ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে প্রবীণদের যা করণীয়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৪৮, ১ মে ২০১৮ | আপডেট: ০৯:৩৯, ২ মে ২০১৮

স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি আর চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির ফলে সারা বিশ্বজুড়েই মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্যানুসারে ২০২৫ সাল নাগাদ ৬৫ বছর বয়সী প্রবীনের সংখ্যা সংখ্যা দাঁড়াবে ১২০ কোটি। এটি অত্যন্ত আনন্দের কথা। দীর্ঘ সময় পৃথিবীতে বেঁচে থাকা নিঃসন্দেহে আনন্দের বিষয়। পৃথিবীতে রূপ-রস-গন্ধ আরও বেশি বেশি উপভোগের সুযোগ বেড়ে যায়। স্রষ্টা যে দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়ে ছিলেন সেই দায়িত্ব সম্পাদনের সুযোগও বেড়ে যায়। আর এগুলো তখনই সম্ভব হবে যখন একজন প্রবীণ অর্জন করতে পারবেন রোগমুক্ত সুস্থ জীবন। প্রবীণদের মধ্যে যে রোগগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, জয়েন্ট পেইন কিডনি রোগ, ক্যান্সার, মানসিক রোগ অন্যতম। একবার এ রোগগুলো হলে বয়সের কারণে তা নিরাময় হতে দীর্ঘ সময় লাগে। তাই এ রোগগুলো থেকে মুক্ত থাকার জন্যে প্রয়োজন স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, জীবন ধারার পরিবর্তন আর নিয়মিত চেক-আপ।

মানসিক অসুস্থতা

বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে বিশ্বের ২৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী মানসিক অসুস্থতার শিকার। এর মধ্যে মাএ ৪০ শতাংশ চিকিৎসা সেবার আওতায় আসেন। প্রবীণদের মধ্যে নানা রকম মানসিক অসুস্থতা দেখ দেয়। এর মধ্যে বিষন্নতার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। বিষন্নতা বা ডিপ্রেশনের উপসর্গ সমূহের মধ্যে দুঃখবোধ, অব্যক্ত কান্নার ইচ্ছা, অস্থিরতা, বিরক্তিভাব, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, মনেযোগের অভাব, মৃত্যুর চিন্তা বা কখনও কখনও আত্ম-হত্যার চিন্তা, ক্ষুধা ও ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তন অন্যতম। এছাড়া হৃদযন্ত্র, কিডনি বা ফুসফুস যদি ঠিকমত কাজ না করে সেক্ষেত্রেও মানসিক অশান্তি বেড়ে অসুস্থতা তৈরি হয়।

বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রবীণদের মধ্যে যারা নিয়মিত হাঁটাহাটি ও শারীরিক পরিশ্রম করেন তাদের মধ্যে মানসিক অসুস্থতার পরিমান খুব কম। কেননা নিয়মিত ব্যায়াম ব্রেনের রক্ত সরবরাহ বাড়ায় এবং ব্রেন সেলগুলোকে সতেজ রাখে।

আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্ট পেইন

প্রায় ২০০ ধরনের আর্থ্রাইটিস ও বাত-ব্যথা রয়েছে। এ রোগগুলোর উপসর্গের মধ্যে জয়েন্ট বা গিরা ব্যথা, গিরা ফোলা এবং ধীরে ধীরে জয়েন্ট স্টিফ হয়ে চলাফেরা করতে কষ্ট হওয়া অন্যতম। এছাড়া অস্টিওপোরোসিস নামে যে রোগটি হয় তাতে দেহের হাড় অত্যন্ত ভঙ্গুর হয়ে যায়। নিরব ঘাতকের মতো এটি বাড়তে থাকে এবং সময় মতো চিকিৎসা না করলে হাড় ভাঙ্গার মত পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটা, বৈজ্ঞানিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা আর সুস্থ জীবনধারার মাধ্যমে সহজেই একে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়া প্রতিদিন যথাযথ পরিমান ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণ করুন। প্রতিদিন ১ গ্লাস গরুর দুধ/সয়াদুধ খান। ধূমপান ও এলকোহল বর্জন করুন। বোন ডেনসিটি টেষ্ট করে আপনার হাড়ের অবস্থা জেনে নিন।

উচ্চ রক্তচাপ

শরীরের ধমনীর মধ্য দিয়ে প্রবাহমান রক্ত ধমনীতে যে চাপ দেয় তাই রক্তচাপ। যদি এটি কোনো কারণে বেড়ে যায় তখন তাকে উচ্ছ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলে। এটিও একটি নিরব ঘাতক হতে পরে যদি তা নিযন্ত্রণে না থাকে। উচ্চ রক্তচাপ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত থাকলে তা কিডনি, চোখ ও হৃৎপিন্ডের ক্ষতির কারণ হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রযোজন নিয়মিত হাঁটা ও ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা পর্যাপ্ত শাক-সবজি, ফল-মূল খাওয়া, গরু ও খাসির মাংস, ডিমের কসুম, তৈলাক্ত খাবারসহ অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন, ধূমপান বর্জন, কম লবন গ্রহণ, মানসিক চাপ মুক্ত থাকা ইত্যাদি।

হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাক

অবৈজ্ঞানিক খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, ধূমপান, অতিরিক্ত কোলেষ্টেরলযুক্ত খাবার গ্রহণ, অতিরিক্ত ওজন, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বা মানসিক চাপকে হৃদরোগের মূল কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা চিহিৃত করেছেন। প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় শক্তিশালী কোলেষ্টেরল কমানোর ওষুধ, এনজিওপ্লাস্টি বা বাইপাস সার্জারি হচ্ছে এর একমাত্র সমাধান। অথচ একটু সচেতন হলেই এনজিওপ্লাস্টি বা বাইপাশ সার্জারির মতো ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। দীর্ঘ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মেডিটেশন, যোগ ব্যায়াম, হাঁটা, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও কাউসেলিং প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণের মধ্যদিয়ে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করা সম্ভব।    

স্ট্রোক

বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে প্রবীণদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক। স্ট্রোক প্রধানত: দু‘ ধরনের-

১. ব্রেনের রক্তনালী হঠাৎ ব্লক হয়ে স্ট্রোক হতে পারে। ৮৫ ভাগ ক্ষেত্রে এটি হয়ে থাকে।

২. ব্রেনের রক্তনালী ছিঁড়ে যেয়ে স্ট্রোক হতে পারে। ১৫ ভাগ ক্ষেত্রে এটি হয়ে থাকে।

স্ট্রোক হলে শরীরের একপাশ প্যারালাইসিস হয়ে যায়। স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে পারলে এবং ৩ ঘণ্টার মধ্যে অপারেশন করে রক্তনালীর ব্লক সরাতে পারলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

ক্যান্সার

বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৭৬ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মারা যায়। প্রবীণদের মধ্যে পুরুষরা প্রোস্টেট ও কোলন ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হন আর নারীরা আক্রন্ত হন স্তন ক্যান্সারে। এছাড়া ত্বক, ফুসফুস, অগ্ন্যাশয়, মুত্রথলী ও পাকস্থলীর ক্যান্সারও হয়ে থাকে।

ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য ধূমপান পরিহার করুন, সুষম ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন, প্রচুর টাটকা ফল-মূল ও শাক-সবজি খান। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করুন। সঠিক ওজন বজায় রাখুন।

ডায়াবেটিস

প্রবীণদের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি এক ধরনের মেটাবলিক ডিসঅর্ডার। ইনসুলিন হরমোনের অভাবে অথবা ইনসুলিনের কার্যকারীতার অভাবে এটি হয়ে থাকে। ডায়াবেটিসকে বলা হয়ে থাকে নীরব ঘাতক। নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এটি ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ধ্বংস করে ফেলে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন, বৈজ্ঞানিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন, প্রচুর টাটকা ফল-মূল ও শাক-সবজি খান, সঠিক ওজন বজায় রাখুন। টেনশনমুক্ত থাকুন।

কিডনি রোগ

কিডনি রোগ প্রবীনদের অন্যতম প্রধান রোগ। দিন দিন এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে। কিডনি রোগ প্রতিরোধ তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিডনি রোগ প্রতিরোধে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তের কোলেস্টেরল ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ধূমপান বর্জন করুন। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

চক্ষু রোগ

ছানি পড়া, কাছের বা দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হওয়া প্রবীণদের একটি সাধারণ সমস্যা। এক্ষেত্রে চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকলে তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

পাশ্চাত্যের চেয়ে প্রাচ্য একটি বিষয়ে এগিয়ে রয়েছে তা হলো পরিবার প্রথা। এখনও আমাদের পরিবার রয়েছে। এখনও বাবা-মা নিয়ে আমরা একত্রে থাকতে ভালোবাসি। আর বৃদ্ধ বাবা-মা তো আমাদের জন্য আশির্বাদ স্বরূপ। হাদিসে এসেছে মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেস্ত। পবিত্র কোরআনেও বৃদ্ধ বাবা-মার প্রতি সদয় আচরণ করার কথা বলা হয়েছে। শৈশবে যে মায়া মমতা দিয়ে তারা আমাদের লালন পালন করেছেন বৃদ্ধ বয়সে আমরাও যেন তাদের প্রতি তেমনি সদয় হতে পারি। তবেই পরিবারে সত্যিকার প্রশান্তি বিরাজ করবে। পরিবার হয়ে উঠবে সুখের আকর।

একে/ এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি