ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

রেনেসাঁ’র দেশে

শামীম আরা খানম

প্রকাশিত : ১৬:৩৮, ১৫ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ২০:৫৫, ১৫ জুলাই ২০২০

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম পশ্চিম ইউরোপের দেশ ইতালি। ইতালির উত্তর সীমান্তে আল্পস পর্বতমালা সংলগ্ন ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও স্লোভেনিয়া অবস্থিত এবং দক্ষিণে সম্পূর্ণ ইতালীয় উপদ্বীপ, মেডিটারিয়ান সমুদ্র সংলগ্ন দুই মহাদ্বীপ সিসিলী ও সারদিনিয়া এবং আরো অনেক ছোট ছোট দ্বীপে পরিবেষ্টিত।

ইতালীয়রা খুব উন্নত জীবন-যাপনে অভ্যস্ত এবং প্রতি কাপিটাতে আছে উচ্চ নমিনাল জিডিপি। রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব দেশটিকে দিয়েছে আঞ্চলিক শক্তি। দেশটির রয়েছে সরকারি উচ্চ শিক্ষা কাঠামো ও উচ্চ বিশ্বায়িত জাতি।


২০১২ সালের মে মাসে ইতালির পেরুজ্জিয়া ট্রেসিমেনি লেক পাড়ে পরিবারের সাথে লেখক

আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্মেষ ও বিকাশের মধ্যে দিয়ে ইউরোপের সামাজিক জীবনে যে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা ঘটে তাকেই রেনেসাঁ বা পুনর্জাগরণ বলা হয়। এর সময়কাল ছিল ১৪০০ থেকে ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে। আধুনিক ইতালিতে নতুন অনেক কিছুরই জন্ম হয়েছিল। যার মধ্যে ব্যাংক এর জন্ম অন্যতম। ইতালিতে রেনেসাঁর সময় থেকে বৃহৎ পরিসরে ব্যাংকিং এর কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এর শুরু জানতে আরও পিছনে ফিরে যেতে হবে।

ইতালির ‘ব্যাংকো’ শব্দ থেকেই ব্যাংক শব্দের উৎপত্তি যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বেঞ্চ। অর্থাৎ তৎকালীন ইতালির মানুষ বেঞ্চের উপর বসে যাবতীয় আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করত। এভাবেই কালের বিবর্তনে ব্যাংক নামের একটি প্রতিষ্ঠান জন্ম লাভ করে যার প্রধান কাজই হলো যাবতীয় আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করা। প্রাচীন ইতালিতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যংকের জন্মের আগে যাবতীয় লেনদেন বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে সম্পাদন করা হতো।


ইতালির পেরুজ্জিয়া ট্রেসিমেনি লেক

ব্যাংক ব্যবসার মধ্যযুগ ছিলো ৪০০-১৪০০ সাল। এ সময় ইতালির কয়েকটি রাজ্যের ধনী বণিক বর্দি এবং পেরুজ্জি সম্প্রদায় এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন। এই সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল পেরুজিয়া শহরে। ফ্লোরেন্স, ভেনিস এবং জেনোয়ায় এরা ব্যাংকিং শুরু করেন।

ব্যাংকে চাকরি করার সুবাদে বিশ্বের বহু দেশে বিভিন্ন সেমিনারে বা ট্রেনিং এ যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছিল যখন ইতালিতে গিয়েছিলাম। রোম শহরে পাঁচদিনের সেমিনার (এ ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা লিখবো আরেকটা পর্বে) শেষে ব্যাংকিং এর উৎপত্তি স্থান দেখার আশায় ইতালির পেরুজ্জিয়া শহরে গিয়েছিলাম। পেরুজ্জিয়া শহরের সেই কাঠের বেঞ্চ আর নেই। বদলে এখন সব মোজাইক এর বেঞ্চ বানানো হয়েছে। অবশ্য কিছু পুরোনো কাঠের বেঞ্চ ও দেখেছিলাম।


জুলাই ২০১৫, ইতালির পেরুজ্জিয়া ট্রেসিমেনি লেক, পরিবারের সঙ্গে লেখক

পেরুজ্জিয়ায় খুব বড় একটা লেক দেখতে পেলাম। জানলাম যে এই লেক বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির লেক যার নাম ট্রাসিমেনি লেক। প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। যেটা শৌখিন মাছ শিকারীদের বরশির বহর দেখলেই বোঝা যায়। লেকের পাড়ে বসে ভেবেছি যে কতটা দূর দৃষ্টি সম্পন্ন হলে কতশত বছর আগে এই শহরের মানুষ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করেছিল। যেটা এখন সবার মোটামুটি একটা বেসিক প্রয়োজন। বর্তমানে এই শহরে নগদ লেনদেন বলতে গেলে হয়ই না, সবই কার্ডে হয়। বলতে গেলে পুরো দেশেই নগদ লেনদেন হয় না। শুধুমাত্র যেখানে মেলা (সাপ্তাহিক বাজার) হয় সেখানেই কিছু নগদের ব্যবসা হয় আর কিছুটা হয় বাংলাদেশি কিছু খাবারের দোকানে।

ইতালির সব শহরেই সাপ্তাহিক মেলা হয়। একেক দিন শহরের একেক জায়গায় এই বাজার বসে। এই জায়গাগুলো অনেকদিনের জন্য লীজ নিয়ে রেখেছে সব বিক্রেতারা। আমাদের দেশের পূজো বৈশাখ বা ঈদের মেলার মতো। এখানে সবাই নিজের বানানো বা অন্য শহর থেকে আনা জিনিসপত্র বিক্রি করে। ফল, সব্জি থেকে আরম্ভ করে জামাকাপড়, জুতা, কসমেটিকসসহ ঘর গৃহস্থলির সব জিনিসই পাওয়া যায়। যার যার ছোট কাভার্ডভ্যানের মধ্যেই প্রত্যকের সব জিনিসপত্র সাজানো থাকে। দামেও বেশ সস্তা তাই বেশিরভাগ সময় সবাই ওখান থেকেই কেনাকাটা করে। এতে দুটো লাভ এক. দামে সস্তা, দুই. অযথা বাইরে দূরে যাবার ঝামেলা নেই।


স্বামী আরফান আলীর সঙ্গে লেখক শামীম আরা খানম, ২২ জুলাই ২০১৫, ইতালির পেরুজ্জিয়া লেক পাড়

এই শহরে যেতে পথিমধ্যে একজায়গায় থেমেছিলাম দুপুরের খাবারের জন্য। ব্রিক ওভেনে (আদি চুলায়) বানানো হচ্ছিল মজাদার পিজ্জা! যার যার পছন্দসই টপিংস দিয়ে বানানো হচ্ছে। বিশাল ক্রিকেট ব্যাটের মতো কিন্তু একটু চওড়া ট্রে তে করে এই পিজ্জা উনুনে দেয়া হচ্ছিল। এখনো মুখে সেই ‘মানচেট্টি’র পিজ্জার স্বাদ লেগে আছে। চলবে...

লেখক: বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা

এমবি//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি