শূন্য থেকেই স্বপ্ন জয়ের গল্প
প্রকাশিত : ২১:১১, ১ আগস্ট ২০২১ | আপডেট: ২১:১৪, ১ আগস্ট ২০২১
৩৫ তম বিসিএস এর শিক্ষা ক্যাডার মো.রোকনুজ্জামান রোকন।
ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম শুধু ঢাকা দেখবো বলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবো জীবনে কখনো ভাবিনি। ভাগ্যক্রমে চান্স পেয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু ভর্তি হওয়ার মতো অবস্থা আমার ছিলো না। আশ-পাশের পরিবেশের কারণে আমার জব তো দূরে থাক পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার উপযোগী-ই ছিলো না। এভাবেই নিজের সংগ্রামী জীবনের গল্প বলছিলেন ৩৫ তম বিসিএস এর শিক্ষা ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত মো.রোকনুজ্জামান রোকন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে বর্তমানে তিনি নাটোরের সরকারি রাণী ভবানী মহিলা কলেজের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। একুশে টেলিভিশনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে বিসিএস পরীক্ষার খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। তাঁর জীবনের গল্প ও বিসিএস পরীক্ষা নানা বিষয় তুলে ধরেছেন মো.রোকনুজ্জামান মনি।
নিজের বিসিএস জার্নির গল্প বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বিসিএস ক্যাডার হব এটা কোনদিন মাথায় আসত না! ইচ্ছা ছিলো ইন্টারন্যাশনাল কোনো এনজিও তে জব করবো। ডিপার্টমেন্টের রেজাল্ট ভালো থাকায় আশাবাদীও ছিলাম কিন্তু মাস্টার্সের রেজাল্ট লটারি মেথডে খারাপ হয়ে যায়। তখন থেকে এনজিও জবের ব্যাপারটা আস্তে আস্তে সরতে থাকে। ৩৪ বিসিএসের ফাইনাল রেজাল্টের পর হলের পাশের রুমগুলো থেকে কত কত ক্যাডারের চিল্লানি শুনতে পাই। জুনিয়ররাও মজা করছে! কিন্তু আমার মনটা কেনো জানি খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম ক্যাডার হতে হবে। তখন থেকেই প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করলাম।
মো.রোকনুজ্জামান বলেন, ৩৫ তম বিসিএস দিলাম কিন্ত দুর্ভাগ্যক্রমে ম্যাথ খুব খারাপ হয়ে যায়। যার ফল এখন ভোগ করছি। পরবর্তীতে আর ভালো প্রিপারেশন নিতেও পারিনি এবং সাদিক স্যারের ওয়ান ম্যান ওয়ান জবের থিওরীতে হয়ত আর ক্যাডার চেঞ্জ করা সম্ভব হয়নি। তবে বয়স শেষ হওয়া পর্যন্ত যতগুলো বিসিএস পেয়েছি, সবগুলো বিসিএসের ভাইভা দেয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে!
নিজের সেই দুর্ভিষহ দিনে কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমার কোনো গল্প কখনো কাউকে বলা হয়নি। বলার সময়ও হয়ত হয়নি। তবে অনেক গল্প জমা হয়ে আছে। আমার পার্শ্ববর্তী পরিবেশ আমার জব তো দূরে থাক আমার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার উপযোগী ছিলো না। এডমিশন দিতে এসেছিলাম শুধু ঢাকা দেখব বলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারব জীবনে কোনদিন ভাবিনি। ভাগ্যক্রমে চান্স পেয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু ভর্তি হওয়ার মত অবস্থা আমার ছিলো না। আসলে আমার গল্পগুলো অনেক লম্বা, অন্য কোনো দিন বলবো।
বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে বিশেষ একটি স্মৃতি বলতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, ম্যাথ পরিক্ষার চেয়ে বিশেষ স্মৃতি আর কি থাকতে পারে! যেখানে ভেবেছি ৪৫ আমাকে রাখতেই হবে, প্রশ্ন পাওয়ার পর দেখি ৩০ এর বেশি উত্তর করতে পারিনা। দেখেই মাথা ঘেমে, শরীর ঘেমে একাকার। প্রথম ম্যাথে ভুল, ২য় টাতেও ভুল। এভাবেই ২ ঘন্টা পর মনে হলো সব শেষ। বের হয়ে শুনি সবারই একই অবস্থা। যতগুলো পারতাম ততগুলোও যদি মাথা ঠান্ডা করে উত্তর দিতাম তাহলেও হয়ত রেজাল্টের হিসাব ভিন্ন ভাবে হত। আমি ম্যাথে পাশ না করেও শিক্ষায় আমার সাব্জেক্টে প্রথম হয়েছিলাম। সুতরাং পাশ করলেও হয়ত রেজাল্ট ভিন্ন হত। সবকিছুর পরেও নিজের বর্তমান কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চটাই দেওয়া চেষ্টা করেন বলছিলেন রোকন। ইচ্ছা ছিলো ফরেন সার্ভিসে যাওয়ার কিন্তু তা হয়ে উঠেনি তবে বর্তমান কর্মক্ষেত্রে নিজের জায়গা থেকে আমি সর্বোচ্চটাই দেয়ার চেষ্টা করি, তবে বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষকতা পেশার অবস্থা বড়ই নাজুক।
বিসিএস কিংবা যেকোনো চাকরির প্রত্যাশীরা যে ধরণের সমস্যা ফেইস করে তা মোকাবেলার উপায় নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, যাদের বেসিক ভালো থাকে তাদের জব পেতে বেশি কাঠখড় পোড়াতে হয়না। নিজেকে বিশ্লেষণ করে করে পড়া উচিত। সবার জন্য পড়া একরকম না। আমিতো ১ ঘন্টা পড়তাম আর ২ঘন্টা মুভি দেখতাম! একজন কতক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারবে সে অনুযায়ী তার রুটিন করা উচিত। মনোযোগ না থাকলে ২৪ ঘন্টা বইয়ের সামনে পড়ে থাকলেও লাভ নাই!
নিজেকে বিশ্লেষণ করে পড়তে হবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, নিজের কাছে কি আছে কি নেই, সেটা আগে জানা জরুরি। সে অনুযায়ী রুটিন প্রস্তুত করতে হবে। রুটিন হবে অবশ্যই নিজের অভ্যাস, ইচ্ছা ও চাহিদা অনুযায়ী। যাদের বেসিক দুর্বল তাদের আগে বেসিক শক্ত করতে হবে। যাদের বেসিক ভালো তাদেরও অন্তত আই ভিউ করতে হবে। নিয়মিত এবং রুটিন মাফিক পড়াশুনা করা বিসিএসের প্রথম শর্ত। বিসিএস দিলে ভালো প্রিপারেশন নিয়ে দেওয়াই ভালো, না হলে অযথা টুকটাক কিংবা ডাইজেস্ট মার্কা প্রিপারেশনে বিসিএস না দেওয়াই ভালো।
বিসিএস জার্নিতে বেশ একটা লম্বা সময় কেটে যায়, সেই সাথে পারিপার্শ্বিক চাপও থাকে, এই সময়ে নিজের মনযোগ ধরে রাখা কঠিন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মো.রোকনুজ্জামান রোকন জানান, একটা চাপ অনুভুত হয় এটা শতভাগ সত্যি। হাসতে হাসতে বলেন, হলে থাকার সময় আমি আর আমার বেডমেট রাতে ঘুমানোর সময় নারিকেল তেল মাথায় দিয়ে ঘুমাতাম যাতে মাথা ঠান্ডা থাকে। আমার রুমমেটও ৩৫ এর শিক্ষা ক্যাডার। নিজের প্রতি বিশ্বাস ধরে রাখাটাও জরুরি, ফ্যামিলির প্রতি দায়ত্ববোধ মানুষকে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করতে সাহায্য করে।
যারা একই সঙ্গে চাকরি ও চাকরির পড়াশোনা করতে চান তাদের উদ্দ্যেশে তিনি বলেন, আমার অভিজ্ঞতা একই। একসাথে দুইটা কাজ চালানো আমার জন্য কঠিন। কারণ দুইটা কাজ একসাথে চালালে একটাতে অবশ্যই ফাঁকি দিতে হবে যা আমি করতে পারিনা। বর্তমান পেশায় ফাঁকি দিতে পারিনা বলে আমার মত মানুষের জন্য সত্যি-ই জব থাকা অবস্থায় প্রিপারেশন নেওয়া কঠিন।
ভাইভা ভীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কয়েক বছরের ভাইভা অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে এই শিক্ষক বলেন, ভাইভা আসলেই একটা সাইকোলজিকাল গেইম। প্রথম ভাইভাতে আমারও ভয় কাজ করেছিলো। তবে পরেরগুলোতে ততটা ভয় ছিলো না। শেষ অর্থ্যাৎ ৪০তম ভাইভা ছিলো দুর্দান্ত। কারণ হারানোর আর কিছু বাকি ছিলোনা (কষ্ট নিয়ে- হা হা হা )। তবে সকলের জন্য শুভ কামনা রইলো।
এসি
আরও পড়ুন