ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

লিপির অভাবে মাতৃভাষা ছেড়ে প্রচলিত ভাষায় প্রবেশ (ভিডিও)

আদিত্য মামুন, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১২, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Ekushey Television Ltd.

প্রতি দু’সপ্তাহে লুপ্ত হয় ১টি ভাষা। রক্তের দামে কেনা বাঙলার মায়ের ভাষা রাষ্ট্রভাষা হলেও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মাতৃভাষাগুলো যারপরনাই বিপন্ন। যদিও জাতিসত্ত্বাসমূহের ভাষা সংরক্ষণে আছে সুনির্দিষ্ট আইন। 

জনসংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশে ১৬ লাখ নৃ-গোষ্ঠীর ৪০টি মাতৃভাষা রয়েছে। বৈচিত্র্যময় পৃথিবী বিনির্মাণে এসব জাতিসত্ত্বার ভাষাগুলো আজও স্বীকৃতি পায়নি। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত, সুশাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এদের ভাষা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়ার গুরুত্ব বেড়েছে অনেক রাষ্ট্রে। 

এরই আলোকে ইউনেস্কো বাংলাদেশের ক্ষুদ্রজাতিসত্ত্বার ভাষাগুলোকে চারটি পরিবারে বিন্যাস করেছে। অস্টো-এশিয়াটিক, তিব্বতি-চীন, দ্রাবিড় ও ইন্দো-ইউরোপীয় এর অন্যতম। 

শব্দভান্ডারের অপ্রতুলতা, উচ্চারণগত সমস্যা, লোকসাহিত্য সম্ভার না থাকায় অনেক জনগোষ্ঠিই মাতৃভাষা ছেড়ে প্রচলিত ভাষা তথা বাংলায় প্রবেশ করেছে। লিপি না থাকায় কেউ কেউ আবার রোমান বর্ণমালা ব্যবহার করছে। যে কারণে কোচ, রাজবংশী, শবর, টোটা, মুন্ডা, পাংখোয়া, খুমি, সুরা, চাক ও মালটোসহ ৩৪টি ভাষা বিপন্নপ্রায়। 

রাজশাহী-জয়পুরহাটের লাড়া ভাষায় কথা বলে মাত্র ২১৫ জন। পার্বত্য অঞ্চলের রেংমিচটা ভাষায় কথা বলে মাত্র ৬ জন। বানাইভাষীতে কথা বলে এমন ৬শ’ মানুষের বসবাস এখন বাংলাদেশে। কোডাভাষী মানুষ আছে মাত্র দু’হাজার। লুসাই ভাষীর সংখ্যা ৯৫৯ জন। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ বলেন, “মৌখিক ভাষাটি যদি হারিয়ে যায় তবে সেই ভাষাটি হারিয়ে যাবে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এভাবে প্রায়শই পৃথিবীতে থেকে অনেক ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। “

পুঁজির দাপটে টিকতে না পারা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ভাষা বিলুপ্ত হচ্ছে। এদের শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদানের বিষয় যখন সামনে আসে তখন মোটা দাগে প্রশ্নও ওঠে- নিজস্ব বর্ণমালা নিয়ে। তাই প্রথম পর্যায়ে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, সাদরি ও সাঁওতাল ভাষা শিক্ষণে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। 

অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ বলেন, “এই ভাষাগুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য লিপি প্রবর্তন করতে হবে। এই ভাষাগুলোতে যে মানুষরা কথা বলেন সেই কথা থেকে তথ্য নিয়ে আসবো এবং সেই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা ব্যাকরণ তৈরি করতে পারি।”

বিলুপ্তপ্রায় ভাষা সংরক্ষণে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আইন ২০১০ অনুযায়ি গবেষণা, প্রশিক্ষন ও লেখ্যরূপ প্রর্বতন শুধু সময়ের ব্যাপার-দাবি এ কর্মকর্তার। 

অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ বলেন, “এ দেশে আরও যে মাতৃভাষাগুলো আছে সেই মাতৃভাষাগুলো যাতে বিকশিত হয়, বহিঃপ্রকাশ হয়, সেই মাতৃভাষায় যাতে পড়াশুনা করানো হয়- সেটির প্রতি অবশ্যই রাষ্ট্র আন্তরিক।”

একুশের চেতনায় সব ভাষার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নৃ-গোষ্ঠীর কৃষ্টি-সংস্কৃতি রক্ষার মাধ্যমে বহুবৈচিত্রের বাংলাদেশ অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে পৃথিবীতে- এমনই প্রত্যাশা সূধীজনদের।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি