ঢাকা, বুধবার   ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

শিশুদের রোজা রাখা উচিৎ কি?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:০৭, ১৫ মে ২০১৮ | আপডেট: ০৯:৫৮, ১০ জুন ২০১৮

চাঁদ দেখা গেলে বুধবার থেকে রোজা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সারা বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান রোজা পালন করেন। এ সময় সূর্য ওঠার আগে থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরণের পানাহার বন্ধ থাকে। এ বছর ইউরোপে গ্রীষ্মকাল থাকায় দীর্ঘ দিন থাকবে। ফলে ইউরোপে প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে রোজা রাখতে হবে।

ইসলাম ধর্মে ১৪ বছর বা সাবালকত্ব হওয়ার পর থেকেই প্রত্যেকের জন্য রোজা রাখার নিয়ম রয়েছে। এর নীচের শিশুদের রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়। তবে জার্মান শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক পরিবারই শিশুদেরও রোজা রাখতে উৎসাহিত করে।

কিন্তু এ বছর রোজার সময় যেহেতু জার্মানির স্কুলগুলোয় গুরুত্বপূর্ণ সময়, তাই খাবার না খেলে বা পর্যাপ্ত পানির অভাব থাকলে তা পড়াশোনার ফলাফলে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

``রোজার সময় আমরা সবসময়েই দুর্বল আর অমনোযোগী শিশু দেখে আসছি," একটি বিবৃতিতে বলছেন জার্মান চিকিৎসকরা। এই শিশুদের অনেকেই স্কুলে আসার মাথাব্যথা আর পেটব্যথা ভোগে বলেও তারা জানিয়েছেন।
শিশুরা বলছে, রোজা রাখার সময় অনেক দিন তাদের একটু কষ্ট লাগে
তবে শুধু চিকিৎসকরাই এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন নন। জার্মান শিক্ষক সমিতি বেশ কয়েকবার সতর্ক করে দিয়েছে যে, রমযানে রোজা রাখার কারণে মুসলিম শিশুগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

তবে শিশুদের রোজা রাখতে না দেওয়ার কোন আইনি বাধ্যবাধকতা নেই ইউরোপের দেশগুলোয়।

জার্মানির সংস্কৃতি, যুব আর ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী সুসানে আইজেনমান বলেছেন, ``এমনকি তরুণ মুসলিমদেরও রমজানের সময় রোজা রাখার স্বাধীনতা রয়েছে।``

কিন্তু তিনি বলছেন, শিশুদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি অভিভাবকদেরই দেখার দায়িত্ব, বিশেষ করে যারা স্কুলের শুরুর দিকে রয়েছে।

``তাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, তাদের শিশু সন্তানরা স্বাস্থ্যকরভাবে রমজান পালন করতে পারে, যাতে স্কুলে তাদের কর্মকাণ্ড আর মনোযোগের ক্ষমতা ব্যাহত না হয়।`` তিনি পরামর্শ দিয়েছেন।

অতীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শিশুদের রোজা রাখা থেকে বিরত করার চেষ্টা করেছে। ২০১৫ সালে লন্ডনের একটি প্রাথমিক স্কুল রমজানে শিশুদের রোজা রাখা নিষিদ্ধ করেছিল, যাকে বোকার কাজ বলে বর্ণনা করেছিলেন একজন মুসলিম নেতা।

তবে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা দফতর বলেছেন, রোজা রাখা শিশুদের জন্য ক্ষতিকর নয়।

তবে সাত বা আট বছরের নীচের শিশুদের রোজা রাখার প্রসঙ্গে তারা বলেছে, রোজা রাখতে হলে কি করতে হবে, সেটা শিশুদের শেখানো এবং প্রথমদিকে কয়েক ঘণ্টা করে রোজা রাখার অভ্যাস করা ভালো হবে।

ইসলামে পাঁচটি ফরজ বা বাধ্যতামূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রোজা একটি। সব প্রাপ্তবয়স্ক নারীপুরুষের জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক, যখন পানাহার, ধূমপান ব যৌনতার মতো সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ।

তবে শিশুদের জন্য রোজা বাধ্যতামূলক নয়। এছাড়া যারা অসুস্থ, ভ্রমণে রয়েছেন, বয়স্ক, গর্ভবতী, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, ডায়াবেটিসে ভোগছেন তাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।

তারা বছরের অন্য যেকোনো সময় এই ত্রিশ দিনের রোজা রাখতে পারেন অথবা খাবার বা টাকার বিনিময়ে জরিমানা দিতে পারেন।

একসময়ের শিশু রোজাদাররা কী ভাবেন?

শ্রীলঙ্কায় বড় হওয়া রিয়াজ ইজাদ্দেন সাত বছর বয়সে রোজা শুরু করেন। তিনি বলছেন, রোজার সময় পরিবার আর বন্ধুদের তুলনায় বিচ্ছিন্ন থাকতে চাননি।

সাত বছর বয়সের সময় আমরা পুরো মাস রোজা থাকতাম না। হয়তো আমরা সপ্তাহে একদিন রোজা থেকেছি। কিন্তু স্কুল খোলা থাকলে আমাকে রোজা ভেঙ্গে ফেলার অনুমতি দেওয়া হতো।

রোজার দিনে আলাদা কিছু মনে হয়নি। আমরা বাইরে খেলতে যেতাম, সাইকেল চালাতাম বা অন্য খেলাধুলা করতাম।

অবশ্যই খুব ক্ষুধা লাগতো বা পানির পিপাসা হতো। তখন আমরা অপেক্ষা করতাম কখন সন্ধ্যা হবে। কিন্তু তাই বলে আমরা শারীরিকভাবে কোন সমস্যায় পড়তাম না।

ইজাদ্দেনের এখন সাত বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তিনি তাকে রোজা রাখার জন্য বাধ্য করবেন না। তবে সে যদি রোজা রাখতে চায়, তাকে নাও বলবেন না।

তথ্যসূত্র: বিবিসি।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি