শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রক্ষমতায় চাই
প্রকাশিত : ২২:৪৫, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ২২:৪৬, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮
হক-ভাসানি-সোহরাওয়ার্দী যা করতে পারেননি, বাঙালি জাতিকে স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়ে তা করেছিলেন তাঁদেরই রাজনৈতিক শিষ্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সপরিবারে অস্বাভাবিক প্রয়াণের কারণে এ অবিসংবাদিত নেতা তাঁর দেশগড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যেতে না পারলেও তাঁরই সুযোগ্য তনয়া এশিয়ার লৌহমানবী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা এক দশকের শাসনে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মোড়লদের রক্তচক্ষুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ সম্পন্ন করা, নিজ টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ, অনুন্নত দেশকে মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তর, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কৃষি, তথ্য-প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নয়নবিপ্লব ঘটিয়ে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে এ দেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে তিনি এখন বিশ্বনেত্রী, মানবতার মা। সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম, রাষ্ট্রপরিচালনায় সাহসী নেতৃত্ব ও দক্ষতার মাধ্যমে দুনিয়ার সব ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনায়কের তালিকায় নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। যাঁর বাবার অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, তাঁর চেয়ে অন্য কারো তো বেশি দেশপ্রেম থাকার কথা নয়। মায়ের চেয়ে মাসির দরদ কী বেশি হয়! তাই যতদিন এ মহামানবীর শারীরিক সক্ষমতা থাকবে এবং বেঁচে থাকবেন ততদিন তিনি থাকবেন রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত।
দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা উন্নয়নের ধারাবাহিকতার জন্যে শেখ হাসিনা সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এ রাজনৈতিক বাস্তবতা উপলব্ধি করে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, পেশাজীবীসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষ নৌকার বিজয়ের জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। বিজয় মাসের এ নির্বাচনে আরেকটি বিজয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে চায় জাতি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের কারিগর দেশের তিন মেয়াদের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিপরীতে অন্য কাউকে রাষ্ট্রপ্রধান করার চিন্তা করা মানে দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়ার সামিল। ফলে এবারের নির্বাচন গণতন্ত্র নয়, দেশের স্বাধীনতা ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র কাঠামো রক্ষার নির্বাচন। এবারের নির্বাচন আগামী মেয়াদে দেশকে সুশাসন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, দুর্নীতিমুক্ত ও সুখি-সমৃদ্ধশালী দেশনির্মাণের টার্নিংপয়েন্ট। ৩০ডিসেম্বরের নির্বাচন দেশে দীর্ঘসময়ে পুঞ্জিভূত জঞ্জাল পরিস্কার করার সন্ধিক্ষণ। জাতির জনকের কন্যা এ নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় এসে জাতিকে এমনএক দেশ উপহার দিয়ে যেতে চান- যেখানে আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নেতাশূন্য করতে সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হবে না, রাষ্ট্রপ্রধানকে হতে হবে না সপরিবারে খুনের শিকার , জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সে-ই সরকার জনস্বার্থে কাজ করবে-যা হবে বিশ্বের বিষ্ময়।
আমাদের সৌভাগ্য, শেখ হাসিনার মতো বহুগুণে গুণান্বিত একজন মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন গুণবতি নারীকে আমরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেয়েছি। আন্তর্জাতিক দুনিয়া প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও সেখানে আমরা বাঙালিরা তাঁকে মুল্যায়ন করতে পারছি না। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নানা উপাধিতে ভূষিত করেছেন। দুর্নীতি যাদের স্পর্শ করেনি, বিদেশে যাদের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, বিশ্বের এমন সৎ ৫জন সরকারপ্রধানের তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় তাঁর অবস্থান ৩৩তম। বিশ্বে ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় শেখ হাসিনার নাম রয়েছে। লিডার্স ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনা ২৭জনের মধ্যে ২১তম। এছাড়া কর্মদক্ষতা ও মহানুভবতার জন্যে শেখ হাসিনা বিশ্ববাসীর কাছ থেকে অসংখ্য পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্ব মানবতার বিবেক’, ‘ক্যারিশমেটিক লিডার’, ‘প্রাচ্যের নতুন তারকা’, ‘বিশ্বের নেতা’, ‘বিশ্বশান্তির দূত’, ‘নারী অধিকারের স্তম্ভ’, ‘মানবিক বিশ্বের প্রধান নেতা’, ‘বিশ্বমানবতার আলোকবর্তিকা’ প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত করেছে।
শেখ হাসিনা একজন মানবতাবাদী সুলেখকও বটে। অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ, সংস্কৃতিমনা, অসাম্প্রদায়িক ও উদার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী, বিশ্বের দীর্ঘস্থায়ী নারী সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা শশব্যস্ততার মধ্যেও ১১টি বই লিখেছেন। তাঁর প্রকাশিত বইগুলো- ১. শেখ মুজিব আমার পিতা ২. দারিদ্যবিমোচন, কিছু ভাবনা ৩. ওরা টোকাই কেন? ৪. বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম ৫. আমার স্বপ্ন, আমার সংগ্রাম ৬. আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি ৭. সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র ৮.সাদা কালো ৯. সবুজ মাঠ পেরিয়ে ১০. মাইলস টু গো ১১. দ্য কোয়েস্ট ফর ভিশন ২০২১।
বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনা। শব্দ তিনটি এখন একাকার। এর ব্যবহারে রাজনৈতিক কোনো পরিচয়ের দরকার নেই। বঙ্গবন্ধুর মতো আকাশসম ব্যক্তিত্বকে যদি কেউ এড়িয়ে চলতে চায় তাতে তাঁর কিছু যায় আসে না। কেননা, বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু নয়। বাঙালি জাতীয় অস্তিত্বের সাথে এ নামটি আষ্টেপিষ্টে মিশে আছে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মুজিব দেশকে তাঁর মনের মতো সাজাতে চেয়েছিলেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন সুখি-সমৃদ্ধ সোনার বাংলার। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের চেয়ে এদেশের মাটি ও মানুষ ভালোবাসতেন। পাকিস্তানী জান্তা তাঁকে মারতে সাহস করেনি অথচ তাঁর প্রিয় বাঙালিদের হাতে কলঙ্কিত হয় মধ্যরাত ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫। সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে দেশ। দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা ক্ষমতায় এসে দেশকে আবার মূলধারায় ফিরিয়ে আনেন।
অপেক্ষার প্রহর প্রায় শেষ হতে চলেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দোড়গোড়ায় কড়া নাড়ছে। এসময়টা প্রার্থী ও নির্বাচন কমিশনের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে নিরাপত্তাচাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে নির্বাচনী এলাকা। কোনো সহিংসতা যাতে না ঘটে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে নির্বাচন কমিশন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচনী দায়িত্বপালনে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মেলেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যে সেনাবাহিনীও মাঠে নামানো হয়েছে।
দেশজুড়ে চলছে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের বিরামহীন প্রচার-প্রচারণা। ভোটারদের কাছে প্রার্থীদের উপস্থিতি মানুষের মধ্যে একধরনের জাগরণ তৈরি হয়েছে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এখন নির্বাচনমুখি। সব পথ এসে মিলিত হচ্ছে ভোটকেন্দ্রের দিকে। নির্বাচনকে ঘিরে আলাপ-আলোচনা, তর্কবিতর্ক চলছে বেশ জোরেশোরে। নির্বাচনী প্রচারণায় লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড, মামলা-হামলাসহ পাল্টাপাল্টি নানা অভিযোগ থাকলেও ৩০ডিসেম্বর ২০১৮ যথারীতি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবারও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার নানা বিষয় নির্বাচনী ইশতেহারে রেখেছে। ইশতেহার বড় বিষয় নয়, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে ইশতেহারের বাইরেও অনেককিছু করা যায়। আমার প্রত্যাশা, ২০১৯ সালে নতুন সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রশাসনিক ও আর্ধিক বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে শক্তিশালী ও কার্যকর করবে।টেশসই যোগাযোগব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও বেকারত্ব দূরীকরণ, খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণ, মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রযুক্তিগত সুবিধাসহ সাংবিধানিক সকল সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক- প্রধান-সম্পাদক, সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।