ঢাকা, শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

শুভ জন্মদিন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১৮, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

একসময় ছিলেন বেতার, মঞ্চ, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রের দাপুটে অভিনেতা। যাত্রাটা নেহাৎ কম নয়; শক্তিশালী অভিনয়ের দ্যুতি ছড়িয়েছেন দশকের পর দশক। তার ভরাট কণ্ঠের সংলাপে বুঁদ হয়েছেন দর্শক। সময়ের সাথে সাথে পরিচয়ের গণ্ডি অভিনয় থেকে বিস্তৃত হয়েছে আবৃত্তিকার, সংগঠক, অনুসন্ধানী পাঠক ও লেখক হিসেবেও।

এমন বহুগুণের মানুষ পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ তার জন্মদিন। ১৯৫০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর শহরে জন্ম নেওয়া মানুষটি পা রাখলেন ৭৩ এ।  

তার শিক্ষাজীবন শুরু গোপালগঞ্জের এসএম মডেল স্কুলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করে ১৯৮৫ সাল থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। সেটা আর ছাড়তে পারেননি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়মিত কলাম লিখছেন এখনও।

যে ক্ষেত্রটি তাকে সবচেয়ে বেশি পরিচিত করেছে মানুষের, সেই অভিনয়ের শুরু গত শতকের আশির দশকে। সে সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত দর্শকনন্দিত ধারাবাহিক ‘সকাল-সন্ধ্যা’ নাটকে অভিনয় করে পেয়েছিলেন আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা।

টেলিভিশন তাকে জনপ্রিয়তা এনে দিলেও মঞ্চই ছিল তার অভিনয়ের মূল পীঠস্থান। ঢাকা থিয়েটারের দর্শকপ্রিয় ‘কীর্তনখোলা’, ‘প্রাচ্য’, ‘বনপাংশুল’, ‘শকুন্তলা’ ও ‘বাসন’সহ অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন।

নাটকের বাইরে চলচ্চিত্রেও সফল এই অভিনেতা। ১৯৮৪ সালে খ্যাতিমান নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামের পরিচালনায় ‘আগামী’ নামের স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয়। এরপর ‘একাত্তরের যিশু’, ‘মহামিলন’, ‘উত্তরের খেপ’, ‘কিত্তনখোলা’, ‘মেঘলা আকাশ’, ‘আধিয়ার’, ‘আমার আছে জল’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, ‘গেরিলা’, ‘মৃত্তিকা মায়া’ ও ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ ইত্যাদি সিনেমায় দর্শক উপভোগ করেছে তার অসাধারণ অভিনয়শৈলী। 

বিশেষ করে ‘কিত্তনখোলা’য় তার ইদু কনট্রাক্টরের চরিত্রটি দাগ কেটেছিল দর্শকদের হৃদয়ে। এছাড়া ‘গেরিলা’র মতো সফল সিনেমায় তার অভিনয় অনেকদিন মনে রাখবে দর্শক।

তার অভিনয় জীবনের এক বিশেষ অধ্যায় হলো ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ নাটক। প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গে থেকে নাটকটি নির্মাণ ও প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। নাটকটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের চিহ্নিত ও মুখোশ উন্মোচন করা হয়। নাটকটি লন্ডন ও নিউ ইয়র্কে একাধিকবার মঞ্চায়িত করা হয়।

সাংবাদিকতার ছাত্র ছিলেন, তাই এই ক্ষেত্রেও পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় সফলতা স্বাক্ষর রাখতে পেরেছেন অবলীলায়। নব্বইয়ের দশকে দৈনিক লালসবুজ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন।

মৌলিক সাহিত্য, গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, ছড়া এবং সম্পাদনাসহ ১৬টি প্রকাশিত গ্রন্থও রয়েছে তার।

তার সাংগঠনিক দক্ষতার কথা না বলেই নয়। পিয়ংইয়ং ও উত্তর কোরিয়ায় বিশ্বছাত্র-যুব সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবেও যোগ দিয়েছিলেন। এই সম্মেলনে ১৭৫টি দেশের ২৫ লাখ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। অংশ নিয়েছেন নিউ ইয়র্কে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিনিধি হিসেবে।

এছাড়া একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ফোবানা সম্মেলন, বার্লিনে আন্তর্জাতিক লোক উৎসব, কলকাতায় আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব এবং কায়রোতে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাকালীন স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এবং ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ শাখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের অন্যতম এই প্রতিষ্ঠাতা একসময় সংগঠনটির নির্বাহী সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।

এই সাংগঠনিক দক্ষতার কারণেই সরকার তাকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বও দিয়েছিল।

এর বাইরে ষাটের দশকের শেষের দিকে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি হিসেবে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। সেই সূত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরাসরি সাহচর্যে আসেন।

নাট্যজন ও ক্রীড়ানুরাগী হিসেবে শেখ কামালের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন তিনি। ১৯৮৫ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ যুবঐক্যের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং যুবসংগ্রাম পরিষদের নেতা হিসেবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক অবদান রাখেন। বাংলাদেশের সব যুব সংগঠন নিয়ে যুবসংগ্রাম পরিষদ গঠনে তার অনন্য ভূমিকা ছিল।

পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের সময় খেলার মাঠ থেকে সরাসরি তথ্য নিয়ে প্রতিদিন জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় কলামও লিখেছেন।

বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখতে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় গড়ে তুলেছেন ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ নামের একটি অনবদ্য অরাজনৈতিক সংগঠন।

তার এই দীর্ঘ চলার পথে নানা বাধাও এসেছে। সাম্প্রদায়িক শক্তির কোপানলে পড়েছেন বহুবার। নানা সময়ে লন্ডন, নিউ ইয়র্ক ও ঢাকায় একাধিকবার তার জীবননাশের চেষ্টাও করা হয়। তবুও থেমে নেই তার এই পথচলা। 

এসবি/ 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি