শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লড়াইয়ে ফ্রান্স-বেলজিয়াম
প্রকাশিত : ১৭:২৬, ১০ জুলাই ২০১৮
মাত্র একটি ম্যাচের বাধা। পেরোতে পারলেই বিশ্বকাপে স্বপ্নের ফাইনাল। এমন একটি ম্যাচ যেকোনো ফুটবলারের আজন্ম স্বপ্ন; যে ম্যাচটি ইতিহাসে অমর করে দিতে পারে একজন ফুটবলারকে। সেই ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম। আজ রাত ১২টায় সেন্ট পিটার্সবার্গের লড়াইয়ে যে জিতবে, তারাই চলে যাবে ফাইনালে। তবে এ লড়াই কেবল দুটি দেশের লড়াই নয়। দুই দলের তারকাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের মঞ্চও এ ম্যাচ।
ফ্রান্স ও বেলজিয়াম কোনো দলেই তারকার অভাব নেই। একদিকে আতোয়াঁ গ্রিজম্যান-কিলিয়ান এমবাপ্পে-পল পগবারা যেমন পরীক্ষিত, বিপরীতে এডেন হ্যাজার্ড-কেভিন ডি ব্রুইন-রোমেলু লুকাকুরাও সময়ের অন্যতম সেরা। তাই সেমিফাইনালের লড়াইটি দুই দলের তারকা খেলোয়াড়দের লড়াইও বটে। আবার এদের মাঝেই হয়তো লুকিয়ে আছেন গোল্ডেন বলের বিজয়ীও। তবে সবার আগে তারকা খেলোয়াড়দের লক্ষ্য জ্বলে উঠে দলকে ফাইনালে তুলে দেয়া।
ফ্রান্স দলের আক্রমণভাগের মূল কাণ্ডারি গ্রিজম্যান। বিশ্বকাপের আগে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের এ তারকাকে নিয়ে আলোচনাও ছিল অনেক। তবে গ্রিজম্যানের শুরুটা সে অর্থে আলো ঝলমলে ছিল না। যদিও পেনাল্টির সুবাদে গোল পেয়েছিলেন প্রথম ম্যাচেই। এরপর বাকি দুই ম্যাচে নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন তিনি। তবে গ্রিজম্যানের আসল রূপ দেখা যেতে শুরু করে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচে মাঠজুড়ে দারুণ খেলেছেন এ তারকা অ্যাটাকার। ম্যাচের শুরুতে প্রথম গোলটিও এসেছে তার নিঁখুত পেনাল্টি থেকে। ম্যাচের বাকি সময়েও সপ্রভিত ছিলেন গ্রিজম্যান। কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যাচে জয়ের নায়কও তিনি। ফ্রি-কিক থেকে প্রথম গোলটিতে রাফায়েল ভারানেকে অ্যাসিস্ট করেছেন গ্রিজম্যান। দ্বিতীয় গোলটি এসেছে তার পা থেকেই। ডি-বক্সের বাইরে থেকে তার শটে বোকা বনেছেন উরুগুইয়ান গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরা। পাশাপাশি ম্যাচে সারা মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এ ফরাসি তারকা। এবার গ্রিজম্যানের সামনে সেমিফাইনালের চ্যালেঞ্জ।
গ্রিজম্যান যদি হয় ফ্রান্সের নিউক্লিয়াস, তবে বেলজিয়ামের আছেন হ্যাজার্ড। গোল্ডেন বল জয়ের তালিকায় তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে বেশ জোরেশোরেই। বিশ্বকাপের শুরু থেকেই উড়ছেন হ্যাজার্ড। দুটি গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন দুটি। অনটার্গেট শট নিয়েছেন পাঁচবার। গ্রুপ পর্বের ম্যাচ থেকেই উজ্জ্বল এ চেলসি মিডফিল্ডার। তাকে সেরা ছন্দে দেখা গেছে জাপানের বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে। দুই গোলে পিছিয়ে পড়া দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। একের পর এক আক্রমণে প্রতিপক্ষের সীমানায় ত্রাস ছড়িয়েছেন বারবার। অ্যাসিস্ট করেছেন একটি গোলে। এরপর ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচেও হ্যাজার্ড নিজের নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। সেদিন গোল কিংবা অ্যাসিস্ট করেননি। তবে যতক্ষণ হ্যাজার্ডের পায়ে বল ছিল, তটস্থ ছিল ব্রাজিলের ডিফেন্স। ম্যাচে ১০টি সফল ড্রিবল করেছেন এ নাম্বার টেন, যা ১৯৬৬ সালের পর সর্বোচ্চ। এবার সেমিফাইনালেও হ্যাজার্ডের জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় থাকবে দল। আর সেটি হলে কপাল পুড়তে পারে ফরাসিদের।
এক ম্যাচেই সাফল্যের চূড়া দেখেছেন এমবাপ্পে। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে তার পারফরম্যান্স মনে থাকবে আরো অনেকদিন। সে ম্যাচে গতি ও বলের ওপর নিয়ন্ত্রণের জাদু দেখিয়ে লাতিন জায়ান্টদের কাঁপিয়ে দিয়েছেন এমবাপ্পে। দুটি গোল করার পাশাপাশি আদায় করেছেন একটি পেনাল্টিও। এছাড়া গোল করার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন আরো কয়েকবার। সে ম্যাচের পর থেকে তাকে তুলনা করা হচ্ছে কিংবদন্তি পেলের সঙ্গেও। পেলের পর সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে জোড়া গোল করেছেন এমবাপ্পে। শেষ আটের ম্যাচে সেভাবে পারফর্ম করতে না পারলেও এবার সেমিফাইনালে তাকে সেরা ছন্দে দেখার অপেক্ষায় থাকবে ফরাসি সমর্থকরা।
অবশ্য এমবাপ্পের জবাব তৈরি আছে বেলজিয়ামের কাছেও। কোয়ার্টারে ডি ব্রুইনের পারফরম্যান্সের পর নিশ্চয়ই আলাদাভাবে ভাবতে হচ্ছে ফ্রান্সকে। সেদিন লুকাকুর পাস থেকে তার দুর্দান্ত গোলেই ব্যবধান দ্বিগুণ করে বেলজিয়াম। সে ম্যাচে অনটার্গেট দুটি শট নেয়ার পাশাপাশি পাস দেন ৪২টি। আগের ম্যাচগুলোতে তেমন ছন্দে দেখা না গেলেও ম্যানচেস্টার সিটির এ তারকা খেলোয়াড় ব্রাজিল ম্যাচ দিয়ে নিজের জাত চিনিয়েছেন।
এছাড়া অন্যদের মধ্যে লুকাকুও চাইবেন সেমিফাইনালে আলো ছড়াতে। এখন পর্যন্ত চার গোল করেছেন লুকাকু। করেছেন একটি অ্যাসিস্টও। তবে জাপানের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে জয়সূচক গোলে তার ডামিটিও কোনো অংশে অ্যাসিস্টের চেয়ে কম নয়। অন্যদিকে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত নিজেদের ছায়ায় পল পগবা ও অলিভিয়ের জিরুরা। তবে দুজনই বড় মঞ্চের তারকা। কে জানে, আজকেই হয়তো নিজেদের সেরাটা মেলে ধরবেন এ দুজন।
শেষ পর্যন্ত এসব তারকার ওপরই নির্ভর করছে দুই দলের সফলতা-ব্যর্থতা। চাপ সামলে যারা জ্বলে উঠবেন, তারাই হয়ে উঠবেন মহাতারকা।
টিআর/ এআর