রেলে নাশকতার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নিন্দা
প্রকাশিত : ১৩:০৬, ২২ ডিসেম্বর ২০২৩
রেলে নাশকতার বর্বর ঘটনার প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, “গত মঙ্গলবার ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ভোরবেলায় আগুন নিয়ে যে ট্রেনটি তেজগাঁ স্টেশনে থামলো, তাতে ৩ বছরের শিশু ও একজন মা সহ ৪ জন মারা গেছে। অনেকে আহত হয়েছে। এর আগে হরতাল-অবরোধকারীরা রেলের ফিস-প্লেট খুলেছে, নাট-বল্টু ক্লিপ খুলেছে, লাইন কেটে ট্রেন ফেলে দিয়েছে। দোষ দিয়েছে চোরদের।
তবে চোররা এমনটি করে বলে মনে হয় না। কারণ তারা চুরি করলেও মনে হয় তাদেরও দয়ামায়া আছে, তারা কখনো এভাবে মানুষ হত্যার ষড়যন্ত্র করেনি বা উদ্যোগ নেয়নি। তাই মনে হয় চোরেরা এই বর্বরদের চাইতে ভালো লোক, কারণ তাদের মানবিকতা আছে। তাদের যে অপকর্মের কারণে অনেক মানুষ মারা যাবে, তারা তা করছে না।
করছে হরতাল-অবরোধকারীরা। ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু, এ পর্যন্ত আরো ৪ বার এমনটি অর্থাৎ ট্রেনে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এ পর্যন্ত তারা প্রায় ৪০০টি বাসে আগুন দিয়েছে। তারা শুধু সম্পদেরই হানি করছে তা নয়। তারা মানুষকে অবর্ণনীয় ব্যথা দিচ্ছে, মানুষ অতি নির্মম কষ্ট পেতে পেতে মারা যাচ্ছে। আগুন দেয়া অত্যন্ত নির্মম ও অমানবিক। চিকিৎসা-বিজ্ঞানীদের মতে মানুষ সবচেয়ে বেশি ব্যথাজনিত কষ্ট পায় আগুনে পুড়লে। তাঁরা বলেন ব্যথা ও কষ্টের এই তীব্রতাকে কোনো ভাষা দিয়ে বর্ণনা করা যায় না।
যারা আগুন দিচ্ছে তাদেরকে যদি বাধ্য করা যায় তাদের যে কোনো একটা আঙ্গুলকে সাধারণ আগুন, যেমন মোমবাতির আগুনে, মাত্র আধা মিনিট ধরে রাখতে তাহলে তারা অতি সামান্য হলেও বুঝবে আগুনে পোড়া মানুষের যাতনাটুকু কতটা তীব্র, কতটা কষ্টের। তারা হয়তো বুঝবে আঙ্গুলটা সামান্য একটু পুড়লে যদি এত ব্যথা, তাহলে সারা শরীর পুড়ে অঙ্গার হতে থাকা মানুষের অকল্পনীয় ব্যথা ও কষ্টটা কতটুকু। সারা শরীর পুড়তে থাকার সময় অসহায় এই মানুষটি কতটা চিৎকার করে।
জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা এটা কোন রাজনীতি? বিদেশ থেকে করা একজনের ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। সেখানে লাশ চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে শুধু রেলের আগুন থেকেই ৫ জন মানুষ লাশ হয়েছে। এই মানুষগুলোর প্রত্যেকেরই একটা জীবন ছিল, সংসার ছিল, সেখানে বাবা-মা, আত্মীয়-বন্ধু, ভাইবোন, স্ত্রী, পুত্র-কন্যারা ছিল, জীবিকা অর্জনের কঠিন সংগ্রাম ছিল, নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে সাংসারিক বাজেট ঘাটতির দুশ্চিন্তা ছিল, সংসারের কারো কারো আচরণে হয়তো মনে মনে দুঃখবোধও ছিল। কিন্তু সবার উপরে ছিল মমতা। যার কারণে শুধু একটি পরিবার নয়, বরং সমাজ টিকে থাকে, সভ্যতা বিকশিত হয়।
এর আগে গ্যাস কাটার দিয়ে রেল লাইন কেটে ট্রেন ফেলে দেওয়ার ঘটনার তদন্ত হয়েছে। কিছু দোষী ধরাও পড়েছে। তাদের কেউ কেউ স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। আদালত বাকিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। পুলিশ এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায়ই ককটেলসহ বিভিন্ন বিস্ফোরক ও আগুন লাগানোর সরঞ্জাম উদ্ধার করছে।
২০১৪-১৫ সালে আগুন সন্ত্রাসের মামলাগুলোর যথাসময়ে বিচার হওয়া প্রয়োজন ছিল। যারা গণবিরোধী ও মানবতাবিরোধী এসব বর্বরতা তখন ঘটিয়েছিল, তারা যদি শক্ত বিচার পেতো, তাদের যদি কঠিন শাস্তি দেওয়া যেতো, তাহলে আজ নিশ্চয়ই হরতাল-অবরোধকারীদের সন্ত্রাসীরা এতোটা বর্বর ও অমানবিক কাজ করার সাহস পেতো না। সেই সাথে যারা ভিআইপি পরিকল্পনাকারী, তারা যেই হোক, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা দরকার। যদি গত ৬-৭ বছরে দ্রুত এগুলো করা যেত তাহলে এখনকার আগুনগুলো হয়তো ঠেকানো যেত।
আমাদের দেশের রাজনীতিতে আগে এই আগুন-সন্ত্রাস ছিল না। পাকিস্তান আমলের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আমরা কোথাও কোথাও ছিটে-ফোঁটা তা দেখেছি। কিন্তু একাত্তরে তারা পাকিস্তানিদের নির্দেশে এই আগুন-সন্ত্রাস ব্যাপকভাবে শুরু করে। ১৯৭১-এ তারা যা করতো, আজ আবার তাই করছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ বলছে এটি নাশকতা। নিশ্চয় নাশকতাই হবে। কারণ দুর্ঘটনার আগুন এত দ্রুত ছড়ায় না। নিমেষের মধ্যে বগিগুলোতে আগুন ধরলো দাউদাউ করে। এটা গান পাউডার বা পেট্রোল ছাড়া সম্ভব নয়। একাত্তরের আগুন দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, গান পাউডারের আগুন হচ্ছে দাউদাউ করে ফুঁসে ওঠা আগুন। টিভিতে ট্রেনের আগুনটি দেখে মনে হচ্ছে এটা গান পাউডার বা মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখা আগুনে সলতে বা তার মতো কোনো উচ্চমাত্রার দাহ্য বস্তু কর্তৃক লাগানো আগুনই। এই যুদ্ধাস্ত্র কারা বা কোন দেশ সরবরাহ করছে? এর বিশদ তদন্ত দাবি করছি।
আরও পড়ুন