ঈদুল আজহা
শেষ সময়ের সরগরম কামারপট্টি
প্রকাশিত : ১৭:৪৮, ২০ আগস্ট ২০১৮
ঈদুল আজহার আর মাত্র একদিন বাকী। কালকের দিনটি পেরুলেই শুরু হবে পবিত্র পশু কোরবানি। কোরবানিকে ঘিরে ব্যস্ততা বেড়েছে কামারপাড়ায়। শেষ সময়ের প্রস্তুতে টুংটাং শব্দে মুখরীত তাই কামারপট্টি। ঈদের দিন পশু জবাইয়ের জন্য পছন্দসই ছুরি-চাপাতি-দা কিনতে ক্রেতারা ছুটছেন এ পট্টিতে।
সময় না থাকায় কামাররা এখন আর আগের মতো অগ্রিম বায়না নিচ্ছেন না। যা বিক্রি করছেন নগদ। ক্রেতারাও শেষ সময়ে দরদাম করে কিনে নিচ্ছেন পছন্দের ছুরি বা চাপাতি।বিক্রেতারা জানান, তারা আগে থেকে অনেক জবেহ সামগ্রী তৈরি করে রেখেছিলেন।এখন সেগুলো বিক্রি করছেন।আবার পুরোনো সামগ্রীও ধারানোর কাজও করছেন। গত কোরবানি ঈদের তুলনায় এবার তাদের বেচা-বিক্রি বেশি।বিক্রির এ হার আগামীকাল আরো বেড়ে যাবে।বেচা-বিক্রি আর আগের অর্ডারের মাল তৈরি করতে গিয়ে তাদের রাতে ঘুমানোর ফুসরত মিলছে না।
তবে কোরবানির এ মৌসুমী সুযোগ নিয়ে কামাররা কোরবানি সামগ্রীর দাম বেশি রাখছেন বলে বরাবরের মতো অভিযোগ ক্রেতাদের। তারা বলেন, অন্যসময় দরদাম করে একটু কম দামে কেনা সম্ভব হলেও এখন কামাররা যে দাম চায়ছেন সেই দামেই কিনতে হচ্ছে। সোমবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও কারওয়ান বাজার কামারপট্টি ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া যায়।
বাজার ঘুরে জানা যায়, বাজারে লোহার মান ও ওজন ভেদে দামেও পার্থক্য রয়েছে। সেক্ষেত্রে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে চাপাতি বিক্রি হচ্ছে। আর বটি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ ও ৮০০ টাকা কেজি দরে।
বাজারে একেকটা চাপাতি এক কেজি থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত ওজনের আছে।বটিও প্রায় একই ওজনের পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়া ছোট ছুরি ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, বড় ছুরি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, চামড়া ছাড়ানোর ছুরি ৭০ থেকে ১২০ টাকা, দা ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজার হার্ডওয়ার বিক্রেতা আলতাফ হোসেন বলেন, প্রতিবারই কোরবানি ঈদের আগে আমাদের বেঁচা-বিক্রি অনেক বেড়ে যায়। বছরের এ সময়টিতে আমরা অর্ধবছরের সমান বেঁচাকেনা করি।এসময় ক্রেতারা দামের দিকে বেশি দেখে না। পছন্দ হলেই কিনে নেই। ঈদের আর একদিন বাকী আছে। আশা করছি আগামীকালে শেষ দিনে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আমাদের বেঁচাকেনা চলবে।কালকের বাজার ধরার জন্য আজকেও আমাদের একদিকে ছুরি তৈরির কাজ চলছে। অন্যদিকে বেঁচাকেনা চলছে।
তিনি বলেন, তার দোকানে ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকায় জবাই করার ছুরি আছে। আবার ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা দামের বড় ছুরিও আছে।
কারওয়ানবাজারে ছুরি কিনছিলেন মেরাদিয়া থেকে আসা রবিউল ইসলাম।তিনি বলেন, এবারই আমি প্রথম কোরবানি দিচ্ছি। একাই একটি গরু কোরবানি দিচ্ছি।গতকাল গরু কিনেছি।অফিস কারওয়ান বাজার হওয়ার কারণে এখান থেকেই একটি ছুরি আর একটি চাপাতি কিনলাম।দাম একটু বেশিই মনে হলো।তবে বেশি দর কষাকষি করলাম না।কোরবানির পশু জবেহ দেওয়ার সামগ্রী তাই।কয়টা টাকায় বা বেশি নিবে?
কারওয়ান বাজারের মতো ব্যস্ত মিরপুরের ১১ নম্বরের ইরানি ক্যাম্পের লোহাপট্টিও।ইরানি ক্যাম্প লোহাপট্টির কামার মোহাম্মদ বাকের বলেন, রোববার রাতেও তার দোকানে কাজ চলেছে ৩টা পর্যন্ত। শেষ সময়ের ব্যস্ততায় দা-ছুরিতে ধার দিয়ে কুলাতে পারছি না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঈদের আগের রাতে কাজ চলবে সারা রাত। শেষ সময়ে অনেকে পুরনো ছুরি বটি ধার দিতে আনবেন।
তিনি বলেন, আমার দোকানে চাপাতি ৬৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, ছুরি ১০০ থেকে ২০০ টাকা, ছোট বটি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, বড় বটি ৬০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি করছি।কোনোটা কেজি দরে বিক্রি করি, আবার কোনাটা পিস হিসাবে। একেকটার একেক রকম রেট।
এ পট্টিতে চাপাতি ও ছুরি কিনতে আসা হারুন বলেন, ছুরি, চাপাতি ছাড়া কোরবানি দেওয়া অসম্ভব।তাই আমরা কোরবানিদাতারা কামারের দোকানে ছুটি। আমাদের চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে এরা জবেহ সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিটা সামগ্রীতে ১ থেকে দেড়শ’ টাকা বেশি।
আরকে// এআর