ফল পরিচিতি
রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ‘আমড়া’
প্রকাশিত : ১০:৪০, ৩০ জুন ২০১৯ | আপডেট: ১০:৪৯, ৩০ জুন ২০১৯
রাস্তার ফেরিওয়ালা থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জে সর্বত্র পাওয়া যায় আমড়া। এর সঙ্গে সবারই পরিচয় রয়েছে। সারাবছরই কম বেশি দেখা যায় এই ফলটি। আকারে ছোট এই ফলটির প্রকৃত মৌসুম হচ্ছে জুলাই-আগস্ট। এ সময়ে ফলটি পরিপুষ্ট থাকে এবং আকারে বড় হয়। দেখতে ছোট হলেও ফলটির কিন্তু রয়েছে অনেক গুণ। আমড়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
এ ছাড়া আমড়া ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে বেশ কার্যকর। মৌসুমী ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে খেতে পারেন এই ফলটি। মোটকথা কোন ক্ষতির কিছু নেই, মানব দেহের জন্য যথেষ্ট উপকারী আমড়া।
বিবরণ :
আমড়ার ইংরেজি নাম Hog Plum. একপ্রকার ফল যা মাঝারি আকারের পর্ণমোচী বৃক্ষে ফলে। বৈজ্ঞানিক নাম Spondias pinnaata Kurz. বা Spondias mombin, পরিবার: Anacardiaceae। বাংলাদেশ ছাড়াও আফ্রিকা, ভারত, শ্রীলংকা এবং ইন্দোনেশিয়ায় এই গাছটি জন্মে।
আমরা গাছগুলো ২০-৩০ ফুট উঁচু হয়, প্রতিটি যৌগিক পাতায় ৮-৯ জোড়া পত্রক থাকে, পত্রদন্ড ৮-১২ ইঞ্চি লম্বা এবং পত্রকগুলো ২-৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। কাঁচা ফল টক বা টক মিষ্টি হয়। তবে পাকলে টকভাব কমে আসে এবং মিষ্টি হয়ে যায়। ফলের বীজ কাঁটাযুক্ত। ৫-৭ বছরেই গাছ ফল দেয়। আমড়া কাঁচা ও পাকা অবস্থায় রান্না করে বা আচার বানিয়েও খাওয়া যায়।
উপাদান :
আমড়া কষ ও অম্ল স্বাদযুক্ত ফল। এতে প্রায় ৯০%-ই পানি, ৪-৫% কার্বোহাইড্রেট ও সামান্য প্রোটিন থাকে। ভিটামিন-সি, ক্যারোটিন, সামান্য ভিটামিন-বি, ক্যালসিয়াম, আয়রনও রয়েছে। আমড়ায় যথেষ্ট পরিমাণ পেকটিনজাতীয় ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টজাতীয় উপাদান থাকে।
প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ার পুষ্টিগুণ :
শর্করা ১৫ গ্রাম, আমিষ ১.১ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫৫ মিলিগ্রাম, আয়রন ৩.৯ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৮০০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি ১০.২৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৯২ মিলিগ্রাম, অন্যান্য খনিজ পদার্থ ০.৬ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি ৬৬ কিলোক্যালরি।
আমড়ার উপকারিতা :
চিকিৎসকরা বলছেন, সিজনাল ফলমূল সেই সময়ের রোগ প্রতিরোধে সহায়োগ। বর্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় রোগের যেমন উপকার করে তেমনি আমড়া আপনার শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষাও দেয়।
জেনে নিন আমড়া কোন কোন রোগে উপকারে আসে :
১. ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে : ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ের রোগ, মাংস পেশীর খিঁচুনিসহ অনেক রোগ হতে পারে। তাই প্রতিদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে আমড়া খাওয়া যেতে পারে।
২. ত্বক ভাল রাখে : ত্বকের ব্রণ কমাতে এবং ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে আমড়া দারুণ উপকারী। আমড়ায় প্রচুর ভিটামিন-সি রয়েছে, যা ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
৩. রক্তস্বল্পতা রোধ করে : আমড়ায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, যা রক্তস্বল্পতা রোধে কার্যকরী। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও ঠিক রাখে।
৪. বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে : আমড়ায় বিভিন্ন দ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে, যা পাকস্থলীর কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে। তাই বদহজম, পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগ থেকে বাঁচতে নিয়মিত আমড়া খেতে পারেন।
৫. সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুঞ্জার বিরুদ্ধে কাজ করে : আমড়া বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। তাই আমড়ার সিজনে প্রতিদিন এই ফল খেলে আপনি নানা সংক্রমণ থেকে সহজেই রক্ষা পেতে পারেন।
৬. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : আমড়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ফলে সহজেই সুস্থ থাকা সম্ভব হয়।
৭. মুখের রুচি বাড়ায় : অসুস্থ ব্যক্তিদের মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে আমড়ার দারুণ কার্যকর। আমড়া খেলে মুখের অরুচিভাব দূর হয় ও ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। তাই রুচি বাড়াতে নিয়মিত ফলটি খাওয়া যেতে পারে।
৮. স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় : আমড়া রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। তাই আমড়া খেলে স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা দাঁত ও মাড়ির বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে।
তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া এবং পুষ্টিবিদদের গবেষণা।
এএইচ/