ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

লাল বাহাদুর শাস্ত্রী: বর্ণময় জীবনে সাধারণ আবরণ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৪১, ৩০ এপ্রিল ২০২৩

বর্তমানে আধুনিক মানুষের জীবন আনেক বেশি যান্ত্রিক, অনেক বেশি জটিল। আমরা প্রতিদিন শুধু ছুটে চলেছি, কিন্তু কখনো কি গভীরভাবে ভেবেছি- কিসের পেছনে ছুটছি? কেনই বা ছুটছি? আদতেই কি কোনো অর্জন আছে এই জীবনে?  

অথচ পৃথিবীতে এমন অনেক মেধাবী, গুণী মানুষ আছেন, যারা সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে থেকেও করে গেছেন একেবারে আটপৌরে জীবন যাপন। জীবনের কোনো মোহই তাদেরকে টানেনি, তারপরও তারা সফল হয়েছেন। এমনই একজন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী।

আমরা কি জানি, ক্ষমতার শীর্ষ অবস্থানে থেকেও যাপন করে গেছেন একটি সৎ, সাধারণ জীবন? এমনকি দেশের খাদ্যসঙ্কটে বেতনও নিতেন না তিনি। আর বিয়ের সময় পণ হিসেবে নিয়েছিলেন শুধু চরকায় বোনা একটি ধুতি!     

২ অক্টোবর দিনটা প্রত্যেক ভারতীয়র কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এইদিনেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন দেশের দুই জনপ্রিয় জাতীয়তাবাদী নেতা মহাত্মা গান্ধি ও লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন দলনেতা হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। 

১৯০৪ সালের ২ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের মুঘলসরাই রেল স্টেশন সন্নিহিত এক ছোট্ট শহরে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর জন্ম। তার পিতা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক। তার যখন মাত্র দেড় বছর তখনই বাবা মারা যান। অত্যন্ত দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়ে তিনি তার শৈশব অতিবাহিত করেছেন।

তার জন্মসূত্রে পাওয়া পদবী শ্রীবাস্তব। ১৯২৫ সালে বারাণসীর কাশী বিদ্যাপীঠ থেকে স্নাতক হওয়ার পর ‘শাস্ত্রী’ উপাধি পান। আজীবন তাই ব্যবহার করেছেন। চরম দারিদ্র্যের কারণে নৌকায় যাতায়াত করার মতো টাকা তার ছিল না, তাই মাথার উপরে বই বেঁধে প্রতিদিন সাঁতরে গঙ্গা পার হয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করতেন। 

গান্ধীজীর কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। খুব ছোটো বয়সেই তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করেন। তাঁর বিখ্যাত স্লোগান ‘জয় জওয়ান, জয় কিষাণ’ তখন খুবই জনপ্রিয়। তার এই ডাক উদ্বুদ্ধ করে এদেশের সমাজভাবনাকে।

১৯১৫ সালে, মহাত্মা গান্ধীর একটি বক্তব্য লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর জীবন বদলে দেয়, যা তাকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিতে সোচ্চার করে। ১৯২১ সালে গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য তার জেল হয়েছিল, তবে নাবালক হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি লবণ সত্যাগ্রহতে অংশ নিয়েছিলেন। এই কারণে তাঁর দু'বছরের জেল হয়েছিল।

তিনি ১৯২৮ সালে ললিতা দেবীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তখনকার দিনে পণপ্রথা চালু ছিল। কিন্তু তিনি পণ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। তবে শ্বশুরবাড়ির অনুরোধে পরে পণ হিসেবে শুধুমাত্র চরকায় বোনা একটি খাদির ধুতি আর স্পিনিং হুইল নিয়েছিলেন শাস্ত্রী।

সবসময় বিলাসিতা এড়িয়ে চলেছেন শাস্ত্রী। যদিও পরিবারের চাপে ১২ হাজার টাকার ফিয়াট গাড়ি কিনেছিলেন। সেজন্য পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ৫ হাজার টাকা ঋণ নিতে হয় তাকে। শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর ব্যাঙ্কের লোক দরজায় কড়া নাড়লে পেনশনের টাকা থেকে তা মেটান শাস্ত্রীর স্ত্রী। লালবাহাদুর শাস্ত্রী মেমোরিয়ালে রাখা আছে সেই গাড়িটি।

স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিতে পড়াশোনা আর এগিয়ে নিয়ে যাননি। অসহযোগ আন্দোলনে শামিল ছিলেন। স্বাধীনতার পূর্ব সময়ে তিনি মার্কস, রাসেল এবং লেনিনের বই পড়তে সময় কাটাতেন।

১৯৩০ সালে তিনি কংগ্রেস দলের সেক্রেটারি এবং পরে এলাহাবাদ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি হন।  ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট লাল বাহাদুর শাস্ত্রী পুলিশ ও পরিবহনমন্ত্রী হন। ১৯৫৭ সালে তিনি পরিবহন ও যোগাযোগমন্ত্রী হন এবং তারপরে বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী হন। ১৯৬১ সালে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে প্রথম দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্পর্কিত কমিটি চালু করেন। পুলিশমন্ত্রী থাকাকালীন লাঠিচার্জের পরিবর্তে জল ছিটিয়ে বিক্ষোভ হটানোর ভাবনা তাঁরই। তারই পরিবর্তিত রূপ জলকামান।

জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর দেশের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হন শাস্ত্রী। ১৯৬৫ সালে ইন্দো-চিন যুদ্ধের সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সেই সময় দেশে খাদ্যসঙ্কট দেখা দিলে বেতন নেওয়া বন্ধ করে দেন।

১৯৬৬ সালে রাশিয়ার তাসখন্দে ভারত-পাকিস্তান শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন শাস্ত্রী। সেখানেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তার। তার মৃত্যুর পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে আজও অভিযোগ ওঠে।

এএইচএস
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি