শারীরিক প্রতিবন্ধী বাবুলের মাশরুম বিপ্লব
প্রকাশিত : ১৯:৪৯, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০
নিজের মাশরুম সেন্টারে বাবুল আক্তার- সংগৃহীত
তিনি জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। শিশুকাল থেকেই অবহেলিত। কিশোর বয়সে উপনীত হয়ে কঠিন অভাবের দেখা। ৮ম শ্রেণির পর আর লেখাপড়া করা হয়ে ওঠেনি। জীবিকার প্রয়োজনে তিনি কৃষি কাজ ও চায়ের দোকান দিয়েছেন কিছুদিন। তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা মাগুরা সদর উপজেলার বড়খড়ি গ্রামের বাবুল আক্তার। মাশরুম নিয়ে স্বপ্ন দেখে তিনি গড়ে তুলেছেন ‘ড্রিম মাশরুম সেন্টার’। ১০-১৫টি মাশরুম নিয়ে ছোট্ট একটি খুপরি ঘরে তার যাত্রা শুরু করেন তিনি। এখন তার ‘ড্রিম মাশরুম সেন্টার’ ফার্মটি দেশের সবচেয়ে বড় মাশরুম কেন্দ্র।
২০০৭ সালে যশোর হর্টিকালচার থেকে মাশরুম চাষের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে সেখান থেকে পাওয়া ১০টি মাশরুম দিয়ে যাত্রা শুরু করেন বাবুল আক্তার। এর মাধ্যমেই তিনি শুরু করেন লক্ষ্যে পৌঁছার স্বপ্ন বুনা। বাবুল আক্তার প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে মাশরুম চাষের জন্য অনুকরণীয় মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন গোটা দেশে। গড়ে তুলেছেন ড্রিম মাশরুম সেন্টার নামে একটি মাশরুম পল্লী। ২০০৮ সালে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাশরুম চাষ শুরু করেন। প্রথমে তেমন আশানুরূপ ফল পাচ্ছিলেন না। প্রথমে সাদা মাশরুম দিয়ে শুরু করলেও কাঙ্খিত ফলাফল মিলছিল না। প্রাথমিকভাবে তার একার উৎপাদিত খুবই সামান্য মাশরুম বিক্রির জন্য বাজার পাচ্ছিলেন না।
সারা দেশে তিনি মাশরুম বাবুল হিসেবে সমধিক পরিচিত। বড়খড়ি গ্রামের হাসেম মোল্যার ৯ ছেলে-মেয়ের মধ্যে ৫ ছেলে ৪ মেয়ের মধ্যে বাবুল ৭ম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক গ্রহণ করছেন বাবুল- সংগৃহীত
তিনি মাশরুম উৎপাদনেও পরিবর্তন এনেছেন। বর্তমানে বাটন, গ্যানো ডরমা ও ওয়েস্টার জাতের মাশরুম তার এখানে চাষ করা হয়। দেশি- বিদেশি পদ্ধতির ব্যবহার করে তিনি মাশরুম চাষ করছেন। মাশরুম চাষের জন্য প্রয়োজন হয় কাঠের গুঁড়া, ধানের তুষ, গামের ভূষি, ভুট্টার গুঁড়াসহ নানা উপকরণ। প্যাকেট থেকে বীজ বের হতে সময় লাগে ৩০ থেকে ৩৫ দিন। এটি পরিপূর্ণ হয় প্রায় ৩ মাস পর। প্রক্রিয়াজাতকরণের পর এটিকে বাজারজাত করা হয়।
বাবুল জানান, দেশের অভ্যন্তরে বিক্রির পাশাপাশি ভারতের কলকাতায় বিক্রির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। এ বছরের মধ্যেই বাজারজাত করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। বাবুলের সহযোগিতায় বড়খড়ির প্রতিটি বাড়িতেই এখন আধুনিক পদ্ধতিতে মাশরুম চাষ হচ্ছে। মাশরুম চাষের মাধ্যমে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি এলাকার মানুষকেও এনে দিয়েছেন অর্থনৈতিক মুক্তি। বড়খড়ি এখন মাশরুমের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বেকার যুবকদের বেকারত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। মাশরুম চাষে সাফল্যের জন্য ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক পেয়েছেন।
বাবুল আক্তার জানান, নিজের প্রতিষ্ঠানে মাশরুমের বীজ উৎপাদন ও প্রশিক্ষণ দেন তিনি। মাশরুম উৎপাদন কেন্দ্র থেকে ক্যাপসুল ও পাউডার তৈরি করে তিনি সুনাম অর্জন করেছেন। এ জন্য তিনি জাতীয় কৃষি পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা সনদপত্র পেয়েছেন।
তার সফলতা দেখে তারই পরামর্শে বড়খড়ি গ্রামসহ এ অঞ্চলের প্রায় বাড়িতেই এখন অনেকেই মাশরুম উৎপাদনে স্বাবলম্বী হয়েছেন বলে তিনি যোগ করেন। এ সেন্টারে গড়ে প্রতিদিন ৩০০ কেজি কাঁচা মাশরুম তোলা হয়। শুকানোর পরে সেগুলো ৩০ কেজি ওজন হয়। যার মূল্য প্রতি কেজি ১৫০০ করে ধরে ৪৫ হাজার টাকা। এ ফার্মের মাসিক বিক্রি ৮-১০ লাখ টাকা। এতে প্রতি মাসে আয় হয় ২ লাখ টাকা। ১০০ টাকা খরচ করে ১৫টি মাশরুম বীজ দিয়ে শুরু করে বাবুল আজ দুই কোটি টাকার মালিক।
এমএস/এসি
আরও পড়ুন