ল্যাবে এখন রক্তের প্রয়োজন
প্রকাশিত : ১৮:৪৪, ২০ এপ্রিল ২০২০
আপনার সামান্য এক ব্যাগ রক্ত দানের মাধ্যমেই বেঁচে যেতে পারে একটি প্রাণ। বিভিন্ন জটিল রোগীদের জন্য রক্ত সব সময় প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান সঙ্কটে রক্তের যোগান না হলে রোগীরা আরও বেশি সমস্যায় পড়বেন। তাই রক্ত দানের মতো মহৎ কাজে এখনই এগিয়ে আসা উচিত। আর এক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে রেখেছে কোয়ান্টাম ল্যাব। প্রতিদিন অসংখ্যা মানুষ এই ল্যাব থেকে রক্ত নিয়ে নিজেদের চাহিদা পূরণ করছে।
মাত্র ১১ বছর বয়সী আশরাফুল। গত ১৫ এপ্রিল ২০২০। ঢাকার শান্তিনগরে কোয়ান্টাম ল্যাবে এক ব্যাগ ‘বি পজিটিভ’ রক্তের অপেক্ষায় বসে আছে সে এবং তার মা। সাত মাস বয়সে তার থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। বেঁচে থাকার জন্যে প্রতি মাসে শরীরে নতুন রক্ত নেয়ার প্রয়োজন দেখা দেয় তখন থেকেই। তার বাবা চুন্নু মিয়া মানিকগঞ্জে ইট ভাঙার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। মা সালেহা বেগম গৃহিণী। সাত মাসের শিশুর এই জটিল রোগে যখন তারা দিশেহারা, তখনই সন্ধান পান কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের। নিজেদের আর্থিক অবস্থার বিবরণ জানালে কোয়ান্টাম ল্যাব থেকে প্রসেসিং খরচ ছাড়াই রক্ত সংগ্রহ করার একটি কার্ড করে দেয়া হয় শিশু আশরাফুলকে। তারপর থেকে গত ১০ বছর প্রতি মাসে আশরাফুলকে বিনা প্রসেসিং খরচে রক্ত সরবরাহ করছে কোয়ান্টাম ল্যাব।
আশরাফুলের মতো এমন হাজারো রোগী কোয়ান্টাম ল্যাবে রক্ত নিতে আসেন নিয়মিত। থ্যালাসেমিয়াসহ নানান রোগে আক্রান্তদের রক্তের প্রয়োজন হয় সারা বছর- ঈদের বন্ধে যখন চিরচেনা ঢাকাকে চেনা দায় তখনও। এমনকি করোনার আতঙ্কও রক্তের প্রয়োজনকে থামাতে পারে না।
২৬ মার্চ থেকে দেশের অনেক কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেলেও কোয়ান্টাম ল্যাবের কর্মীরা মানবতার এই চরম মুহূর্তে ল্যাবের সমস্ত কার্যক্রম যথাসাধ্য চালু রেখেছেন। প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে তারা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। গত ২১ দিনে (২৫ মার্চ-১৪ এপ্রিল) বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আসা রোগীদের কোয়ান্টাম ল্যাব সরবরাহ করেছে ৩,২২৪ ইউনিট রক্ত ও রক্ত উপাদান। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১৫৪ ইউনিট। এর মাঝে সামর্থ্যহীন রোগীদের বিনা প্রসেসিং খরচে এবং স্বল্প প্রসেসিং খরচে সরবরাহ করা হয়েছে ৪২০ ইউনিট। আর এসময়ে রক্ত সংগ্রহের পরিমাণ ১,৬৭৮ ব্যাগ। অর্থাৎ দৈনিক গড়ে ৮০ ব্যাগ।
২০০০ সালে শুরু করে দুই দশকের নিরলস প্রচেষ্টায় কোয়ান্টাম ল্যাব গড়ে তুলেছে তিন লক্ষাধিক রক্তদাতার একটি ডোনার পুল। ১৪ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম ১১ লক্ষ ৯০ হাজার ৭০০ ইউনিট রক্ত ও রক্ত উপাদান সরবরাহ করেছে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, রক্তের কোনো মূল্য হয় না। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী রক্তের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা ও রোগীকে দেয়ার উপযোগী করার জন্যে যে প্রসেসিং খরচ, তার জন্যে খরচ দিয়ে সামর্থ্যবানরা কোয়ান্টাম ল্যাব থেকে রক্ত সংগ্রহ করেন। আর রক্তগ্রহীতা আশরাফুলদের মতো যে পরিবারগুলোর
সামর্থ্য নেই, কোয়ান্টাম ল্যাব থেকে রক্ত সংগ্রহের জন্যে তাদের এই প্রসেসিং খরচও দেয়ার প্রয়োজন হয় না।
জাতীয় দুর্যোগে সবসময়ই বাংলাদেশের মানুষের সমমর্মিতা বিশ্বের জন্যে অনুসরণীয়। এর প্রমাণ মেলে বিগত সালের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রানা প্লাজা ধ্বস বা বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের সময়। করোনার এই সময়েও রক্তদাতারা এগিয়ে এসেছেন মুমূর্ষের পাশে দাঁড়াতে।
করোনা দুর্যোগের এই মুহূর্তে কোয়ান্টাম ল্যাবের কার্যক্রম চালু রাখতে তাই প্রয়োজন সবার সম্মিলিত সহযোগিতা। আসুন, সাধ্যমতো বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াই। যাদের পক্ষে সম্ভব, রক্তদানের সময় হয়ে থাকলে যথাযথ নিরাপত্তা অবলম্বন করে ল্যাবে এসে রক্ত দিন। মানবতার পাশে দাঁড়ান। করোনার এই দুর্যোগকাল বের করে আনুক আমাদের ভেতরের সত্যিকার ভালো মানুষটাকে।
এসি