ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের নিরাপত্তায় ড্রোন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:১২, ১১ জুন ২০১৮

শোলাকিয়ার আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর জামাতের নিরাপত্তায় ড্রোন ব্যবহারের আগ্রহ দেখিয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ। ইতোমধ্যে জেলা শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ড্রোন ব্যবহার শুরু করেছে নরসিংদী জেলা পুলিশ।

নরসিংদীর পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নরসিংদী জেলা পুলিশ গত ৬ জুন থেকে নিরবচ্ছিন্ন নজরদারির জন্য ৩টি ড্রোন উড়াচ্ছে।

সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘নরসিংদীর চরাঞ্চলে দলে দলে মানুষ ট্যাটা যুদ্ধ করে থাকে। এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সময় উত্তিজিতরা পুলিশ দেখলে আরও ক্ষিপ্ত হয়। এসময় আমরা ড্রোন উড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নিতে পারবো।’ এছাড়াও এলাকার বিভিন্ন এলাকায় ড্রোন দিয়ে পেট্রোল ও নজরদারি করা হবে বলেও জানান তিনি।

মূলত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত নিয়ন্ত্রেণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ড্রোন ব্যবহার করে। সেসব দেশে এর সুফলও পাচ্ছে। তাই বাংলাদেশ পুলিশেও ড্রোন ব্যবহারে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

এসপি সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘গত ৬ জুন থেকে আমার এলাকাতে ড্রোন উড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এটার কয়েকটি দিক রয়েছে। প্রথমত, যখন খুশি তখনই আমরা এলাকাতে পেট্রোলিং করতে পারছি। পাশাপাশি যেসব এলাকা প্রবেশ করা যায় না, গিঞ্জি, সেখানের পরিস্থিতিও সহজে দেখা যায়।’

তিনি বলেন, ‘নরসিংদীর জেলা শহরে কোথাও না কোথাও প্রতিদিনই ড্রোন উড়ানো হচ্ছে। এতে অপরাধীদের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। যেসব এলাকায় মাদকসেবীদের জমায়েত হয়, বখাটেদের আড্ডা দেয় সেসব জায়গায় ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি করা হয়। এছাড়ও স্কুল-কলেজের সামনে বখাটেদের আড্ডা, স্টেডিয়ামে বখাটেদের মাদক সেবন সবকিছু আমরা মুহূর্তেই পেয়ে যাই। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণেও সহজ হয়।’

প্রতিটি ড্রোন ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা করে কেনা হয়েছে। বর্তমানে জেলা পুলিশ ৫ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে একজন উপপরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে একটি নজরদারি ইউনিট গঠনের পরিকল্পনার কথাও জানান এসপি।

তিনি জানান, রাতেও ড্রোন উড়ানো যাবে। নাইট ভিশন ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি করতে পারবে। তবে ২৫ কিমি বেগের বেশি ঝড়ো বাতাস হলে ড্রোন উড়ানো যাবে না। তাই আবহাওয়া স্বাভাবকি ও পক্ষে থাকলেই কেবল এই ড্রোন দিয়ে নজরদারি করা সম্ভব।

নরসিংদীতে ড্রোন উড়ানোর পর বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন জেলা পুলিশের মধ্যে। আসন্ন ঈদুল ফিতরে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়াতে নিরাপত্তার জন্য এই ড্রোন চেয়েছে ওই জেলার পুলিশ। ঈদ জামাতের নিরাপত্তায় এই ড্রোন ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন এসপি সাইফুল্লাহ আল মামুন।

তিনি জানান, প্রতিটি ড্রোন কমপক্ষে ৩০ মিনিট উড়তে পারে। তবে নরসিংদী পুলিশ নজরাদির জন্য ২০ মিনিট করে ড্রোনগুলো উড়িয়ে থাকেন। ড্রোন উড়িয়ে নজরদারির বিষয়টি নরসিংদীর মানুষের মনেও বেশ উচ্ছাস জুগিয়েছে। অনেকেই প্রশংসা করেছেন। ড্রোনের নজরদারিতে পুলিশ সুফল পেতেও শুরু করেছে। তাই আগামীতে আরো ভালো ড্রোন কেনার পরিকল্পনা নিয়েছে নরসিংদী জেলা পুলিশ।

এসপি সাইফুল্লাহ আল মামুন নিজ উদ্যোগেই ড্রোনগুলো সংগ্রহ করেছেন। সদর দফতর বিষয়টি অবগত না হলেও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজিকে জানানো হয়েছে।

তবে বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির অনুমতি ছাড়া দেশের কোথাও ড্রোন উড়ানো নিষিদ্ধ। অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নিরাপত্তার স্বার্থে ড্রোন উড়াচ্ছি। আমরা সর্বোচ্চ ৫০ মিটার পর্যন্ত ড্রোন উড়িয়ে থাকি। ৩০০ মিটার উচ্চতায় উড়ালেও কোন সমস্যা হবে না। কারণ, বিমান ও হেলিকপ্টার প্রায় ৫০০ মিটার উপর দিয়ে উড্ডায়ন করে।

পুলিশ সদর দফতরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সহেলী ফেরদৌস বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থেই পুলিশ এটি ব্যবহার করে। আগে ড্রোনের ব্যবহার ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে হচ্ছে। পুলিশের ড্রোন উড়ানোর ক্ষেত্রে কখনও নিরাপত্তা ঝুঁকির সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ নেই। তবে তাৎক্ষণিক কোনও সিদ্ধান্তে যখন ড্রোন উড়ানো হয়, সেক্ষেত্রে কখনও কখনও সিভিল অ্যাভিয়েশনের অনুমতি নিতে গেলে হয়তো অভিযানে বিলম্ব হয়ে যাবে। তাই কখনও কখনও সমন্বয় করা হয়ে উঠে না। তবে তাদের অবশ্যই বিষয়গুলো জানানো হয়। এবিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত হলে ভালো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, ড্রোন ওড়ানোর ৪৫ দিন আগে অনুমতি নিতে হয়। নির্ধারিত ফরমে আবেদন করলে সেটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে যাচাইবাছাই করে অনুমতি দেয় সিভিল এভিয়েশন। বর্তমানে প্রতিমাসে শতাধিক আবেদন জমা পড়ে।

২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ড্রোন উড্ডয়নে বিধিবিধান মানার অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)। তাতে বলা হয়, পরীক্ষামূলক ড্রোন বা রিমোর্ট কন্ট্রোল চালিত বিমান/হেলিকপ্টার আকাশে ওড়ানোর আগে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও বিমান বাহিনীর অনুমোদন নিতে হবে।

এদিকে নীতিমালা না থাকায় অবৈধভাবে দেশে ড্রোন আসছে। আর নীতিমালা না থাকায় আমদানির অনুমতি দিচ্ছে না বাণিজ্য মন্ত্রনালয়।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের নভেম্বরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ড্রোন আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর থেকেই বিভিন্ন সময়ে ঢাকা কাস্টম হাউস ও শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর বিমানবন্দর ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক ড্রোন জব্দ করে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈধপথে ড্রোন আমদানির সুযোগ দিতে নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 টিআর/ এআর


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি