপডেট: ১৯:০৭, ১৮ জুলাই ২০১৯
বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, সেখানে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা দেখে নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির প্রতি সমবেদনা ছিলো সবার। কিন্তু ঘটনার কয়েকদিন পর সিসিটিভির দ্বিতীয় ফুটেজ দেখে সন্দেহ হয় মিন্নির প্রতিও।
ওই সূত্র ধরেই গত সোমবার সকালে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসেন পুলিশ। সেখানে প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি মিন্নি। তাই ওইদিনই রাত ৯ টায় সংবাদ সম্মেলন করে তাকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। পরে তাকে যখন আদালতে হাজির করা হয়, সেখানেও একটি প্রশ্নে আটকে যান তিনি।
তখনই বিচারক মিন্নিকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়ার নির্দেশ দেন। এবিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে মিন্নি রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গেও মিন্নি যুক্ত ছিলেন। এমন তথ্য প্রকাশের পর এখন সবার মুখে আলোচনার বিষয় মিন্নিকে নিয়ে কি হচ্ছে? কোন দিকে যাচ্ছে রিফাত হত্যার ঘটনা।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরগুনা জেলা পুলিশের এক সদস্য বলেন, ‘মূলত রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল না। তাকে মারধর করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।’
বরগুনা জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জুন বুধবার রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ঘটনার দুদিন আগে সোমবার হেলাল নামে এক ছেলের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় রিফাত শরীফ। হেলাল রিফাত শরীফের বন্ধু হলেও নয়ন বন্ডের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। সেই মোবাইল ফোন উদ্ধারের জন্য নয়ন বন্ড মিন্নির দারস্থ হয়।
পরে রিফাত শরীফের কাছ থেকে ফোন উদ্ধার করেন মিন্নি। কিন্তু ওই ফোন উদ্ধার করতে গিয়ে রিফাত শরীফের মারধরের শিকার হন মিন্নি। পরে হত্যাকাণ্ডের আগের দিন মঙ্গলবার নয়নের সঙ্গে দেখা করে মিন্নি সেই মোবাইল নয়নের হাতে তুলে দেন। এ সময় মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফের হাতে যে মারধরের শিকার হয়েছেন তার প্রতিশোধ নিতে নয়নকে বলেন। তবে মারধরের সময় নয়ন যাতে উপস্থিত না থাকেন, সেটাও মিন্নি নয়নকে বলেন। এরপর ওইদিন সন্ধ্যায় বরগুনা কলেজ মাঠে মিটিং করে রিফাত শরীফকে মারধরের প্রস্তুতি নেয় বন্ড বাহিনী।
হামলার আগ মুহূর্তে রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নি কলেজ থেকে বের হলেও কলেজের সামনে রিফাতকে মারধরের পরিকল্পনা অনুযায়ী কোনো প্রস্তুতি দেখতে না পেয়ে সময় ক্ষেপণের জন্য রিফাত শরীফকে নিয়ে আবার কলেজে প্রবেশ করেন।
এর কিছুক্ষণ পরই বন্ড বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য একত্রিত হয়ে রিফাত শরীফকে আটক করে মারধর করতে করতে কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে পূর্ব দিকে নিয়ে যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী রিফাতকে মারধর করা হচ্ছে দেখেই মিন্নি তখন স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিলেন।
শুনানিতে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির আদালতকে বলেন, মিন্নি এ মামলার প্রধান সাক্ষী হলেও মামলার ১২ নম্বর আসামি রেজোয়ানুল ইসলাম ওরফে টিকটক হৃদয় গত ১৪ জুলাই আদালতে মিন্নি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ সময় তিনি টিকটক হৃদয়ের স্বীকারোক্তিমূলক সেই জবানবন্দি আদালতে তুলে ধরেন। এছাড়াও হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে এ মামলার একাধিক অভিযুক্তের সঙ্গে মিন্নির কথোপকথনের প্রামাণাদি আদালতে তুলে ধরার পাশাপাশি মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদে রিফাত হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পুলিশ পেয়েছে বলেও আদালতে অবহিত করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
মিন্নির রিমান্ড শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন- রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সঞ্জীব দাস। তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অ্যাডভোকেট সঞ্জীব দাস বলেন, মিন্নির শুনানির সময় আদালতে রিফাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বক্তব্য শেষে আদালত মিন্নির সঙ্গে কথা বলেন। আপনার পক্ষে কোনো আইনজীবী আছে কি না? এবং আপনার কোনো কিছু বলার আছে কি না? আদালতের এমন প্রশ্নের জবাবে মিন্নি বলেন, আমি নির্দোষ। আমি রিফাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নই। আমি আমার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
সঞ্জীব দাস আরও বলেন, আদালত রিফাত হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের সাথে হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে মোবাইলফোনে কথোপকথনের পাশাপাশি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে মিন্নি চুপ হয়ে যান এবং আদালতের এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয় রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও পাঁচ-ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ২ জুলাই ভোরে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
টিআর/এসি
আরও পড়ুন