ঢাকা, রবিবার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৪

শুভ জন্মদিন মান্না দে

অজয় দাশগুপ্ত

প্রকাশিত : ১৬:০১, ১ মে ২০২৪ | আপডেট: ১৭:০৮, ১ মে ২০২৪

কোনদিন ভাবতে পারিনি তাঁর সাথে এক অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে থাকতে পারবো। এই সৌভাগ্য যে আমার হয়েছিল তা এখনও স্বপ্নের মতো মনে হয় আমার। তাঁর গানের সাথে পরিচয় ঘটেছিল শৈশবে। যেমনটা সব বাঙালিরই কমবেশি হয়ে থাকে। 

পাড়ার পূজা প্যান্ডেলের মাইকে ভেসে আসা ‘ক’ফোঁটা চোখের জল ফেলেছো যে তুমি ভালোবাসবে?’ একটু বড় হতে হতে মাইকে বাজার পাশাপাশি হৃদয়ে বাজতে শুরু করেছিল। মহাসিন্ধুর ওপার হতে কী সঙ্গীত ভেসে আসে....।


আমাদের বন্ধু পূর্বকোণের সাংবাদিক চলচ্চিত্র প্রেমিক ও নির্মাতা আনোয়ার হোসেন পিন্টু। আমরা এক স্কুলের ছাত্র। পিন্টু স্কুলের স্টেজে উঠলেই সবাই নড়ে চড়ে বসতো। খালি গলায় ‘এই কুলে আমি আর ঐ কুলে তুমি গেয়ে মন ভাসিয়ে দিতে পারতো ও।’

যৌবনের শুরুতে নাট্যব্যক্তিত্ব মিলন চৌধুরী ছিলেন আমাদের গুরুতুল্য। মিলন দা খুব ভালো গাইতে পারতেন। আমাকে তিনিই শিখিয়েছিলেন যদি বলি ‘আমি কি হেরেছি তুমি ও কি একটুও হারোনি’ গানটির মর্মার্থ। বুঝতে শিখি , একি অপূর্ব প্রেম দিলে বিধাতা আমায় ...।

এভাবে কোটি বাঙালি উপমহাদেশের কোটি মানুষের নজর কেড়ে নেয়া কিংবদন্তী গায়কের সাথে স্টেজ শেয়ার করা? 

সে সুযোগও পেয়েছিলাম ২০০০ সালে। আশি বছর বয়সে মা্ন্না দে এসেছিলেন সিডনিতে। সবাই ধরে নিয়েছিল তাঁরা যতোটা গান শুনতে যাবেন তার চাইতে বেশি এক কিংবদন্তিকে দেখতে। কিন্তু মান্না দে তো মান্না দে। সে সন্ধ্যায় চব্বিশ-পঁচিশটি গান গেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন তিনি।

প্রথম দেখার গল্পটা বলি। পূজা ও সংস্কৃতি সংগঠনের উদ্যেক্তরা যখন এই সঙ্গীত অনুষ্ঠান উপস্থাপনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন আমি যুগপৎ বিস্মিত আর ভয়ার্ত ছিলাম। বিস্ময় এই কারণে এতোবড় উপমহাদেশ তথা দুনিয়া জাগানো শিল্পীকে উপস্থাপনার সুযোগ? ভয় পেয়েছিলাম তাঁর ব্যক্তিত্ব আর মেজাজ বিষয়ে ধারণা ছিল বলে। এক অপরাহ্নে প্রথম দেখার সময় তিনি মনযোগ দিয়ে কি যেন শুনছিলেন। আধোশোয়া, মাথার কাছে চায়ের কাপ আর সিঙ্গারা।  প্রচুর সিঙ্গারা ভক্ত মান্না দে পরে তাঁর অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকেও তরল পানীয়ের সাথে সিঙ্গারা আর চা পান করছিলেন। 

আমার দিকে তাকানোর কোন চিহ্ন না থাকায় হতাশ হচ্ছিলাম। হঠাৎ চোখ তুলে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে জানতে চেয়েছিলেন কি বলবো আমি বা কি কি বলতে চাই সে সন্ধ্যায়? আমার তখন অবস্থা খারাপ। সব গুলিয়ে যাচ্ছিল। আমি চোখের দিকে তাকিয়েই বললাম আপনার সম্পর্কে বলার ধৃষ্টতা নাই আমার। আর সবাই আসবেন গান শুনতে আমি কেবল আপনাকে স্টেজে নিয়ে যাবার কথা বলব আর রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আপনাকে বরণ করে নেব। মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে বলেছিলেন, ছোকরাকে দিয়ে হবে। মান্না দে’র এই ছোকরার বয়স কিন্তু তখন চল্লিশ। 

সে সন্ধ্যায় আমি বলেছিলাম, মোর সন্ধ্যায় তুমি সুন্দর বেশে এসেছ তোমায় করি গো নমস্কার। তাতেই খুশী কিংবদন্তী। তবে বড় মেজাজী আর মুডি। সবচাইতে বড় কথা সে বয়সেও একেকটি গান খুলে দিয়েছিল এক একটি স্মৃতির দুয়ার। হয়তো তোমারই জন্য হয়েছি প্রেমে যে বন্য থেকে, কফি হাউসের সেই আড্ডাটার সুরের স্রোতে ভাসা সিডনি তাঁকে পেয়েছিল জীবনের শেষবেলায়। 

আজকের দিনটি যখন মে-ডে হিসেবে পালন করা হয় তখন শুধু বলিউডে এই দিনটিকে বলা হয় মান্না ডে। মান্না দে’র জন্মদিনটিকে এভাবেই স্মরণীয় করে রাখে তাঁরা। যতোদিন বাঙালি যতোদিন বাংলা গান ততো দিন মান্না দে, ততো দিন আমাদের অন্তরে বাজবে, ‘যদি কাগজে লেখো নাম কাগজ ছিঁড়ে যাবে, পাথরে লেখো নাম পাথর ক্ষয়ে যাবে হৃদয়ে লেখো নাম সে নাম রয়ে যাবে।’

আপনার নাম চিরকাল রয়ে যাবে। শুভ জন্মদিন মান্না দে। 

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি