ঢাকা, শুক্রবার   ১৪ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

রোহিঙ্গাদের ভার দীর্ঘমেয়াদে বহন করা কঠিন হবে : তাসনীম সিদ্দিকী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৫৬, ৮ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৩:০৯, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮

ড. তাসনীম সিদ্দিকী

ড. তাসনীম সিদ্দিকী

Ekushey Television Ltd.

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী যে নিপীড়ন-হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে সেটি পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে নৌকায়-ভেলায় করে নাফ নদী হয়ে দলবেঁধে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যখন উদ্বাস্তু-শরনার্থী প্রবাহ ঠেকাতে তৎপর তখন বাংলাদেশ বিপদগ্রস্ত এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শুধু আশ্রয়ই নয়; তাদের খাদ্য-বস্ত্র, চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় সব ধরণের সহায়তা দিয়ে আসছে।

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ শুরু থেকেই বলে আসছে। এ সংকট সমাধানে দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নানা আলাপ-আলোচনা ও উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে দেশি-আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। যদিও ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে সই হয়েছে। বিষয়টি কিছুটা হলেও বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করছে বলে মনে করছেন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসনীম সিদ্দিকী। সম্প্রতি তিনি ইটিভি অনলাইনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বর্তমান রোহিঙ্গা সংকট, এ থেকে উত্তরণের উপায় ও শরণার্থী ব্যবস্থাপনার নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইটিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।  

পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারটি ইটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

ইটিভি অনলাইন : রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার সঙ্গে নিঃসন্দেহ মানবিক বিষয়টি জড়িত। কিন্তু একই সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

ড. তাসনীম সিদ্দিকী : বর্তমান সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ। প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো- মিয়ানমান থেকে যেসব রোহিঙ্গা আসছে, এদের মানবিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাদেরকে নিরাপদে প্রত্যাবাসন না করা পর্যন্ত সব নাগারিক সুবিধার ব্যবস্থা করা। শরণার্থী শিবিরের শিশু, তরুণ ও বৃদ্ধদের দিকেও বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে। রোহিঙ্গারা যেন কোনো অন্যায়ে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

ইটিভি অনলাইন : রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে অন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা হচ্ছে। সবাই যার যার অবস্থান থেকে পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। কেন?

ড. তাসনীম সিদ্দিকী : রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো বিষয়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সরকারের সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এ বিষয়টি কিছুটা হলেও বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করছে।

ইটিভি অনলাইন : মিয়ানমার নানাভাবে আমাদের ক্ষতি করছে। যেমন মিয়ানমার থেকে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা আমাদের সীমান্তে ঢুকে পড়ছে। এর ফলে আমাদের তরুণরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?

ড. তাসনীম সিদ্দিকী : এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে বড় ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। এখনই এ বিষয়ে শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের দেশে যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

ইটিভি অনলাইন : রোহিঙ্গাদের সবাইকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা কতটুকু?

ড. তাসনীম সিদ্দিকী : সব রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো সম্ভব। তবে কতদিনে তা সম্পন্ন করা যাবে- তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এ জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমারে যেতে চাইবে না। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা একজন নারী বলছে, আমাকে পেটেভাতে আজীবনের জন্য রেখে দেন। তার পরেও আমি মিয়ানমারে যাবো না। এমন অবস্থায় সব রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো একটু কঠিনই হবে।

ইটিভি অনলাইন : চীন, রাশিয়া ছাড়া বিশ্বের সব দেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু তাদের ফিরিয়ে নিতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না মিয়ানমারের সরকার। মিয়ানমারের শক্তির জায়গাটা কোথায়?

ড. তাসনীম সিদ্দিকী : চীন, রাশিয়া মিয়ানমারে অনেক বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়া রাশিয়া অস্ত্রের ব্যবসা করে। তাই তারা চায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যুদ্ধের পরিবেশ তৈরি হোক। তবে পুরো বিষয়টা খুব সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবেলা করছে বাংলাদেশ।

ইটিভি অনলাইন : আপনি তো দীর্ঘদিন ধরে শরণার্থী, উদ্বাস্তু এবং অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছেন। আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে এ সংকটের টেকসই সমাধান কোন পথে হতে পারে?

ড. তাসনীম সিদ্দিকী : এই সংকটের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অল্প সময়ে বিপুল সংখ্যক লোক শরণার্থী হয়েছে এবং মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এটা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। শরণার্থী সংকট বিশ্বের অনেক দেশেই আছে। কিন্তু এত অল্প সময়ে এত বিপুল জনগোষ্ঠীর শরণার্থীতে পরিণত হওয়ার উদাহরণ পাওয়া কঠিন। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে। এখানকার মোট জনসংখ্যা পাঁচ লাখের মতো। অথচ এখানে এখন আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের সংখ্যা ছয় লাখের বেশি। এর সঙ্গে আগের তিন লাখ শরণার্থী যোগ করলে মোট শরণার্থী হবে নয় লাখের মতো। বলা যায় যে, স্থানীয় জনসংখ্যার প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। এটা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। আর থাইল্যান্ড ও বুরুন্ডির শরণার্থী শিবিরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, শিবিরগুলো সাধারণত স্থানীয় জনবসতি থেকে দূরে হয়ে থাকে। আমাদের পরিস্থিতি তা থেকে ভিন্ন।

ইটিভি অনলাইন : নয় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বোঝা দীর্ঘদিন বহন করা বাংলাদেশের জন্য কতটা কঠিন হবে?

ড. তাসনীম সিদ্দিকী : বাংলাদেশের জন্য বহুমুখী সমস্যা সৃষ্টি হবে। এসব লোককে কীভাবে রাখা হবে, তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা কীভাবে হবে, তারা যে অঞ্চলে আছে সেখানকার মানুষদের সঙ্গে মিশতে পারবে কী না- এ বিষয়গুলো নিয়ে কিছুটা জটিলতা তৈরি হবে। মোটকথা এত বিপুল সংখ্যক মানুষের দায়ভার দীর্ঘদিন বহন করা বাংলাদেশের জন্য সম্ভব নয়।

/এআর /


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি