সংকট উত্তরনে ৫ পরামর্শ
প্রকাশিত : ২২:২৭, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০
এক ছিল বুড়িমা। তার দুটিই মেয়ে। বড় মেয়ের জামাই একজন ছাতা বিক্রেতা। আর ছোট মেয়ের জামাই সেমাই বানিয়ে বিক্রি করে। এই বুড়িমাকে কেউ কখনো হাসতে দেখে নি। সারাক্ষণই সে শুধু কাঁদত। যখন রোদেলা দিন তখন বড় মেয়ের কথা মনে করে। আর বৃষ্টির দিনে ছোট মেয়ের কথা মনে করে। কারণ রোদ হলে বড় মেয়ের জামাইয়ের ছাতার বিক্রি তেমন ভালো হয় না। আর গ্রীষ্ম ফুরিয়ে বৃষ্টির দিন যখন আসে তখন আবার ছোট মেয়ের জামাইয়ের ব্যবসায় মন্দা যায়। দুই মেয়ের কথা ভেবে গ্রীষ্ম বা বর্ষা কোনোসময়ই তার কোনো সুখ ছিল না।
একদিন এক সাধুর সাথে তার দেখা হলো। সাধু যখন জানতে চাইলেন সে কেন এভাবে সবসময় কাঁদে। সে ঘটনা বলল। সাধু বললেন, এখন থেকে তুমি তোমার চিন্তাটাই বদলে ফেল। রোদের দিন তুমি তোমার বড় মেয়ের কথা ভাববে না। ভাববে ছোট মেয়ের কথা। কত সুন্দর করে সে এই চমৎকার রোদে সেমাই শুকোচ্ছে। আর গ্রীষ্ম শেষে যখন বর্ষা আসবে, ভাববে বড় মেয়ের কথা। যে এখন দেদারসে ছাতা বিক্রি করছে। তখন ছোট মেয়ের কথা মনে করার দরকার নেই। বুড়িমা তা-ই করল। সমাধানও হয়ে গেল তাড়াতাড়ি। এখন আর তাকে কাঁদতে হয় না। সাধুর পরামর্শ তার কান্না থামিয়েছিল।
এত যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, এটি আমরা নেই কখন? যখন কোনো সমস্যায় পড়ি। সংকট চলে আসে সামনে। সমাধানের পথ খুঁজতে গিয়ে হিমশিম খাই আমরা। মনোবিদদের মতে, এই ধরনের সমস্যায় প্রথমেই সমস্যাগুলোকে ভয় না পেয়ে বন্ধু ভেবেই সমাধানের পথ ভাবতে বসা উচিত। সমস্যাকে যত এড়িয়ে যেতে চাইবেন, তা সাময়িক মুক্তি দিলেও অন্য সমস্যার আকারে ফের দেখা দেবে। একসঙ্গে অনেক নয়, বরং এক এক করে সমাধান করতে হবে। এ বিষয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের কয়েকটি পরামর্শ-
১। প্রথমে ভালো করে ভেবে দেখুন, সত্যিই কি কোনো সমস্যা হয়েছে, না এটা আপনার বোঝার ভুল। খাতা–কলম নিয়ে লিখতে বসে যান। যে যে কারণে মন বিক্ষিপ্ত, তা পর পর লিখুন। পাশাপাশি তার কারণগুলো লিখলেও সত্যি কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
২। একাধিক সমস্যা পাওয়া গেলে সেগুলোকে পর পর লিখুন। দেখুন এর মধ্যে কোনটা এখনই সামলাতে হবে। কোনটা পরে করলেও চলবে। আর কোনটার সমাধান হাতের বাইরে, অন্তত এই মুহূর্তে।
৩। হাতের বাইরের সমস্যার কথা আপাতত ভুলে যান। এখনই যা সামলানো দরকার, তা নিয়ে ভাবুন। একসঙ্গে একাধিক সমস্যার কথা ভাববেন না। গুরুত্বের ভিত্তিতে যে-কোনো একটিকে চিহ্নিত করে নিন।
৪। সমস্যাটাকে ভালো করে বুঝুন। দরকার হলে কাগজে লিখুন বা এ ব্যাপারে দক্ষ কারো সঙ্গে আলোচনা করুন। সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে পরামর্শ করলে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হতে পারে। তবে কার সাথে পরামর্শ করছি, সেটা নির্বাচন করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে একটি গল্প বলি-
৫। কী কী সমাধান হতে পারে তা দেখুন। ধরুন কর্মক্ষেত্রে জটিলতা এতই বেড়েছে যে, সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কী করবেন? বসের দ্বারস্থ হবেন? সমঝোতা করবেন নাকি নতুন চাকরি খুঁজবেন? একইভাবে অন্য যে-কোনো সমস্যায় সম্ভাব্য সমাধান কী কী হতে পারে তা পর পর লিখুন।
৬। এবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে যতটা সম্ভব যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। দেখতে হবে, সিদ্ধান্ত নিলে কী কী সুবিধা আর না নিলে কী কী অসুবিধা। চাইলে সুবিধা আর অসুবিধাগুলো এক, দুই, তিন, চার-এভাবে পয়েন্ট করে নিতে হবে। যেদিকের পাল্লা ভারী হবে অর্থাৎ সুবিধা বেশি হলে সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে হবে আর অসুবিধা বেশি মনে হলে কিছুটা সময় নিয়ে ফিরে আসতে হবে। আর সবসময় বলতে হবে যে, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে যেখানেই নাও, সত্য ও কল্যাণের সাথে নাও। আর যেখান থেকেই ফিরিয়ে নাও, সত্য ও কল্যাণের সাথে ফিরিয়ে নাও। তোমার অসীম শক্তি দিয়ে আমাকে সাহায্য করো।’
আরকে//