ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

শিক্ষা, গবেষণায় ও সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞে এগিয়ে যাচ্ছে নোবিপ্রবি

নোবিপ্রবি প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ২৩:২৭, ১ আগস্ট ২০২২

Ekushey Television Ltd.

করোনাকালীন সময়ে যখন  সাধারণ মানুষ তীব্র ভয় ও আতঙ্কিত ছিল। কিন্তু রোগীর বৃদ্ধির তুলনায় দেশে করোনা সনাক্ত ল্যাবের সংখ্যা অপ্রতুল। তখনই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) একদল মেধাবী ও দেশপ্রেমী শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এগিয়ে আসেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড মোঃ দিদার উল আলমের নেতৃত্বে অনুজীব বিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টে স্থাপিত হয় করোনা টেস্টিং ল্যাব। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে এখনো পরিচালিত হচ্ছে এ ল্যাব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত  বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে প্রায় ৮০ হাজারের বেশি করোনা টেস্ট করা হয়েছে এ ল্যাব থেকে। নোবিপ্রবি থেকে আন্তর্জাতিক জার্নালে  প্রকাশিত হয়েছে কোভিড- ১৯ নিয়ে ৫ টি জার্নাল। এছাড়া ক্যাম্পাসে প্রায় ৪০ টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নিয়মিত তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। এসকল কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশে শিক্ষা, গবেষণায় ও সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞে এগিয়ে যাচ্ছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

আত্মমর্যাদাশীল ও আত্মনির্ভরশীল উন্নত জাতি গঠনের লক্ষ্যে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই গঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন। যার ওপর ভিত্তি করে দেশের ২৭তম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)। ২০০৬ সালের ২২ জুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়  এ বিশ্ববিদ্যালয়।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদ, ২টি ইনস্টিটিউট, ২৮টি বিভাগের অধীনে ৭ হাজার শিক্ষার্থী। প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষক এবং ৪ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে নোবিপ্রবি পরিবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের চালু রয়েছে ৫ টি হল- ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হল, হযরত বিবি খাদিজা হল, সাবেক স্পীকার আব্দুল মালেক উকিল হল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুনন্নেছা মুজিব হল।

নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড মোঃ দিদার উল আলম বলেন,  " উপাচার্য হিসেবে যোগদানের আগে থেকে ভেবে রেখেছিলাম, এখানে লেখাপড়ার পাশাপাশি গবেষণার মান উন্নয়ন করবো। আমি নিজেও গবেষণায় যুক্ত। তাই গবেষণার প্রয়োজনীয়তা বুঝি। সম্প্রতি শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। নোবিপ্রবির ৩৬ জন সাবেক শিক্ষার্থী সব রকমের বাছাই প্রক্রিয়া পেরিয়ে শিক্ষক হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিজেদের শিক্ষার্থীদের এত ভালো ফলাফল সত্যি অবাক হয়েছে। "

সম্প্রতি অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্স র‍্যাংকিং ২০২২ এ বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে নোবিপ্রবির ৭৩ জন গবেষক। ২০২১ -২২ সালে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ জন্য মনোনীত হয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন শিক্ষক ও ৯৭ জন শিক্ষার্থী। গবেষণায় পারস্পরিক সহায়তার জন্য চীন, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। তুরস্কের পামাক্কেল বিশ্ববিদ্যালয়ে " ইরাসমাস স্টাফ এক্সচেঞ্জ আওতায় " টিচিং মোবালিটি সপ্তাহে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপক।

নোবিপ্রবি শিক্ষকদেরও বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সুনাম রয়েছে। ফিমস বিভাগের অধ্যাপক ড. বেলাল হোসেন পাঁচটি   নতুন অমেরুদণ্ডী প্রাণী আবিষ্কার করেন। অমেরুদণ্ডী প্রাণীগুলোর নামকরণ করা হয় গ্লাইসেরা শেখমুজিবি’ (Glycera sheikhmujibi), ‘নিউমেনিয়া নোবিপ্রবিয়া  (Neumania nobiprobia),  ‘অ্যাররেনারুস স্মিটি (Arrenurus smiti),নেফটাইস বাংলাদেশি (Nephtys bangladeshi), এবং ব্রুনাইয়ের সমুদ্র এলাকা থেকে ভিক্টোরিয়োপিসা ব্রুনেইয়েনসিস (Victoriopisa bruneiensis) ।এর মধ্যে গ্লাইসেরা শেখমুজিবি’ (Glycera sheikhmujibi) নামকরণ করা হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম অনুসারে।

বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. সুবোধ কুমার সরকার জাপানের হিরোশাকি ইউনিভারসিটি অব হেলথ সায়েন্সের সাবেক বিখ্যাত প্রফেসর ড. জিন ইচি সাসাকির সহযোগিতায় বাংলাদেশে প্রথম তিন ধরনের কালো রসুন উদ্ভাবন করেন। যার নাম- নোবিপ্রবি-বিজি-১ (ডিএল-বিজি), নোবিপ্রবি-বিজি-২ (ডিএস-বিজি) ও নোবিপ্রবি-বিজি-৩ (সিএল-বিজি)।

এছাড়াও  নোবিপ্রবির আরেক শিক্ষক  ড. ফিরোজ আহমেদ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত র‍্যাপিড টেস্টিং কিটের অন্যতম উদ্ভাবক। ড. বিজন শীলের নেতৃত্বে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বল্প সময় ও স্বল্প মূল্যে করোনা শনাক্তকরন কিট উদ্ভাবন কাজের সঙ্গে প্রথম থেকেই যুক্ত ছিলেন ড. ফিরোজ আহমেদ। 

শিক্ষকদের পাশাপাশি গবেষণা ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় রেখে আসছেন নোবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা।  নোবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থী কাওছার আহমেদ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর গবেষণা করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পদক ও সম্মাননা অর্জন করে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের স্টিভেন্স ইনেস্ট্রিটিউটে অব মেশিন লানিংয়ের উপর পিএইচডি করছেন।  পাশাপাশি কর্মরত রয়েছেন বিশ্বখ্যাত  অ্যামজনের প্রধান কার্যালয়ে এপ্লাইড সায়েন্টিস্ট হিসেবে।

প্রতিবছরই নোবিপ্রবি থেকে অনেক শিক্ষার্থী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত  বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ও পিএইচডি করতে পারি জমাচ্ছেন।  নোবিপ্রবি সায়েন্স ক্লাব শিক্ষার্থী গবেষণা ও উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী করতে  নিয়মিত আয়োজন করছে " পিএইচডি গল্প "। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ তাদের পিএইচডি ও গবেষণার বিষয়গুলো গল্পের মতে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করেন।

পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোতেও নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের অর্জন কম নয়। সম্প্রীতি এটিএন বাংলা ও ইউসিবি ব্যাংক আয়োজিত পাবলিক পার্লামেন্ট বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় নোবিপ্রবি ডিবেটিং সোসাইটির বিতার্কিকগণ। এছাড়াও বিটিভির আয়োজিত জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয় অর্জনের মাধ্যমে  নিজেদের কৃতিত্বপূর্ণ অর্জন দেশের সামনে উপস্থাপন করেছে নোবিপ্রবি ডিবেটিং সোসাইটির সদস্যরা।

এছাড়াও নোবিপ্রবিতে সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে উল্লেখযোগ্য সংগঠন গুলো হলো নোবিপ্রবি ডিবেটিং সোসাইটি,  ড্যান্স ক্লাব, বিএনসিসি, রোভার স্কাউটস,  ছায়া জাতিসংঘ, সায়েন্স ক্লাব, চলো পাল্টাই ফাউন্ডেশন, নোবিপ্রবি রিচার্স সোসাইটি, নোবিপ্রবি তরুণ লেখক ফোরাম,বিজনেস ক্লাব, লুমিনারীর মতো শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

বিশ্ববিদ্যালয়টি সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে এমন আশা শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবার। তারা চান-প্রান্তিক জনপদের আলোর দিশারী হয়ে উঠুক নোবিপ্রবি।

কেআই//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি