ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

শিউরে উঠেন বারেক সাহেব

প্রকাশিত : ১১:০২, ২৪ মার্চ ২০১৯

ধ্যাৎ - আনমনে খেকিয়ে উঠেন বারেক সাহেব। ৩০ তারিখ কি হতে যাচ্ছে জানা ছিল আগেই। স্বপ্নেও ভাবেননি ক্ষমতায় যাবে তার দল। পরাজয় ছিল প্রত্যাশিতই। কিন্তু তাই বলে এইভাবে? এমনভাবে? দল খুজতে যেতে হত লন্ডনে আর এখন দলের এমপি খুজতে লাগবে মাইক্রোস্কোপ! এটা হলো কোন কিছু! ধ্বস আসছে জানতো সবাই, শুধু সুনামির কথা মাথায় ছিল না কারো। নৌকার সুনামিতে হঠাৎ নাই হয়ে গেল এদেশের রাজনীতিতে ডান পারের বাসিন্দারা। এখন এদেশে ডানপন্থি রাজনীতি কিভাবে টিকে থাকবে ভাবতেই শিউরে উঠেন বারেক সাহেব।

ভাগ্যিস এবারে নির্বাচন করেননি তিনি। টিকেট কিনতে টাকা লাগবে এনিয়ে কোন আপত্তি নেই তার। টিকেট মানেইতো টাকা। টাকা ছাড়া পাওয়া যায় কিসের টিকেট? বাস-ট্রেন-প্লেন আর এমনকি রিয়ারস্টলে বসে সিনেমা দেখার যে টিকেট তার জন্যওতো চাই টাকা। টাকা দিয়ে তাই নমিনেশনের টিকেট কিনতে আপত্তি নেই বারেক সাহেবের, নেই তার দলের কারোরই। কিন্তু এবার টিকেটের দামটা বড্ড বেশী হয়ে গেছে। পয়সা দিয়ে ফ্লপ ছবি দেখার টিকেট ব্ল্যাকে কাটার লোক অন্তন নন বারেক সাহেব। এবারের নির্বাচনের টিকেটের পিছনে তাই কোটি টাকা খরচ করার কোন আগ্রহই পাননি তিনি। তারপরও যে মনটা একটু খচ্খচ্ করেনি তা নয়। হাজার হোক নির্বাচন করা লোক তিনি। দেশে একটা সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে আর এলাকায় ‘বারেক সাহেবের সালাম নিন’ শ্লোগান শোনা যাবে না এটা হজম করা তার জন্য একটু কষ্টকরই বৈকি। বিশেষ করে সেদিনের ছোকড়া, নাক টিপলে এখনো ফোটায় ফোটায় দুধ বেরুবে যার - সে কিনা দলের টিকেটটা কিনে নিল দেখতে বুকটা ভেঙ্গে যাচ্ছিল তার।

তবে ৩০ তারিখ সন্ধ্যায়ই দু’রাকাত নফল নামাজ পড়েছেন বারেক সাহেব। ‘বাপরে বাপ, বড় একটা ফাড়া গেছে। গুলি বেরিয়ে গেছে কানের পাশ দিয়ে। খবর ছিল একবার নির্বাচনে দাড়িয়ে পড়লে। টাকাতো যা যাবার যেতই, সাথে যেত ইজ্জতটাও। উপরওয়ালা যা করেন ভালোর জন্যই করেন!’

৩০ তারিখের পর থেকেই নির্বাচনে দলের এই ধ্বসের কারণগুলো খুজে বের করার অনেক চেষ্টাই করেছেন তিনি। কোথায় আওয়ামী লীগ ল্যাং মারলো তাদের? ফলাফলটা শুন্য। অনেক খুজেও নির্বাচনে কোন ফাক-ফোকড় খুজে পাননি তিনি। থুতু ছুড়েছেন উপরে, এসে পড়েছে বারবার নিজের মুখেই। মনোনয়নপত্র বিক্রির শুরুতেই পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষকে ২০১৩-১৪’র আগুন সন্ত্রাসের দিনগুলোর কথা মনে করিযে দেয়া থেকে শুরু। তারপর শুধুই ভুল আর ভুল। দন্ডিত আসামী দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে সরাসরি। শুধু ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীই না বরং ১৫ আর ২১ আগস্টের খুনীদের আত্মীয়-স্বজন আর বাংলা ভাইয়ের মদদ দাতা কেউই বাদ যায়নি দলের এমপি প্রার্থীদের তালিকা থেকে। মানুষ এসব কোনকিছুই ভালভাবে নেয়নি। তারউপর ছিল নির্বাচনে লাগামছাড়া মনোনয়ন বাণিজ্য আর একই আসনে তিন-চারজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া। নির্বাচনে তার দলের ধ্বস নামবে না তো নামবে কি নৌকার।

এমনি ছেড়াবেড়া পরিস্থিতিতে নামজাদা থিংক ট্যাংকের জরিপের ফলাফল মনের কোনায় একটু আশার আলো জাগাচ্ছিল। ভুটান থেকে আমেরিকা - একের পর এক দেশ যখন নৌকার সরকারকে অনুমোদনের সিল দিয়ে চলেছে তখন একটু স্বস্তি পাচ্ছিলেন ঐ জরিপের ফল দেখে। কিন্তু কিসের কি? এখনতো দেখা যাচ্ছে বেটারা নির্বাচনে পর্যবেক্ষকই ছিল না আর জরিপ করতে গিয়েও জরিপ করা আসনগুলোর বেশিরভাগ ভোট কেন্দ্রের ধারে-কাছেও ঘেসেনি তারা। দল বোঝাই আছে শুধু অকর্মন্যের দল। নির্বাচনের আগে এনে জড়ো করলো একদল অচল মালকে আর এখন নির্বাচনের পরেও ভাবচক্করতো একদমই ভাল ঠেকছে না!

‘কি বারেক সাহেব, কোথায় চলছেন?’ এয়ারপের্টের লাউঞ্জে বসে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন বারেক সাহেব। হঠাৎ পরিচিত এক ভদ্রলোকের প্রশ্নে সম্বিত ফিরে পেলেন। ‘এইতো’, উত্তর দেন তিনি। কথা বলতে কেন যেন একদমই ভাল লাগছে না। কোথায় যে যাচ্ছে দল, সাথে তাদেরই যে নিচ্ছে কোথায় তা উপরওয়ালাই ভাল জানেন।

এসএ/

 


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি