লালন সাঁইয়ের ১৩১তম তিরোধান দিবস
প্রকাশিত : ১২:১৫, ১৭ অক্টোবর ২০২১
অসাম্প্রদায়িক, মানবতাবাদি, মরমী-সহজিয়া ধারার গান ও দর্শনের স্রষ্টা ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩১তম তিরোধান দিবস আজ। ১৭৭৪ সালে জন্ম নেয়া এই জ্ঞান তাপস ভক্তি ও কর্ম পথের অনুসন্ধান করেছেন, দিয়ে গেছেন সন্ধান। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় মহাপ্রয়াণ হয় মহাত্মা লালনের।
একতারা আর বাউলগান যেন বাংলার অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ। গ্রামীণ বাঙলার পথে-ঘাটে একতারা হাতে স্বপ্রণোদিত গানে বাউলের যে ছবি তাই-ই আবহমান বাংলার সংস্কৃতি। আর এর অন্যতম পুরোধা লালন।
মানুষই যার কাছে বড় পরিচয়। জাত-পাত ও বর্ণ-বৈষম্যকে যিনি আঘাত করেছেন সমূলে আর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন আত্মার প্রেমের তিনি লালন সাঁই।
ভক্তকুলের বিশ্বাস, তরুণ বয়সে তীর্থ ভ্রমণে বের হলে গুটি বসন্তে আক্রান্ত হন লালন। সঙ্গীরা তাঁকে মৃত ভেবে ফেলে চলে যায়। কালিগঙ্গা নদীতে ভাসমান লালনকে উদ্ধার করেন মলম শাহ নামের আরেক সাধক। পরে কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় বসবাস শুরু করেন এবং পরবর্তীতে সুফি ভাবতত্ত্বে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি গান রচনা শুরু করেন।
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় তার দর্শন আবর্তিত হয় মানুষলগ্ন ভূমিকে ঘিরে। ১১৬ বছর আয়ুষ্কালে লালন রচনা করেন প্রায় আড়াই হাজার গান।
যাবতীয় নিপীড়ন, ধর্মীয় গোঁড়ামি আর কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লালন ছিলেন প্রতিবাদি। ব্রিটিশ শাসন এবং হিন্দু-মুসলিম অনৈক্যের ক্ষেত্রেও উচ্চারণ করেছেন সচেতনতার বাণী।
বিবিসি বাংলার সেরা গান জরিপে ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ অন্যতম। ২০০৪ সালে একই প্রতিষ্ঠানের সেরা বাঙালির তালিকাতেও তিনি স্থান করে নেন।
লালনের প্রভাব বাংলা ভাষা-সাহিত্য ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় বিশ্বপরিমণ্ডলে। অ্যালেন গিন্সবার্গ তাঁকে নিয়ে লিখেছেন আফটার লালন নামে বই। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের অসংখ্য কবিতা-গদ্যে-গানে লালনের প্রভাব দেখা গেছে।
লালনের গান ও জীবনচরিত নিয়ে তৈরি হয়েছে নাটক, সিনেমা, গান, কবিতা। অসাম্প্রদায়িক চেতনা, প্রেম ও মানবাত্মার মুক্তির জন্য লালনের সহজিয়া দর্শন অনন্ত ধারায় বহমান এই বাংলায়।
এএইচ/