ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

শেখ হাসিনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব

অরুণ কুমার গোস্বামী

প্রকাশিত : ১৭:২৩, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ | আপডেট: ০৮:৫৬, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

‘একটি জাতির জন্য যুবসমাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি চাই যুবকরা প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষ করে শিক্ষার ক্ষেত্রে উচ্চ মানের হোক। আমাদের যুবসমাজ আমাদের জন্য একটি বড় শক্তি এবং তারাই বাংলাদেশকে জাতিরপিতার স্বপ্নের একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে পারে।’ গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার এওয়ার্ড- ২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হচ্ছে এবং সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। . . . আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়া এবং তরুণরাই সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে, কারণ তারাই ২০৪১ সালের মূল স্থপতি।’ 

তিনি বলেন, ‘এই দেশটা এগিয়ে যাবে শত বাধা অতিক্রম করে। পৃথিবীর অনেক দেশ এখন বয়োবৃদ্ধদের দেশে পরিণত হয়েছে। আমরা সেটা হতে চাই না। কাজেই আমাদের এই যুব সমাজই পারবে সারা বাংলাদেশটাকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে।’ 

কিন্তু দেশের যুব সমাজকে এভাবে এগিয়ে নিতে হলে তাদের সামনে অনুসরণযোগ্য ব্যক্তিত্ব প্রয়োজন, যার জীবনাদর্শ অনুসরণ করে তারা এগিয়ে যেতে পারবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুযায়ী প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার জন্য বাংলাদেশের যুব সমাজের সামনে কোনও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব আছেন কী?  বর্তমানের স্বপ্ন ও ভবিষ্যতের বাস্তব উন্নত সমৃদ্ধ ও মনুষ্য বসবাস উপযোগী বাংলাদেশের জন্য প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশপ্রেম, সততা, মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষই বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন মানুষের সহজাত গুণ হচ্ছে দেশপ্রেম, সততা, বিনয় ও মানবিক মূল্যবোধ।

আর তাই এই আদর্শ ও চেতনার দ্বারা নিজেকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রজন্মের জন্য একজন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব থাকা অপরিহার্য। যার জীবন-যাপন ও কর্মকাণ্ড দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম দেশপ্রেম, সততা ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে। অনুসরণীয় এই ব্যক্তিত্ব ত্রুটিহীন না হলেও তার গুণাবলী, বৈশিষ্ট্য এবং কর্মকাণ্ড মানুষের কাছে অনুসরণীয় হবে। প্রসঙ্গক্রমে, এ ধরনের অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব বা রোল মডেলের বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী উল্লেখ করা যেতে পারে।

যেসব বৈশিষ্ট্য একজন ব্যক্তিকে অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বে বা ইংরেজিতে যাকে বলে ‘রোল মডেল’ এ পরিণত করে সেগুলো হচ্ছে আত্মবিশ্বাস ও নেতৃত্ব দেয়ার গুণাবলী; যিনি সৎ ও দেশপ্রেমিক; দেশ ও জাতির প্রতি যিনি অঙ্গীকারাবদ্ধ; বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি যার আপসহীন অঙ্গীকার; গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি যিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; যিনি সবার সাথে যোগাযোগ রাখেন ও নিরন্তর পরস্পরিক মিথস্ক্রিয় থাকেন; যিনি অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সহানুভূতিশীল ও উদ্বিগ্ন থাকেন; যিনি বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন এবং সুমার্জিত; যার মধ্যে বিনয় ও নম্রতা থাকে; নিজের কাজের বাইরেও যিনি দায়িত্ব পালন করে থাকেন এবং জীবন ও কর্মস্থলের চ্যালেঞ্জগুলোকে যিনি সততা ও দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করেন। 

উল্লিখিত গুণাবলীসম্পন্ন বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে সর্বাগ্রে যাঁর নাম আসে তিনি হচ্ছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তার দৈনন্দিন জীবন-যাপন, সকালে ঘুম থেকে ওঠা, নিজের কাজ নিজে করা, বিশেষ চাহিদা-সম্পন্ন শিশুদের সাথে ভিডিওকলে সাক্ষাৎ করা, বই পড়া, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, গরীব-দুঃখী অসহায় মানুষের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া, সৎভাবে চলা, দায়িত্ব সচেতন, আন্তরিক,  দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, দেশের উন্নয়নে যোগ্য নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতার প্রমাণ রাখা, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনা, সাহসিকতা ও দৃঢ়তা প্রভৃতি গুণাবলী খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রজন্মের জন্য অনুসরণযোগ্য। আর এসব কারণেই তিনি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। প্রসঙ্গক্রমে শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন ও কর্ম সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হচ্ছে। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার পাঁচ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠতম সন্তান শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবের বেশীরভাগ সময় শেখ হাসিনা তার নিজ জন্মস্থান গ্রামেই অতিবাহিত করেন। ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু যখন প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তখন তাদের পরিবার ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। ছাত্রজীবনে শেখ হাসিনা ১৯৬৬ সালের ৬-দফা আন্দোলনে এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। উল্লেখ্য, গণঅভ্যুত্থানের ফলেই জেনারেল আইয়ুব পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। শেখ হাসিনা ইডেন কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এছাড়া তিনি ইডেন ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।  তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন এবং রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ছিলেন। 

১৯৬৮ সালে তিনি খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই তাদের প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় জন্ম গ্রহণ করেন। তার দ্বিতীয় সন্তান সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পুরো পরিবারকে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শত্রæরা নিষ্ঠুরতমভাবে হত্যা করেছিল। তিনি ও তার ছোট বোন বিদেশ থাকার কারণে বেঁচে গিয়েছিলেন। 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হতে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বন-এ হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর বাসভবনেই অবস্থান করছিলেন। পরে, ১৯৭৫-এর ১৯ আগস্ট ভারতের সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুর জীবিত দুই কন্যা এবং তাদের পরিবারবর্গ দিল্লি পৌঁছান।
ভারতে বাধ্যতামূলক প্রবাস জীবন: পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ১৯ দিন পর তারা ভারত আসেন। প্রায় ছয় বছর তিনি ভারতে অবস্থান করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এসময় জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন। বাংলাদেশে একটি শত্রুভাবাপন্ন সরকার, বাবা, মা,  ভাই, ভ্রাতৃবধু, আত্মীয়স্বজন হারানো শোকে কাতর শেখ হাসিনা তখন জার্মানি থেকে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সহযোগিতায় দিল্লির লাজপত নগর-৩ এ ৫৬  নম্বর রিং রোডের বাসভবনে এবং পরে পান্ডারা মার্কেটের নিকট পান্ডারা রোডের বাসভবনে থাকতেন। এসময় তিনি, তার বোন শেখ রেহানা, স্বামী ওয়াজেদ মিয়া, দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দিল্লিতে থাকতেন। 

আওয়ামী লীগ প্রধান নির্বাচিত: ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে পার্টির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এর তিন মাস পরে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি সরাসরি দিল্লি থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্র্তি হয়েছিলাম। জুলাইয়ের দিকে ভর্তি হওয়ার পর জগন্নাথ হলে থাকতাম। ছিয়াত্তরের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কস্থ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য গিয়েছিলাম আমরা কয়েকজন। কিন্তু পুলিশের পিটুনি খেয়ে কলাবাগান বাসস্ট্যান্ড থেকেই ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম। তারপর থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবিতে ছাত্রলীগের প্রতিটি মিছিল সমাবেশে অংশগ্রহণ করতাম। পরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জগন্নাথ হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যনির্বাহী কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলাম। পঁচাত্তর পরবর্তী প্রথম ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদে ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে নাট্য ও সামাজিক আপ্যায়ন সম্পাদক পদে জয়লাভ করেছি। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা যেদিন বর্তমানের হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরে অবতরণ করেন ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সেইদিনে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেছি। স্বদেশ ফিরে আসার পর  থেকেই শুরু হয়েছিল শেখ হাসিনার সংগ্রামবহুল আর এক জীবন।

সংগ্রাম ও জীবন: স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ১৯৮২ সাল থেকেই তিনি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনরায় শুরু করার জন্য তিনি এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তিনি প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি ১৫-দলীয় ঐক্যজোট সংগঠিত করেন। এই ঐক্যজোটের কারণেই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। তীব্র ছাত্র আন্দোলন দমানোর জন্য ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে নির্বিচারে লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করতে থাকে। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৫ দলীয় ঐক্যজোটের এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে তাকে (শেখ হাসিনা) গ্রেফতার করে চোখ বেঁধে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।  সেনানিবাসে তাকে ১৫ দিন বন্দী করে রাখা হয়েছিল। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং নভেম্বরে তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল। ১৯৮৫ সালের মার্চ মাসে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং একনাগাড়ে তিনমাস কারাবন্দী করে রাখা হয়েছিল। 

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টাসহ ১৯ বারেরও বেশী তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। 

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার: বাংলাদেশে খুব কম লোকই ভাবতে পারেনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কোনোদিন হতে পারে! কারণ, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মাত্র ৪১ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরে খোন্দকার মোশতাক এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চিরতরে বন্ধ করার লক্ষ্যে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জারিকৃত এই অর্ডিন্যান্স-এর একমাত্র লক্ষ্য ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে এবং সামরিক আইন জারির বিরুদ্ধে যাতে কোনো আইনগত পদক্ষেপ গৃহীত না হতে পারে। 

ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের গেজেট নোটিফিকেশনে বলা হয়, ‘যেহেতু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে ঐতিহাসিক পরিবর্তন এবং সামরিক আইন ঘোষণার প্রয়োজনে যেসব কাজ করা হয়েছে অথবা এইসব ঘটনার সাথে সম্পর্কযুক্ত অথবা এর প্রস্তুতি অথবা এর জন্য যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, অথবা প্রয়োজনে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার জন্য যে কোনো আইনগত বা কতিপয় কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অন্য কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ বা অন্য কোনো আইনগত ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত করাই উপযুক্ত।’ 

১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন, ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধী, ১৯৮৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, রাজিব গান্ধী, রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সফল নায়ক ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন, পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান বেনজির ভুট্টো, ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট বন্দর নায়েককে গুলি করে হত্যার পর সেসব দেশে এইসব হত্যাকাণ্ডের বিচার স্তব্ধ করে দিতে (বাংলাদেশের) ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মত কোনো আইন পাস হয়নি। এই সাথে দেশে অপরাধ করে দায়মুক্তির সংস্কৃতি এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেয়ার ফলে সহিংসতার সংস্কৃতির সূত্রপাত হয়, যা আত্মস্বীকৃত খুনিদেরকে বিচারের হাত থেকে রক্ষা করেছে। 

১৯৯৬ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভের পর ওই বছর ২৩ জুন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর বাংলার মানুষের মনের সুপ্ত চাওয়া ’বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার’ এর পথ সুগম হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর তৎকালীন আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু দ্য ইনডেমনিটি রিপিল অ্যাক্ট-১৯৯৬ সংসদে উত্থাপন করেন। ওইদিনই মানবতাবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয়। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ এই বিলে সম্মতি প্রদান করেন। 

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার দায়রা জজ গোলাম রসুল ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আপিল নিষ্পত্তির পর ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর এই মামলায় বিভক্ত রায় আসে বিচারপতিদের কাছ থেকে। বিচারপতি মো. রুহুল আমিন ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। অপরপক্ষে, বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ১৫ আসামির ফাঁসির আদেশই বহাল রাখেন। 

২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত এই ১২ জন আসামি হলো- অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশিদ, রাশেদ চৌধুরী, নূর চৌধুরী, মেজর শরিফুল হক ডালিম, ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ, রিসালদার মোসলেহউদ্দীন, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন, লে. কর্নেল ফারুক রহমান, মেজর বজলুল হুদা, মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ এবং লে. কর্নেল আজিজ পাশা। 

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডে রায় আংশিক কার্যকর হয় ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে। সে রাতে খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শারিয়ার রশীদ খান ও মহিউদ্দিন আহমেদকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা হয়। আজিজ পাশ মারা যায় জিম্বাবুয়েতে ২০০২ সালে। অবশিষ্ট ৬ জন এখনো পলাতক বা রাজনৈতিক আশ্রয়ে বিভিন্ন দেশে রয়েছে। অতি সম্প্রতি ভারতের পশ্চিম বঙ্গে আত্মগোপন করে থাকা ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ দেশে আসার পর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। এরপর তার সাজা বাস্তবায়ন করা হয়।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার: ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে তাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। এই প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে বিজয় অর্জনের পর যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০০৯ সালে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (বাংলাদেশ)। ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মাতৃভূমির বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। ২০০৮ সালে তারা একটি রিপোর্ট জমা দেয়। এই রিপোর্টে সন্দেহভাজন ১,৬০০ জন যুদ্ধাপরাধীকে চিহ্নিত করা হয়। এর পরে ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি ২০০৯ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। 

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট, ১৯৭৩, ১৯৭৩ সালের ১৯ নম্বর আইন হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছিল। এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল, আন্তর্জাতিক আইনে যারা গণহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং অন্যান্য অপরাধ সংগঠিত করেছে বা এসব অপরাধের জন্য দায়ী তাদের আটক করা, বিচারের সম্মুখীন করা এবং শাস্তি দেয়া। জাতীয়তা নির্বিশেষে যেকোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি গোষ্ঠী বা সংগঠন, বা যেকোন সশস্ত্র, প্রতিরক্ষা বা অক্সিলারি বাহিনীর সদস্য, যারা এই আইন প্রণয়নের পরে কিংবা আগে বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে এই আইনের ৩নং সেকশনের উপ-সেকশন [২] অনুযায়ী অপরাধ করে বা করেছে। এই আইনের ৬নং সেকশন-এর অধীনে সরকার গেজেট নোটিফিকেশন দ্বারা সরকার এক বা একাধিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবেন। এই ট্রাইব্যনালে একজন চেয়ারম্যান এবং দুইজনের কম নয় এবং চারজনের বেশী নয় এমন সংখ্যক সদস্য  থাকবেন। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার এই আইনটি অকার্যকর করে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। জিয়াউর রহমানের পরে এমনকি জেনারেল এরশাদ এবং বেগম খালেদা জিয়াও এই বিচার যাতে না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। 

অপরাধ সংঘটিত করার পর পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য সরকার ২০০৯ সালে কিংবা তার পরে সংশোধনীর মাধ্যমে এই আইনটির কিছু তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন করেন। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ অফিসিয়াল গেজেট-এর মাধ্যমে তিনজন বিচারকের সমন্বয়ে ‘ট্রাইব্যুনাল’ গঠিত হয়। এই তিনজন বিচারকের একজন চেয়ারম্যান। একই সাথে সরকার আইনের ৭ নং সেকশন অনুযায়ী অভিযোগ গঠনের লক্ষ্যে ‘প্রসিকিউশন টিম’ এবং সেকশন নং ৮ অনুযায়ী ‘ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি’ গঠন করে। এছাড়া যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার করার লক্ষ্যে যা যা করা প্রয়োজন সরকার সেইসব পদক্ষেপ গ্রহণ করে।  

মনুষ্য বসববাস উপযোগী উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার: অব্যাহতভাবে সংগ্রাম করে শেখ হাসিনা প্রথমে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০০৮ এর ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকাকালে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার ছাড়াও দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গিয়েছেন। দারিদ্র্যের হার হ্রাসকরণ, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, আর্র্থ-সামাজিক উন্নয়ন সূচকগুলোতে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি লাভ করার ফলে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। এমনকি বিশ্বের জনপ্রিয় ফোর্বস ম্যাগাজিনে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফল নারী নেতৃত্বের তালিকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম স্থান পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় ফোর্বস ম্যাগাজিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের প্রশংসা করে লিখেছে, প্রায় ১৬ কোটিরও বেশী মানুষের বসবাস বাংলাদেশে। সেখানে দুর্যোগ কোনো নতুন ঘটনা নয়। আর এই করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে দ্র্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি তিনি। তার এই ত্বড়িৎ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম বিষষয়টিকে প্রশংসিত বলে উল্লেখ করেছে। 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চলাকালে ২০২০ এর ১৯ মে সাইক্লোন আম্ফান বাংলাদেশে আঘাত হানে। মহামারীর কারণে উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ থেকে লোকজন সরিয়ে আনা জটিল হয়ে পড়ে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় তথা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বাংলাদেশ মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে ৪,১৭১টি আশ্রয়কেন্দ্রের অতিরিক্ত ১০,৫০০ অতিরিক্ত আশ্রয়কেন্দ্র  নির্মাণ  করতে সক্ষম হয়। এভাবে একসাথে দু’টি মহাবিপদ থেকে উপকূলীয় মানুষের জীবন রক্ষা করে একটি অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। একসাথে দু’টি বিপদ সম্পর্কে লন্ডনের বিখ্যাত দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় ৩ জুন ২০২০ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন এর এক্সিকিউটিভ অফিসার প্যাট্রিক ভার্কোইজেন একটি নিবন্ধ  লেখেন।  

এসব গুণ, বৈশিষ্ট্য ও ঘটনাবলীর পাশাপাশি সাম্প্রতিককালের দু’টি বিষয়ে প্রজন্মের অনুসরণীয় ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনার অবস্থানের অনন্য উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কিশোরী মামিজা রহমান রায়ার মা নাবিহা রহমান পিংকীর মোবাইল ফোনে ভিডিও কল করেন। কিশোরী রায়া ভিডিও কলে প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে শোনান। রায়ার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীও জাতীয় সঙ্গীতে কন্ঠ মিলিয়েছেন। এছাড়া রায়া প্রধানমন্ত্রীকে একটি কবিতা আবৃত্তি করে শুনিয়েছেন বলেও জানা গেছে। রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের প্রধান একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে একজন অটিস্টিক শিশুর সাথে এভাবে আন্তরিকতাপূর্ণভাবে কথা বলা সত্যিই অনন্য।  

দেশপ্রেম, সততা, মানবিকতা, আন্তরিকতা, সকলের প্রতি সৌজন্যবোধ, অসহায় ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হওয়ার শিক্ষা শেখ হাসিনা কোথা থেকে লাভ করেছেন? এই প্রশ্নের উত্তর তার নিজের কথা থেকেই আমরা জানতে পারি। 

একাদশ জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে ভাষণে তিনি বলেন, “আমার বাবার নির্দেশ ছিল, একজন রিকশাওয়ালাকে আপনি করে কথা বলতে হবে, বাড়ীর ড্রাইভারকে ড্রাইভার সাহেব বলতে হবে। আর কাজের যারা লোকজন তাদের কখনো চাকর বাকর বলা যাবে না, হুকুম দেয়া যাবে না। তাদের কাছে সম্মান করে ভদ্রভাবে চাইতে হবে। যেজন্য প্রধানমন্ত্রী হতে পারি কিন্তু এখনও আমার বাড়ীতে যে ছোট কাজের মেয়েগুলি বা যারাই আছে কারও কাছে যদি কখনও একগ্লাস পানিও চেতে হয়, যতদূর পারি নিজে করে খাই আর যদি চেতে হয় তাহলে কিন্তু তাদেরকে জিজ্ঞাসা করি, আমাকে এইটা একটু দিতে পারবে? এই শিক্ষাটা আমরা নিযে আসছি, এটা এখনও আমরা মেনে চলি। এটা আমার বাবারই শিক্ষা। তিনি শুধু বলে গেছেন তা নয়, তিনি সে শিক্ষাটা আমাদের দিয়েও গেছেন, আমরা দিয়ে যাই। কাজেই সেই দিক দিয়ে, আমরা মনে করি যে, আমাদের সকলেরই মানুষ গরীব দেখলে বা ভালো পোশাক না পরলে তাকে আবহেলা করতে হবে। আমাদের কাছে কিন্তু সেটা না, আমাদের কাছে সবাই সমান সমাদর পায় বরং যাদের কিছু নাই তাদের দিকে আমরা একটু বেশি নজর দেই, দৃষ্টি দেই।” 

“আর জিজ্ঞাসা করছেন যে সকালে উঠে আমি কী খুঁজি? আমি জায়নামাজ খুঁজি। সকালে উঠে নামাজ পড়ি। নামাজ পড়ার পর কোরআন তেলওয়াত করি। তারপরে এককাপ চা নিজে বানিয়েই খাই। চা বানাই, কফি বানাই যা আমি নিজে বানিয়ে খাই। আমার ছোট বোন আর আমি দুইবোন যে আগে ওঠে সে বানায়। এখন পুতুল আছে আমার মেয়ে আছে, যে ঘুম থেকে আগে ওঠে সেই বানায়, নিজেরা করে খাই। তার আগে বিছানা থেকে নামার সাথে সাথে নিজের বিছানাটা গুছিয়ে রাখি নিজের হাতে। এরপরে বই-টই যা পড়ার পড়ি আর ইদানিং এই করোনাভাইরাসের পর সকালে একটু হাঁটতে বেরই। তবে, আর একটা কাজ করি এখন, সেটা আবার বললে কী হবে (?), গণভবনে একটি লেক আছে মাননীয় স্পীকার, যখন হাঁটতে যাই হেঁটে হেঁটে যখন লেকের পাড়ে বসি তখন একটা ছিপ নিয়ে বসি, মাছও ধরি!” এক অনন্য সাধারণ অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বের অতি সাধারণ ও প্রজন্মের জন্য অনুসরণযোগ্য জীবন যাপনের কাহিনী।

উপরের আলোচনার পরে উপসংহারে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুযায়ী প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার জন্য বাংলাদেশের বর্তমান যুব সমাজ প্রজন্মের সামনে শেখ হাসিনা প্রকৃতই অনন্য এবং অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। উন্নত, সমৃদ্ধ ও মনুষ্য বসবাস উপযোগী বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য যা প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার এবং যুবসমাজ ও প্রজন্মের অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিনে তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। 

লেখক: ইনস্টিটিউশনালাইজেশন অব ডেমোক্র্যাসি ইন বাংলাদেশ গ্রন্থের লেখক; সাবেক ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, সাবেক চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

এএইচএস
 


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি