ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪

রোজার শুরুতেই চড়া সবজিসহ নিত্যপণ্যের বাজার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:২০, ২৫ এপ্রিল ২০২০

দেশব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাবে যাত্রী পরিবহন চলাচল বন্ধ। তবে চালু রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য তথা সবজিবাহী গাড়ি চলাচল। ফলে, পর্যাপ্ত পণ্য মজুদ রয়েছে আড়ৎগুলোতে। সংকট নেই চাল উৎপাদনেও। তবুও রাজধানীজুড়ে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে চড়া মূল্য গুনতে হচ্ছে ভোক্তা সাধারণকে। করোনা সংকটকে ঘিরে গত একমাসে কয়েক দফা বেড়েছে চাল, ডাল, তেল, আদা, রসুন ও সবজির দাম। এবার রোজার শুরুতে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। 

একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় খাদ্য মজুদ করছে। এছাড়া আছে কিছু ক্রেতাদের অধিক পণ্য কেনার মানসিকতা। এই দুইয়ে সয়লাব বাজার ব্যবস্থা। সরবরাহ নিশ্চিত করতে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) মাঠে থাকলেও চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। ফলে, এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। যার ভুক্তভোগী নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তরা। 

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার সূত্রে জানা যায়,  খুচরা বাজারগুলোতে মোকামের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি দাম নেয়া হচ্ছে সবজিতে। শাক-সবজির কমতি না হলেও অধিক দাম রাখায় হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, মোকামে অধিক দাম রাখায় বেশি মূল্যে বিক্রি করতে হয় তাদের। অথচ, মোকামের চিত্র বলছে উল্টো কথা। বাজারের তুলনায় অর্ধেক দাম নেয়া হচ্ছে সেখানে। 

ব্যবসায়ীদের দাবি, ‘কাঁচামাল দ্রুত পচনশীল। বিক্রি না হলে পচে যায়, যে কারণে মোকামের দামের সঙ্গে বড় পার্থক্য থাকে। তবে কোনো কোনো পণ্যের দাম দ্বিগুণ আবার কিছু পণ্যের দাম চারগুণও বাড়ে।’

আবার বাজার ভেদে দামের পার্থক্যও আছে। অধিকাংশ বাজারে লম্বা বেগুন নেয়া হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি, শসার দামও একই। অথচ, ঢাকার বাহিরেই এ সবজিগুলো ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ৩৫ থেকে ৪০ টাকার অধিক দাম রাখা হচ্ছে প্রতিটি সবজিতে। 

এছাড়া করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা, উস্তা ৩০-৪০ টাকা, বরবটি ৪০-৫০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, পটল ৪০-৫০, ঝিঙা ৪০-৫০ এবং চিচিঙ্গা ২০-৩০ টাকা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে। গাজর ৩৫-৪০ টাকা, টমেটো ২০-৩০ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৬০, বড় কচু ৪৮-৫০, মুলা ৩০, প্রতি কেজি ধনিয়াপাতা ১৫০ এবং পুদিনা পাতা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। প্রতি হালি লেবু (ছোট) ৩০-৪০, বড় সাইজের লেবু ৬০-৭০, প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়, প্রতি পিস বাঁধাকপি ৩০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সবজির পাশাপাশি আবারও বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। রোজাকে সামনে রেখা চাহিদা বৃদ্ধিতে সুযোগ পেয়েছে ব্যবসায়ীরা। এতে করেই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ভোক্তাদের। 

রাজধানীর অধিকাংশ বাজারে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে মসুর ডালের দাম। প্রতিকেজি মোটা মসুর ডাল এতদিন ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। গত তিন দিনে কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে এখন ১০০ টাকা হয়েছে। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে মাঝারি দানা মসুর ডাল ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় হয়েছে। সরু দানা মসুর ডাল ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রোজাার কেনাকাটা বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দামও। বর্তমানে চিনি বিক্রি হচ্ছে  ৭০-৭৫ টাকা কেজিতে, যা গত সপ্তাহেও ছিল ৬৫ টাকা। আর পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬৫, দেশি রসুন ১শ থেকে ১৩০ ও আমদানি রসুন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আদা হয়েছে এক লাফে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।  

এছাড়া চিড়া, মুড়ি ও গুড়ের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। এখন প্রতি কেজি চিড়া ৭০, মুড়ি ৮০ এবং গুড়ের কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে খেজুর ২৫০ থেকে হাজার টাকা হয়েছে। ফলের মধ্যে মাল্টার দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকা হয়েছে। চাহিদা বেশি থাকায় লেবুর হালি গড়ে ৫০ টাকা হয়েছে। ব্রয়লার মুরগি দাম বেড়ে ১৩০ ও লেয়ার মুরগি ১৯০, সোনালি ২২০ টাকা হয়েছে। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৫০-৪০০ টাকা। গরুর মাংস ৬০০ ও খাসির মাংস ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিনই বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন সংস্থার একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে। জরিমানাও করা হচ্ছে। তারপরও অস্থিরতা থামছে না রাজধানীর বাজারগুলোতে। বিশেষ করে ডাল, তেল, আদা, রসুন ও সবজির দাম। গত কয়েকদিনে অতিরিক্ত দামে আদা বিক্রির অভিযোগে বেশ কয়েকটি দোকানকে জরিমানা ও সতর্ক করা হলেও তেমনটা কাজে আসেনি। 

অন্যদিকে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে দাম নিয়ন্ত্রণে এবার আগেই কিছুটা প্রস্তুতি নিয়েছিল সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি। অন্যান্য বছরের তুলনায় যার পরিমাণ ছিল কয়েকগুণ। কিন্তু সরবরাহ কম হওয়ায় তাতে তেমন সুফল আসছে না। এতে করে বাজারেই ভরসা করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। 

বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের দাবি- অন্যান্য বছরের তুলনায় সরকারি-বেসরকারি গোডাউনগুলোতে এবার ৩০ শতাংশের বেশি খাদ্যপণ্য মজুদ রয়েছে। তারপরও রোজা শুরুর আগেই যেমনটা লাগাম ছাড়া ছিল নিত্যপণ্যের বাজার, রোজার শুরুতে তা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

এআই/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি