লেডি বাইকার এশা চক্রের টার্গেট প্রভাবশালীর মেয়ে-স্ত্রী
প্রকাশিত : ০৯:১২, ২৪ মার্চ ২০২৫

খুলনার বহুল আলোচিত-সমালোচিত লেডি বাইকার ইরিন জাহান এশা ও তার চক্রের টার্গেট প্রভাবশালীর মেয়ে ও স্ত্রী। তাদেরকে টার্গেট করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পরিবারের কাছ থেকে বড় অংকের মুক্তিপণ দাবি করাই ছিল এই চক্রের কাজ।
পুলিশের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
এক তরুণীকে নির্যাতনের অভিযোগে রোববার (২৩ মার্চ) দুপুরে গ্রেপ্তার লেডি বাইকার এশাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। লেডি বাইকার এশা ছাড়াও তার ভাই মো. খালিদ হাসানকে (৩৮) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা বাদী হয়ে সোনাডাঙ্গা থানায় একটি মামলা করেছেন।
পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওই তরুণীর বাবা ফ্রান্স প্রবাসী। দীর্ঘ ১০ বছর ফ্রান্সে থাকাকালীন ইরিন জাহান এশা বাদীর মেয়ের (১৭) সঙ্গে বান্ধবী সুলভ আচরণ করে দীর্ঘদিন ধরে নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করিয়ে নেশায় আসক্ত করে ফেলেন। সে বিভিন্ন সময় তার বাসায় ওই তরুণীকে ডেকে নিয়ে মাদকদ্রব্য সেবন করাতো। তরুণীর বাবা তাকে একাধিকবার নিষেধ করা সত্ত্বেও সে নিষেধ অমান্য করে ওই তরুণীকে ডেকে নিয়ে যেত।
বাদীর মেয়ে অতিরিক্ত নেশাদ্রব্য সেবন করে তাদের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করে। এমনকি মাদক সেবন করতে না পারলে সে বিভিন্ন সময় বাসার জিনিসপত্র ভাঙচুর করে পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করতো।
এ ঘটনায় বাদী নিরুপায় হয়ে শনিবার (২২ মার্চ) দিবাগত রাত অনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায় মেয়েকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করার উদ্দেশে বাড়ি থেকে রওনা হন।
এসময় লেডি বাইকার এশাসহ অন্যান্য আসামিরা মোটরসাইকেলে এসে তাদেরকে অনুসরণ করতে থাকে। রাত সোয়া ১২টার দিকে বাংলাদেশ বেতার ভবনের সামনে পৌঁছালে ইরিন জাহান এশা শেখ ও তার ভাই মো. খালিদ হাসান মোটরসাইকেলযোগে বাদীর অ্যাম্বুলেন্সের সামনে এসে গতিরোধ করে।
এরপর জোরপূর্বক অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে প্রবেশ করে বাদীর মেয়ের হাত ও কাপড় ধরে টানাহেঁচড়া করে তাকে নেয়ার চেষ্টা করে।
আসামিদের সাথে ধস্তাধস্তির অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার টান দিয়ে শিববাড়ি মোড়ে পৌঁছায়। বাদীর ডাক-চিৎকার শুনে সেখানে দায়িত্বরত নৌ-বাহিনীর সদস্যরা এগিয়ে এসে আসামিদের ও বাদী এবং তার মেয়েকে হেফাজতে নেয়।
এরপর নৌ-বাহিনীর সদস্যরা ঘটনার বিষয়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে আসামিদের হস্তান্তর এবং বাদীর মেয়েকে বাদীর নিকট বুঝিয়ে দেয়।
ধস্তাধস্তিতে ওই তরুণী সামান্য আঘাত পেলে বাদী তাকে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
পুলিশ জানায়, বিভিন্ন সময় ওই মেয়ের সঙ্গে মিশতে নিষেধ করলে লেডি বাইকার ইরিন জাহান এশা বাদীকে ভয়ভীতি দেখাতো ও হুমকি দিতো। এ বিষয়ে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ ঘটনার বিষয়ে গুরুত্বরপূর্ণ তথ্য পেয়েছে, যা যাচাই-বাছাই চলছে।
প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে আসামিরা প্রফেশনালভাবে প্রভাবশালীর মেয়ে বা স্ত্রীকে টার্গেট করে তাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে মাদক সেবনসহ অনৈতিক কাজের সাথে লিপ্ত করে এবং ভিকটিমদের নিজ আয়ত্বে নিয়ে এসে পরিবারের কাছে বড় অংকের মুক্তিপণ দাবি করতো।
খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশের ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এএইচ
আরও পড়ুন