শার্শার ৩ শতাধিক মৎস্যজীবীর মানবেতর জীবনযাপন
প্রকাশিত : ১২:৫০, ৩১ অক্টোবর ২০২৩
যশোরের শার্শা উপজেলার সীমান্তবর্তী তিনটি বিলের পার্শ্ববর্তী ৬টি গ্রামের তিন শতাধিক মৎস্যজীবী পরিবার বিলে মাছ ধরতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছে বলে অভিযোগ তাদের। তবে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর বলছেন, জেলেদের অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরতে দিতে হবে, সেটা সম্ভব নয়। মাছ ধরার জন্য খেপলা বা ঝাকি জাল, আটন বা ঘুনি, ভেসাল, সুতির মোটা ফাঁসের (৬.৫ সেমি) জাল ইত্যাদি বৈধ উপায় আছে সেগুলো ব্যবহার করে মাছ ধরলে অসুবিধা নাই।
স্থানীয় সংবাদকর্মী আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দক্ষিণ শার্শার ঠেঙামারী, গোমর ও আওয়ালী বিলের ফসলী জমি ৬ মাস ধরে পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু কোন রকম সতর্ক না করে শার্শা উপজেলা মৎস্য অফিস তাদের মাছধরা জালগুলো পুড়িয়ে দেয়। এতে কয়েকশ’ পরিবার এখন বেকার হয়ে পড়েছে। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তারা।
কায়বা ইউনিয়নে কর্মরত কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আনিছ উদ্দিন বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় চলতি আমন মৌসুমেও ভারতীয় ইছামতি নদীর জোয়ারের পানিতে কায়বা ইউনিয়নের রুদ্রপুর, দাউদখালী, কায়বা, ভবানীপুর, পাড়ের কায়বা, বাইকোলা গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বিলাঞ্চল জলাবদ্ধ রয়েছে। নষ্ট হয়েছে কয়েকশ’ বিঘা জমির রোয়া ধান। ধান রোপণ করা সম্ভব হয়নি ঠেঙামারী, গোমর ও আওয়ালী বিলের তলদেশ।
বর্ষা মৌসুমে সেখানকার প্রায় ৫শ’ একর জমিতে ৫০ বছর ধরে কোন ফসলের চাষ হয় না। কেবলমাত্র ইরি চাষের ওপরে নির্ভর থাকতে হয় সেখানকার চাষীদের। জলাবদ্ধতার কারণে এবছর ৩০০ একর জমি চাষ করা সম্ভব হয়নি। ফলে ধীরে ধীরে তারা মৎস্যজীবীর পথ বেছে নেয় বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা।
রুদ্রপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেন (৫০) বলেন, এলাকার সাধারণ মানুষেরা বিলে মাছ ধরে সংসার চালায়। কিন্তু মৎস্য অফিসার এসে এ বছর তাদের প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছধরা জাল পুড়িয়ে দিয়েছেন। এখন তারা সম্পূর্ণ বেকার।
ভবানীপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম (৩২) বলেন, বংশপরম্পরায় আমরা জাল পেতে মাছ ধরে আসছি। এ মাছ বিক্রি করে আমাদের সংসার চলে। এক সময় চোরাচালানের ‘জোন’ দিয়ে এলাকার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত। এখন বৈধ পথে থেকেও বাঁধা।
রুদ্রপুর গ্রামের আকবর আলী (৪০), শহিদ উদ্দিন (৩০) অভিযোগ করে বলেন, মৎস্য কর্মকর্তারা এসে যে জাল পুড়িয়ে দিয়েছেন ‘তাতো আমরা বাড়ি তৈরি করিনি, বাজার থেকে কিনেছি। এবছর তারা প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছধরা জাল পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন আমরা বেকার হয়ে বসে আছি। আগে দেশি সুতোই আমরা জাল বুনতাম। এখন বাজারে চায়না সুতোর ওই জাল কিনতি পাওয়া যায়। এই জাল বিক্রি বন্ধ করলেই তো আমরা অন্য পদ্ধতিতে মাছ ধরতে পারি বলেন তারা।
কায়বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাব হোসেন বলেন, বিষয়টা আমি শুনেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলে তাদের সরকারি বিধি মোতাবেক মাছ ধরার একটা ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, আমরা মাছ ধরতে নিষেধ করিনি। পানির প্রবাহ বন্ধ করে পাটাবাঁধ দেওয়া ও সরকারিভাবে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করা হয়। মৎস্য সংরক্ষণ আইন, ১৯৫০ অনুযায়ী অবৈধ জাল, আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে মাছের চলাচলের পথ আটকিয়ে, বিষ দিয়ে ইত্যাদি উপায়ে মাছ ধরা যাবে না।
উপজেলা প্রশাসন এধরনের অভিযোগ পেলে প্রথমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গ্রাম পুলিশ, উপসহকারি ভূমি কর্মকর্তা দিয়ে সংশ্লিষ্টদের সর্তক করা হয়। না মানলে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় মোবাইল কোর্ট বা অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে।
এএইচ
আরও পড়ুন