আ’লীগের ২১তম সম্মেলন
শেষ মুহূর্তে আশা-নিরাশার দোলাচলে নেতারা
প্রকাশিত : ১৪:৫৪, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৫:২০, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯
রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার বার্তা নিয়ে আওয়ামী লীগের ২১তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর এ সম্মেলন শুরু হবে, যা চলবে শনিবার পর্যন্ত। মানুষের সামনে দলকে সুসংগঠিত, মডার্ন, স্মার্ট হিসেবে উপহার দিতেই আয়োজন করা হচ্ছে এবারের সম্মেলন। ইতিমধ্যে প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন, দেশ জুড়েই নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। অনেকেই ঢাকায় এসে উপস্থিত হয়েছেন, বাকিরা যাত্রা শুরু করেছেন।
বরাবরের মতই দলীয় প্রধান হিসেবে থাকছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তবে পরিবর্তন আসতে পারে সাধারণ সম্পাদকসহ বাকি অনেক পদেই। গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই দলের দায়িত্ব থেকে সরে যাবার আভাস দিয়েছিলেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আবার অনেকে বলছেন এ মুহূর্তে ওবায়দুল কাদেরের বিকল্প নেই। যদিও দলীয় প্রধান বারবার বলেছেন, সরকার ও দলকে আলাদা করার কথা। ফলে ওবায়দুল কাদের একই পদে পুনরায় না আসলে দায়িত্ব পাবেন সরকারের বাইরে থাকা কোন নেতা।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব কাউন্সিলরদের; যদিও কাউন্সিলররা বরাবরই এ দায়িত্ব তুলে দেন সভাপতি শেখ হাসিনার কাঁধে। তাই পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হবেন তা নির্ভর করবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর।
এদিকে আওয়ামী লীগের অতীত কমিটিগুলোর দিকে তাকালেই দেখা যায় দলটির সাধারণ সম্পাদক পদে সবসময়ই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা দায়িত্ব পালন করেছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে পাঁচবার দায়িত্ব পালন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাজউদ্দীন আহমদ এ পদে ছিলেন তিনবার। জিল্লুর রহমান ছিলেন চারবার। এছাড়া আব্দুর রাজ্জাক দুবার, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দুবার, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুবার, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক একবার, আবদুল জলিল ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একবার। এর মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক ১৯৮২ সালে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে বাকশালে যোগ দিলে সাজেদা চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়।
‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ, এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে পরবর্তী তিন বছরের জন্য নতুন কমিটি গঠনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ক্ষমতাসীন দলটি।
২০২১ সালের ১৭ মার্চ থেকে পালিত হবে মুজিববর্ষ। এর আগে ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে মুজিববর্ষের কাউন্টডাউন। মুজিববর্ষকে সামনে রেখে ২১তম সম্মেলন শেষে নেতৃত্বে কারা আসছেন তা নিয়ে সবার মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা, আলোচনা চলছে।
গঠনতন্ত্রে মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসছে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের অর্জনগুলো ঘোষণাপত্রে যুক্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা আছে দীর্ঘদিন ধরেই। তবে এবারও শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় বা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ পরিবারের ঘনিষ্ঠদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনার কোনো ইঙ্গিত এখনো দেননি দলীয় প্রধান। তবে সম্মেলনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সংখ্যা ৪১ থেকে বাড়িয়ে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট করা হচ্ছে।
গতকাল বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, উপদেষ্টা পরিষদ আগে ৪১ সদস্যবিশিষ্ট ছিলো। সেই সংখ্যা আরও ১০ বাড়িয়ে করা হবে ৫১। সভায় উপ-কমিটির আরও কিছু প্রস্তাবেও অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিষয়ভিত্তিক উপকমিটির ‘সহসম্পাদক’ পদ বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
শুধু তাই নয়, অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব শেখ হাসিনা দলের দুর্দিনে ত্যাগীদের মূল্যায়নের কথা বলছেন। ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়েও রয়েছে তার ভাবনা। এসব বিবেচনায় এবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এক ঝাঁক নতুন মুখ দেখা যেতে পারে।
অনেকে মনে করছেন, এই সম্মেলনে পরীক্ষিত তরুণদের অনেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে চলে আসতে পারেন, চমক হয়ে দেখা দিতে পারে গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তনও।
সাধারণ সম্পাদক পদে কোনো পরিবর্তন না এলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানককে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিন, বি এম মোজাম্মেল ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হতে পারে বলেও আলোচনা রয়েছে।
ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজীত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন এবং কেন্দ্রীয় সদস্য থেকে এস এম কামাল হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু, মির্জা আজম ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারেন বলে শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
নতুন এই কমিটিতে নারী নেতৃত্বে সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) কারণে। ২০২১ সালের মধ্যে দলীয় কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্বে আনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এই অধ্যাদেশে। এক্ষেত্রে কমিটিতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন নারী পদ পেতে পারেন। সংরক্ষিত আসনের বর্তমান ও সাবেক এমপি, মহিলা লীগ নেত্রীরা পদ পাবার বিষয়ে এগিয়ে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলামের বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, সানজিদা খানম, নূর জাহান মুক্তা, মেহজাবিন খালেদ, ডা. নুজহাত চৌধুরীর কেন্দ্রীয় পদে আসার আলোচনায় রয়েছেন। এছাড়া বর্তমানে যারা পদে রয়েছেন তাদের বাদ যাবার সম্ভাবনা কম বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
প্রতি সম্মেলনেই কিছু নেতা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ছিটকে পড়েন, আর নতুন কিছু মুখ নেতৃত্বে আসেন। তাই কারা বাদ পড়ছেন আর কারা নতুন পদ পাবেন তা নিয়ে স্নায়ুবিক চাপে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদে থাকা এবং পদপ্রত্যাশীরা। কেউ আশা করছেন বড় পদে যাওয়ার, কেউ কমিটিতে অন্তভূক্ত হবার; আবার কেউ বাদ না যেয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকতে পারলেই খুশি। সব মিলিয়ে আশা-নিরাশার দোলাচলে কাটছে আওয়ামী লীগ নেতাদের শেষ মুহূর্ত।
এসএ/
আরও পড়ুন