ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিআইডিএসের গবেষণা

রোহিঙ্গাদের কারণে ঝুঁকিতে বাংলাদেশের সামাজিক অর্জন

প্রকাশিত : ১৭:০২, ১০ মে ২০১৯ | আপডেট: ১৭:৫০, ১০ মে ২০১৯

মিয়ারমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রায় সকলকেই খাদ্য সহায়তার আওতায় আনা সম্ভব হলেও, বড় সমস্যা পুষ্টিহীনতা। হাতে নগদ অর্থ না থাকায় তাদের অনেকের পর্যাপ্ত খাদ্য কেনার সামর্থ্য নেই। ফলে উন্নয়ন সহযোগীদের দেওয়া খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের।

এদিকে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সামাজিক খাতে বাংলাদেশের যে অর্জন সেটা কক্সবাজার অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ, পুষ্টিহীনতা, জন্ম নিয়ন্ত্রণসহ নানা বিষয়ে রোহিঙ্গারা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) ও ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই) এর এক গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা কোনোমতে টিকে থাকার মতো। স্থানীয়ভাবে কাজ করায়, কিছুটা ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে। তবে, তাদের মজুরি স্থানীয়দের থেকে কম হওয়ায় ক্ষতিরমুখে স্থানীয় শ্রমবাজার। আর যদি ব্যাপকভাবে কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সেমিনারে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিআইডিএস এর মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রতিনিধি রিচার্ড রাগান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইএফপিআরআই গবেষক ড. পাওয়েল দোরোস, বিআইডিএস এর গবেষক ড. বিনায়ক সেন ও ড. মোহাম্মদ ইউনুস।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৭ লাখ ৭১ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। তারা টিকে আছে কিন্তু তাদের জীবনমান উন্নত নয়। ২০১৭ সালের আগস্টের পরে আসা রোহিঙ্গাদের প্রতিমাসে মাথাপিছু ভোগব্যয় মাত্র ১৫৮৯ টাকা। যারা এই সময়ের আগে এসেছে তাদের মাথপিছু ভোগব্যয়ের পরিমাণ ১৮১৮ টাকা।

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মাথাপিছু ভোগ ব্যয় রোহিঙ্গাদের তুলনায় ৪৬ শতাংশ বেশি। রোহিঙ্গাদের মাঝে পুষ্টিহীনতার তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের ৩২ থেকে ৩৬ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদী পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। এবং ১২ থেকে ১৩ শতাংশ শিশু ভয়াবহ অপুষ্টির শিকার।

ড. গোলাম নবী মজুমদার তার উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন বাংলাদেশ থেকে ৪ গুণ বড় হলেও মিয়ানমারের জনসংখ্যা বাংলাদেশের মাত্র এক-তৃতীয়াংশের সমান। অথচ বলপ্রয়োগ করে তারা তাদের মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদেরকে আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এটা সবাই জানেন। যেহেতু এটি একটি অতি মানবিক বিষয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতা ও মানবতাবোধে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি।

অর্থনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশের সামাজিক খাতেও রোহিঙ্গারা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে উল্লেখ্য করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, মাথাপিছু আয়ের তুলনায় বাংলাদেশে সামজিক অর্জনগুলো অনেক ভালো। নারীদের শিক্ষার হার, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার, শিশু মৃত্যুর হার কম। কিন্তু রোহিঙ্গাদের মধ্যে নারী শিক্ষা, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার শূন্যের কোঠায়, শিশুমৃত্যুর হারও বেশি। রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশের সামাজিক অর্জনগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

আই//এসি

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি