শিক্ষাকার্যক্রম গতিশীল করতে সারাদেশ ওয়াই-ফাই এর আওতায় আনতে হবে
প্রকাশিত : ২৩:০০, ৫ জানুয়ারি ২০২১ | আপডেট: ২৩:০২, ৫ জানুয়ারি ২০২১
অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম
করোনা আমাদের জন্য অভিশাপ হলেও করোনা নতুন করে আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। গতানুগতিক যে ধারায় আমরা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছি তা যে পুরোপুরি সাফল্যের পাখা মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে তা আমরা এই করোনাকালে সকলেই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।
যেকোন পরিস্থিতিতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে গতিশীল রাখতে এবং আধুনিক এই বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সারাদেশকে ওয়াই-ফাই/ইন্টারনেট সংযোগ এর আওতায় নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম।
করোনা পরবর্তী শিক্ষা ব্যবস্থা ও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের বাস্তবতা ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোঃ আব্দুল মান্নান-
করোনার পরবর্তী শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেমন পরিবর্তন আসতে পারে বলে আপনার মনে হয়?
সারাবিশ্ব আজ করোনা মহামারীতে আক্রান্ত। বাংলাদেশেও এই করোনার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে অন্যান্য সেক্টরগুলো চলমান থাকলেও শিক্ষা ও গবেষণা খাত গুলো থমকে আছে। গত মার্চ মাস থেকেই শিক্ষার্থী শুণ্য হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও গবেষণা ল্যাব গুলো। যদি করোনাকাল দীর্ঘকাল ব্যাপী চলমান থাকে তাহলে সময়ের সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে, সেই সাথে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইন ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করতে হবে। এছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই। তাই ডিজিটাল এই সময়ে সবাইকে আরও বেশি ডিজিটালাইজড হতে হবে।
অনলাইন শিক্ষা ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যে কোন তফাৎ আছে কি’না?
করোনার কারণে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যাহত হয়েছে সত্য তবে নতুন অনেক কিছু করারও সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এর কারণে আমরা অনলাইন জগতে প্রবেশ করতে শিখেছি। আজ থেকে ২৫ বছর পূর্বে আমি ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে ক্লাস নেয়ার বিষয়ে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় একটি কলাম লিখেছিলাম যার প্রতিফল এখন দেখতে পারছি। আগামী বছর ডিজিটাল বাংলাদেশ উদযাপন করতে যাচ্ছি কিন্তু এখনো আমরা অনলাইন মাধ্যমে ক্লাস-পরীক্ষা নিতে ইতস্তবোধ করছি। অথচ; বিশ্ববিদ্যালয় গুলো চাইলে ডিজিটাল অবকাঠামো করার উদ্যোগ নিতে পারতো। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে আমাদের কে শিক্ষা নিতে হবে। পরিস্থিতি সব সময় যে স্বাভাবিক থাকবে এই রকম ধ্যান ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এইজন্য এখনি সারাদেশেকে ওয়াই-ফাই এর আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে নেটওয়ার্কিং যে সমস্যার গুলো আমরা মুখোমুখি হয়েছি তা অনেকাংশেই কমে যাবে।
অনলাইনে ক্লাস হলেও হচ্ছে না অনলাইনে পরীক্ষা; বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
আমেরিকা, ইউরোপিয়ান কান্ট্রিসহ বিশ্বের বহু খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক আগে থেকেই পূর্ণাঙ্গ অনলাইন ব্যবস্থা সফলতার সঙ্গে ব্যবহার করে আসছে। বাংলাদেশেও অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়ার অধিকাংশ কার্যক্রম অনলাইনে করে থাকে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা খুব কম থাকলেও করোনার কারণে তা আয়ত্ব করতে হয়েছে। বর্তমানে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম-বেশি অনলাইন পাঠদান চলছে। অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করতে পারলে দীর্ঘ এই সময়টা শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হতো না। ফলে শিক্ষা কার্যক্রমে যেমন গতিশীলতা বাড়তো তেমনি সৃজনশীলতাও বাড়তো। পাশাপাশি সরকারকে সারাদেশে ইন্টারনেট/ওয়াই-ফাই সংযোগ চালুর উদ্যোগ নিতে হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত এবং বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর র্যাংকিং বাড়াতে কি করণীয় আছে বলে আপনি মনে করেন?
একটি বিশ্ববিদ্যালয় মূল কাজ গবেষণা করা। মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান সৃজন করা। আমাদের সোসাইটি কি চায় সেটার প্রেক্ষিতে মূল বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে হবে এবং আমাদের উদ্ভাবিত সেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে তা নাহলে সেই প্রযুক্তি বা জ্ঞানের কোন মূল্য থাকবে না। যারা কাজ করবে তাদেরকে মুল্যায়ন করতে হবে তাঁদের কে লিডারশীপে নিয়ে আসতে হবে। তাহলে যারা এই লাইনে কাজ করেন তাঁরা আরও বেশি নিজের কাজের প্রতি, দায়িত্বের প্রতি মননশীল হতে পারবে। আমি মনে করি আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে সেই সামর্থ্য রয়েছে। যারা দেশের বাহিরে বিভিন্ন নামকরা সংস্থায় গবেষণা করে তাদেরকে নিয়ে আসতে হবে এবং প্রয়োজনে ওয়ান থাউসেন্ড ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে।
এসি
আরও পড়ুন