লক্ষ্মীপুরে ইউপি সদস্য মিরন হত্যায় ১১ আসামির যাবজ্জীবন
প্রকাশিত : ১৫:১৬, ২২ আগস্ট ২০২৩
লক্ষ্মীপুরের দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য খোরশেদ আলম মিরন হত্যা মামলায় ১১ আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ মামলায় আরও ১১ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন মো. জামাল হোসেন (৩৯), মো. জসিম উদ্দিন (৩৪), মো. শাহজাহান (২৯), মো. ফয়সাল খান জয় (২৯), মো. মিলন ওরফে সিএনজি মিলন (৩৩), আল আমিন (৩৯), বরকত (২৬), নিশান (২৬), লোকমান (৩৫), রুবেল (২৯) ও সুমন (৩৬)।
রায়ের সময় দণ্ডপ্রাপ্ত মো. মিলন ওরফে সিএনজি মিলন এবং রুবেল আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা পলাতক।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন মো. রিপন (৩৯), মো. জুয়েল হোসেন (৩২), মামুন (৩২), কাউছার হোসেন রাজন (২৬), শাহ আলম পাটওয়ারী ওরফে সোহাগ (৪২), মাহফুজ আলম সুমন ওরফে বেরাইজ্যা সুমন (৪২), সামছুদ্দিন ওরফে সামু (৫৬), আলাউদ্দিন সুমন ওরফে চুল্লা সুমন (৩৭), মো. আলমগীর (৩৯), কামাল খান ওরফে চুল কামাল (৩২) ও কাউছার (৪৮)।
তারা সবাই লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর এবং দত্তপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম মিরন (৪২)কে গুলি করে হত্যা করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। এ সময় তিনি দত্তপাড়া-বটতলী আঞ্চলিক সড়কের পূর্ব আলাদাদপুর গ্রামের লিটনের মুদি দোকানে বসেছিলেন।
এ ঘটনায় মিরনের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর চন্দ্রগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় পুলিশ ২০২০ সালের ২৩ মার্চ মিলন নামে সন্দেহভাজন এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে মেম্বার মিরন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
হত্যা মামলাটি তদন্ত করেন চন্দ্রগঞ্জ থানার সেই সময়ের পুলিশ পরিদর্শক মো. হাসান জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি ২৫ জন আসামির নামে ২০২১ সালের ২৪ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন৷ তাদের মধ্যে খোরশেদ আলম, কালা শাহাদাত ও ইলিয়াস কোবরা বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে মিরনকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসীরা আসামি লোকমানের নির্দেশে খোরশেদ আলমের ঘরে বসে একাধিকবার হত্যার ছক আঁকেন। একাধিক বৈঠক করে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। তারা মিরনের গতিবিধিও লক্ষ্য রাখছিলেন।
মিরন পূর্ব আলাদাদপুর গ্রামের লিটনের দোকানে নিয়মিত আড্ডা দিতেন। এজন্য ঘটনার দিন ২৪ জন সন্ত্রাসী লিটনের মুদি দোকানের আশেপাশে অবস্থান নেয়। তাদের মধ্যে অস্ত্রধারী পাঁচজন অটোরিকশায় করে দোকানের সামনে এসে মিরনকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে।
মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা যে যার মতো ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
ঘটনায় ব্যবহৃত চারটি অস্ত্র চরচামিতা এলাকার একটি মক্তবের মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয়। পরে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তারকৃত জসিম পুলিশকে অস্ত্র ও গুলিগুলোর সন্ধান দেয়।
এ ঘটনায় মোট ১০ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। পরে বিভিন্ন সময়ে জামিনে বের হয়ে অনেকেই আত্মগোপন করেন।
শুনানি ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আজ মঙ্গলবার এ রায় দিলেন আদালত।
এদিকে বাদী তাহমিনা আক্তার অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, আমি এ রায়ে সন্তুষ্ট নই। একজন আসামিকেও ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়নি। আসামিদের যাতে ফাঁসি হয়, এজন্য আমি উচ্চ আদালতে যাব।
এএইচ
আরও পড়ুন