শেষ মুহূর্তের মূল্য ছাড়ে জমজমাট বাণিজ্য মেলা
প্রকাশিত : ০০:১৪, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
শেষ মুহূর্তের ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়ে বেচাকেনায় জমজমাট ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। মেলায় ক্রেতা সাধারণের ভিড় সামাল দেওয়া বিক্রেতাদের পক্ষে কষ্টকর হয়ে পরেছে। মেলায় আগত দর্শনার্থীরা নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় গৃহস্থালি, আসবাবপত্র, প্রসাধনী, শীতের কাপড়, শাড়ি, খাবার, হস্তশিল্প, জুয়েলারি সামগ্রিসহ প্রায় সব স্টলই ছিল লোকে লোকারণ্য।
চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে শুরু হওয়া বাণিজ্য মেলা শেষ হওয়ার কথা ছিল ৩১ জানুয়ারি। এই ক্ষেত্রে মেলায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বোনাস মেয়াদ হিসেবে চার দিন বাড়িয়েছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। সেই অনুযায়ী মেলা শেষ হচ্ছে ৪ ফেব্রুয়ারি।
একদিকে মেলার শেষ সময়, অন্যদিকে শনিবার ছিল সরকারি ছুটির দিন। শনিবার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। সর্বসাধারণদের টানতে বিভিন্ন স্টল শেষ সময়ে আখেরি অফার নামে ছাড় দিচ্ছেন বিক্রেতারা।
শনিবার বিকেলে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় আর ক্রেতা-দর্শনার্থীর সমাগমে মুখরিত ছিল পুরো মেলা প্রাঙ্গণ। প্রতিটি স্টল-প্যাভিলিয়নে উৎসুক ক্রেতা সাধারণদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। মেলা শেষ হতে আর মাত্র একদিন বাকি। তাই ক্রেতাদের মধ্যে দেখা যায় পছন্দের পণ্য কেনার আগ্রহ। একই সাথে যথা সম্ভব ছাড়ে পণ্য বিক্রি করে বিক্রেতাদের ঘরে ফেরার চিন্তা।
এবারের মেলায় তরুণদের আগ্রহ ছিল ব্লেজারের উপর। আর তাই ব্লেজারের স্টল গুলোতে হুমড়ি খেয়ে পরেছে তরুণ-তরুণীরা। এইচএমটি ওয়ার্ল্ড ৬২ নং স্টলের বিক্রেতা রিজভি শামিম ইটিভি অনলাইনকে বলেন, আজকে অন্য দিনের তুলনায় ব্লেজার বেশি বিক্রি হচ্ছে। পনের`শ টাকার ব্লেজার মাত্র এক হাজার টাকায় করছি। ফলে ব্লেজারের প্রতি ইয়াংদের আগ্রহ বেড়েছে। অনেকে একাধিক কিনেছে। তবে আমাদের বিনিয়োগের তুলনায় বিক্রি অনেকটা কম।
ব্লেজার কিনতে আসা গ্রীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আশিক জামান বলেন, ``স্বল্পমূল্যে ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে শুনে মেলায় আসলাম। ব্লেজার তো সব সময় আমার পছন্দের। এছাড়া যেকোনো অনুষ্ঠানে ব্লেজার পরলে নিজের কাছে স্বস্তি লাগে। মূলত, সেই জন্য কিনে রাখা।``
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইলোরা নওরিন বলেন, ``ব্লেজার বরাবরই আমার খুবই পছন্দের। শুধু যে ছেলেরা ব্লেজার পরবে তা কিন্তু নয়। আজকাল মেয়েরাও ব্লেজারে আকৃষ্ট হচ্ছে। মেলায় মূল্যছাড়ে ব্লেজার বিক্রি আমাদের জন্য এটি একটি বাড়তি সুবিধে।``
এছাড়া গৃহস্থালির পণ্য জমজমাট বেচাকেনা চলছে। এসব পণ্যে নারীদের আগ্রহের বেশি দেখা গেছে।
দিল্লী এলিমুনিয়াম বিক্রেতা মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ``হাড়ি পাতিল এবং গৃহস্থালি পণ্যে নারীদের আগ্রহ অনেক বেশি। তবে বেশি বিক্রি হচ্ছে ফাইফেন, কড়াই, হট ক্যারিয়ার, চাকুনি, স্টিল কেটলি, স্ক্রিম, টিফিন কেরিয়ার, সসপেন। এসব পণ্যে বাজার দর থেকে কিছুটা ছাড়ে বিক্রি করছি।``
গৃহস্থালি পণ্য কিনতে আসা মারলিন বলেন, ``নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য একসাথে পাওয়া যায় বিধায় এই মেলায় আসার আগ্রহ অনুভব করি। এছাড়া বছরজুড়ে ব্যবহারের কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনলাম। ভিড়ের মধ্যে কিনতে ভালো লাগছে, দাম ও রিজনাবল।``
মেলায় জমে উঠেছে মসলার স্টলগুলো। ইরানী প্যাভিলিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের মসলা, আচার, কিসমিস, জিরা, দারুচিনি, এলাচসহ পছন্দের পণ্য ছাড়ে বিক্রি করছে।
এছাড়া এবারের মেলায় সকল শ্রেণির ক্রেতাদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল হ্যান্ড জুসার। ১২টি আইটেম এক সাথে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়। সব ধরনের সবজি সহজে কাটতে নাইসার ডাইসারের জুড়ি নেই।
এই সকল পণ্য কিনতে আসা মারজিয়া ইসলাম বলেন, ``আমি কর্মজীবী নারী। রান্নার সময় বাঁচাতে এই নাইসার ডাই সারের পণ্য গুলি ভীষণ উপকারী। সময় বাঁচায় সেই সাথে আরামে সবজিগুলো কাটা যায়। ছাড় দেওয়ায় অনেকগুলো পণ্য কিনলাম।``
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, মেলার শুরু থেকেই স্টলগুলোতে বিভিন্ন পণ্যে ছাড় ও অফারের ছড়াছড়ি থাকলেও শেষদিকে এসে তা আরও বেড়েছে। এছাড়া স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলো ছাড়ের ছড়াছড়ি চোখে পড়ার মত ছিল।
দেশে উৎপাদিত পেয়ালা, কাপ, পিরিচসহ অন্যান্য পণ্যগুলোর মান ভালো হলেও দাম তুলনামূলক কম। ফলে দর্শনার্থীরা খুব সহজেই এসব পণ্যের প্রতি ঝুঁকছেন।
দেশি-বিদেশি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দোকানগুলোও পিছিয়ে ছিল না এ ক্ষেত্রে। মেলা-ফিরতি মানুষের হাতেও গৃহস্থালী পণ্যই বেশি দেখা গেছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক পণ্য, প্রেশার কুকার, জুস মেকার, জুস ব্লেন্ডার,ওভেন, রাইস কুকার, ইস্ত্রি, ইন্ডাকশন চুলা, ফ্যান প্রভৃতি।
এছাড়া তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, ফেব্রিক্স পণ্য, হস্তশিল্পজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহস্থালী ও উপহার সামগ্রী, চামড়াজাত পণ্য, সিরামিকের তৈজসপত্র, প্লাস্টিক পণ্য, কসমেটিকস, হারবাল ও প্রসাধনী সামগ্রী, খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, জুয়েলারি, নির্মাণ সামগ্রী ও আসবাবপত্রের স্টল ছিল।
শেষ সময়ে বাণিজ্য মেলায় প্রায় সব ধরনের পণ্যই বেশ বিক্রি হচ্ছে। তবে এর মধ্যে বেচা-বিক্রি নিয়ে অসন্তুষ্টিও রয়েছে অনেক স্টলমালিকের।
উল্লেখ্য, ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ২০১৮।
কেআই/টিকে
আরও পড়ুন