ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

রুচি ফেরাতে আমড়া

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:১৬, ২ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৬:০৬, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

আমড়া একটি ওষুধী গাছ। এর রয়েছে অনেক গুণ। এ গাছ ব্যবহার করে নানাবিধ অসুখ থেকে আরোগ্য লাভ করার সুয়োগ রয়েছে। এ গাছের গুণাবলি তুলে ধরেছেন ড. তপন কুমার দে তার ‘বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় গাছ-গাছড়ার’ বইয়ে। একুশে টেলিভিশন অনলাইনের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-

১) খসখসে শরীর- চামড়ার কান্তির অভাবে যেন টিকটিকির চমড়ার মত, গা ফাটে, গায়ে হাত দিলে মনে হয় বালির দেওয়ালে হাত লাগছে, সাবান দিলেও তার শরীরে কোন চিক্কণতা ফিরে আসে না, এ ক্ষেত্রটি দেখলেই চিকিৎসকরা বলেন ভিটামিনের অভাব, এই রকম যে ক্ষেত্র সেখানে আমড়া গাছের ছাল থেঁতো করে সেই রস এক চা চামচ করে কিছুদিন খেতে হয়। এর দ্বারা ওই দোষটা নিরসন হয়ে ত্বকের শান্তি ফিরে আসে।

২) পিত্ত বমনে- এই পিত্ত বমিটা শরৎ কালে (ভাদ্র-আশ্বিনে) প্রায় হতে দেখা যায়, এ ক্ষেত্রে আমড়ার ছাল শুকিয়ে নিলে ভাল হয়। পাঁচ গ্রাম এক কাপ গরম জলে ভিজিয়ে রেখে ঘণ্টা দুই বাদে ছেকে নিয়ে অল্প অল্প করে ওই জলটা তিন থেকে চার বারে খেলে পিত্ত বমন বন্ধ হয়ে যায়।

৩) অগ্নিমান্দ্যে- সুপক্ক আমড়া-যেগুলি একটু সাদাটে এবং হলুদ রং এর সেগুলি অল্প মিষ্টরস হলেও সুস্বাদু হয়। আবার অল্প তিক্ত কষার স্বাদের টোকা আমড়াও দেখা যায়, এগুলি দেখতে সবুক, এটি নয় কিন্তু, ওই উপরোক্ত আমড়াকে রস করে যেমন আমসত্ত করে সেই পদ্ধতিতে শুকিয়ে রাখতে হয়, এ থেকে তিন থেকে চার গ্রাম নিয়ে এক কাপ জলে ভিজিয়ে সেই জলটা অল্প অল্প করে আহারের আগে এবং পরে খেতে হবে। তবে এটা কিন্তু খেয়াল রাখতে হয়, যেখানে অল্পরস ক্ষরণের অভাবেই অগ্নিমান্দ্যে হয়, সেখানেই এটা কার্যকরারী।

৪) দাহ রোগে- স্নান করলেও গায়ের জ্বালা কমে না, মনে হয় যেন সর্বদা গায়ে লঙ্কা ঘষে দিয়েছে, সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে এটা বিদগ্ধ পিত্ত চর্মগত হয়েছে, এক্ষেত্রে স্নানের এক ঘণ্টা পূর্বে আমড়ার ছাল থেঁতো করে তার সাত থেকে আট চা চামচ রস নিয়ে এক কাপ জলে মিশিয়ে সেই জল দিয়ে শরীরটা মুছে দিতে হয়। আর এক ঘণ্টা বাদে তেল মেখে স্নান কররে ফেলতে হবে। তেল হিসেবে তিলের তেলই ভাল। এই রকম এক দিন বাদ একদিন মাখলে দাহ আর থাকবে না।

৫) আজীর্ণ ও দাহে- আমতা সামতা মল নির্গত হয়, রং সাদাটে, এর সংগে পিত্তের সংযোগ যে নেই তা নয়। হাত পায়ে একটু জ্বালা থাকে আবার বিকেলের দিকে একটু চোখ জ্বালাও করে মুখে বিস্বাদ কিছু খেতে ভাল লাগে না, এক্ষেত্রে চার থেকে পাঁচ গ্রাম আমড়াসত্ত নইলে পাকা পাওয়া গেলে একটা আমড়ার শাঁস এক গ্লাস জলে মিশিয়ে একটু চিনি দিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা উপরিউক্ত অসুবিধেগুলি চলে যায়। এটা তিন থেকে চার দিন খেলেই ফল পাবেন।

৬)অরুচিতে- যমের অরুচি বলে একটা কথা আছে, এ কথার অর্থ কিন্তু যমেরও ভক্ষ্য নয়, মানুষের ক্ষেতেও কিন্তু ঠিক তারই উল্টো। যে কোন স্বাদের জিনিষই হোক না কেন সে কোনটাই খেতে চায় না অথচ ক্ষিধেয় পেট জ্বলে যায়। এক্ষেতে আমড়া গাছের মাঝের অংশের ছালের রস এক চা চামচ আধ কাপ জলে মিশিয়ে এক টিপ লবণ ও মিষ্টি দিয়ে সরবতের মতো করে খেলে অরুচি সেরে যাবে।

৭) আম রক্তে- অজীর্ণ চলছে অর্থাৎ ভাল হজম হচ্ছে না অথচ বেশ চর্ব্য চুষ্য করে গুরুভোজন করে চলেছেন তার পরিণতিতে এলো আমাশা তারপর একনিদ বাদেই দেখা গেল রক্ত পড়ছে এক্ষেতেও আমড়ার আঠা তিন থেকে চার গ্রাম আধা কাপ জলে ভিজিয়ে রেখে তার সঙ্গে আমড়া গাছের ছালের রস এক চা চামচ মিশিয়ে একটু চিনি দিয়ে খেলে দুই দিনের মধ্যেই ওই রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে এবং আমাশাও সেরে যাবে।

) শুক্র গাঢ়ীকরণে- যেখানে জলের মত শুক্র পাতলা হয়ে গিয়েছে অল্প চিত্তটাঞ্চলেই ক্ষরণ হয় সেখানে এই পাকা আঁটির জালের মধ্যে ফাঁকে ফাঁকে যে নরম শাঁসটা থাকে ( সেটি কিন্তু কষায়ধর্মী) সেটা চেপে অথবা অল্প থেতো করে নিংড়ে নিয়ে অল্প জল মিশিয়ে খেতে হবে।  যদি মনে হয় সব সময়ে তো আটি পাওয়া যাবে না তখন এটা সময়ে সংগ্রহ করে রাখতে হবে পরে ওটা জলে ভিজিয়ে থোতো করে ওই রসটা খেলেই হবে।

৯) রুচি ফিরাতে- আমড়ার কষায়াম্ল স্বাদের মুকুলের টকের জুড়ি নেই। দুধ ও চিনি দিয়ে পাকা আমড়া খুই উপাদেয়।

পরিচিতি- মাঝারী আকারের পত্রহরিৎ বৃক্ষ। পাতা যৌগিক। বাকল ধূসর সাদা বর্নের। উচ্চতায় গড়ে ১৫-২০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাতা এক পক্ষল যৌগিক, পত্রাক্ষ ২৫-৩০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পত্রক পাঁচ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বাকৃতির হয়। ফূল ছোট ও সাদা। ফল ড্রোপ, লম্বাটে, গোলাকার, পাঁচ থেকে আট সেন্টিমিটার ব্যাসের হয় এবং গর্ভাশয় পাঁচটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত।

 

এসএইচ/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি