ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের এখনই সময়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৫৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১১:৪০, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন ও উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে এখনই শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির। বর্তমান সরকারের নেওয়া তথ্য-প্রযুক্তি খাতে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছে দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি। এ ছাড়া তথ্য-প্রযুক্তি খাতকে দেশের ‘গ্রোয়িং সেক্টর’ (উদীয়মান খাত) আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এ খাতের উন্নতি করতে হলে, আগামী বাজেটেই শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারসহ তথ্য-প্রযুক্তির কাঁচামাল আমদানির ওপর শুল্ক কমাতে হবে। আজ সোমবার ইটিভি অনলাইনের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। নিচে, সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইটিভি অনলাইনের প্রতিবেদক মোহাম্মদ জুয়েল।

ইটিভি অনলাইন: শুরুতেই বেসিসের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায়, ইটিভির পক্ষ থেকে আপনাকে অভিনন্দন। দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের জায়ান্ট বলা চলে বেসিসকে। সেখান থেকে দেশে তথ্য প্রযুক্তি খাতে বেসিস কি ধরণের ভূমিকা রাখছে?

সৈয়দ আলমাস কবির: ধন্যবাদ, ইটিভি অনলাইনকে। দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের সম্প্রসারণে বেসিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে, বেসিসের প্রতিটি সদস্যের নিরাপত্তা প্রদান ও সহযোগিতার মাধ্যমে বেসিস এগিয়ে যাচ্ছে। এর প্রতিটি সদস্যই বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছে। পাশাপাশি প্রতিটি সদস্যই দেশের তরুণদের স্বল্প খরচে প্রশিক্ষণ দিয়ে বর্তমান শ্রম বাজারের যুগোপযোগী করে তুলছে। এতে হাজার হাজার প্রশিক্ষিত দক্ষ তরুণ দেশের শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারের সহযোগিতায় বেসিস ২৩ হাজার তরুণকে প্রশিক্ষণের জন্য বাঁছাই করেছিল, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজার তরুণকে এসইআইপি প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বাকিদের এ বছরই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

ইটিভি অনলাইন:দেশে প্রায় ২৬ লাখ তরুণ রয়েছেন, যারা কর্মক্ষম কিন্তু বেকার জীবনযাপন করছেন। এই সংখ্যাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়?

সৈয়দ আলমাস কবির: দেখুন শুরুতেই বলতে হচ্ছে, তারা কেন বেকার জীবন-যাপন করছেন। তাঁদের বড় একটি অংশ পড়ালেখা শেষ করে বিভিন্ন চাকরির পেছনে দৌঁড়াচ্ছেন। চাকরির বয়সসীমা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই দৌড় চলতে থাকে। কিন্তু তাঁরা যদি শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি দক্ষ হয়ে বেরোতেন, তাহলে কি তাঁদের ৫ বছর পর্যন্ত অপেক্ষ করতে হতো? হতো না। তাই বর্তমান বেকারত্ব হ্রাসে প্রযুক্তি খাত বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে তাঁদের দক্ষ করে তুলতে পারলে এ বেকারত্বের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। আগামী বছর আরও বেশি পরিমাণ শিক্ষার্থীকে বেসিস প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

ইটিভি অনলাইন: শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন বলতে কি বোঝাচ্ছেন? আর আমাদের এ শিক্ষাব্যবস্থায় কিভাবে পরিবর্তন আনা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন।

সৈয়দ আলমাস কবির: আমাদের প্রথাগত শিক্ষা দিয়ে দক্ষ ও উন্নত জনশক্তি তৈরি করা সম্ভব না, এটা ইতোমধ্যে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বুঝতে পেরে শিক্ষা ব্যবস্থায় কর্মমূখী শিক্ষাকে যোগ করেছেন। তবে শুধু শেখালেই হবে না, তাঁদের দক্ষ করে তুলতে হলে প্র্যাকটিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে শিক্ষার্থীদের।ইতোমধ্যে আমরা ইউজিসির সঙ্গে বসেছি। স্নাতক পর্যায়ে কিভাবে অন্তত দুয়েকটি ক্রেডিটে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়টি যোগ করা যায়, সে বিষয়ে কথা বলেছি। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের বেসিসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে এটা করা হচ্ছে, এরপরই ইউজিসি অনুমোদন দিলে আমরা দেশব্যপী স্নাতক পর্যায়ে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করবো। আর এটা কেবল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এসব শিক্ষার্থীদের টানা ১ থেকে তিন মাস পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দিতে পারলে তারা মোটামুটি দক্ষ জনশক্তি হয়ে গড়ে ওঠবে। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন চুকিয়ে তাঁরা সরাসরি কর্মে প্রবেশ করতে পারবেন। আর বছরের পর বছর তাদের অপেক্ষা করতে হবে না।

ইটিভি অনলাইন: বেসিসসহ এর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো কোন শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে?

সৈয়দ আলমাস কবির: স্বল্প শিক্ষিতরাও প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। তবে বিশেষ করে স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থীরা এখানে কাজের সুযোগ বেশি পাবেন। এখানে কেবল টেকনিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষিতরাই প্রশিক্ষণ নিবে এমন নয়, আগ্রহী সবাই প্রশিক্ষণ নিতে পারবে। বিশেষ করে নারীরা এসব প্রশিক্ষণ নিয়ে ঘরে বসেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে আউটসোর্সিং বা সফটওয়্যার তৈরির মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা অর্জন করতে পারবেন।

ইটিভি অনলাইন: বর্তমানে দেশে কতজন এ পেশার সঙ্গে যুক্ত আছেন? আর আমাদের অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান কেমন?

সৈয়দ আলমাস কবির: বর্তমানে ঠিক কতজন এ পেশায় যুক্ত রয়েছেন, সে বিষয়টি পূর্ণাঙ্গভাবে জানার জন্য আমরা ইতোমধ্যে বাজার গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, এ পেশার সঙ্গে অন্তত ৩ লাখ লোক জড়িত আছেন। যাদের মাসিক আয় ১ হাজার ডলার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত। আর এ খাতের বর্তমান আয় প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। দেশের তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগাতে পারলে রফতানি খাতে এটি দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসবে।

ইটিভি অনলাইন: দেশের ব্রডব্যান্ড সেবা নিয়ে বলুন?

সৈয়দ আলমাস কবির: দেখুন, দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা একেবারেই কম। দেশে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করছে ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ। যেখানে, ব্রডব্যান্ড সেবা পাচ্ছে ৫ শতাংশ মানুষেরও কম। তাই তথ্য-প্রযুক্তি খাতে অবদান রাখতে গেলে অবশ্যই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছে দিতে হবে। বর্তমান সরকার ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ সেবা পৌঁছে দিত সক্ষম হয়েছে। তবে প্রান্তীক পর্যায়ে এখনো পৌঁছে দিতে পারছে না।

এদিকে ব্রডব্যান্ড কাচামালের কর আরোপ বিষয়ে তিনি বলেণ, সরকার প্রচুর পরিমাণ করের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে এ খাতে। প্রয়োজনীয় কাচামালের ওপর সরকার যে ভ্যাট আরোপ করেছে, সেটা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম বাধা বলে মন্তব্য করেন তিনি।তবে সম্প্রতি সরকার এ খাতে একটি বোনাস সুবিধা ঘোষণা করেছেন। যা এ খাতকে আরও বহুদুর নিয়ে যাবে বলে মত দেন তিনি।

এদিকে তথ্য-প্রযুক্তির এ সম্ভাবনার খাতটি থেকে সব ধরণের বাধা দূরীকরণে সরকারকে অবশ্যেই আগামী বাজেটের আগে ভ্যাটের পরিমাণ কমাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শিক্ষায় ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের দিকে যেতে হলে আগামী বাজেটেই এর নীতি প্রণয়ন করে তা সংসদে পাশ করার দাবি জানান তিনি।

ইটিভি অনলাইন: আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ !

সৈয়দ আলমাস কবির: একুশে টেলিভিশনকেও ধন্যবাদ!

এমজে/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি