ঢাকা, শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

সংকুচিত সংস্কৃতি চর্চা, বাড়ছে ধর্মান্ধতা

শিউলি শবনম

প্রকাশিত : ১৩:৪১, ১১ জুলাই ২০২৪

সংস্কৃতি চর্চা সংকুচিত হয়ে পড়ায় সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা বাড়ছে বলে মনে করেন বিশিষ্ঠজনেরা। তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারানোর পথে বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ফলে সাম্প্রদায়িকতার বাসা বাধছে সাধারণ মানুষের মনে। এ অবস্থায় সংস্কৃতিচর্চাকে উন্মুক্ত করতে তাগিদ এসেছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার।

খুব বেশি দিন আগে নয়, ঢাকার পরিচিতি ছিল ‘বাঙালি সংস্কৃতির মেগাসিটি’ হিসেবে। মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বাংলা নববর্ষ উদযাপন অসাম্প্রদায়িক বাঙালি সংস্কৃতির অনন্য এক উদাহরণ। কিন্তু কালক্রমে সীমিত হয়ে এসেছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, “পথনাটক হতো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। সারা দেশ থেকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দল আসতো, পথনাটক করতো। কিন্তু সেই জায়গাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আজকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মডেল তৈরি হচ্ছে কিন্তু এখনও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কোনো মডেল হয়নি।”

শিক্ষাবিদ ও নাট্যকার ড. রতন সিদ্দিকী বলেন, “খুব দুর্ভাগ্য আমাদের, বাংলাদেশে এখন সংস্কৃতি চর্চাটা খুবই সীমিত হয়ে গেছে। পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৬টার পর আর করতে পারবেনা অথচ আমার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছে, আমার জাতিসত্তাকে ধ্বংস করছে- সেটি কিন্তু সারারাত ধরে চলছে।”

বিশিষ্টজনেরা বলছেন, দুই দশক আগেও দেশে তিনশরও বেশি যাত্রাদল ছিল। হাতের মুঠোয় তথ্য প্রযুক্তি আসায় বিনোদনও সহজপ্রাপ্য হয়েছে। সেইসঙ্গে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে যাত্রাদলের সংখ্যা এখন হাতেগোণা। এর বাইরেও হারিয়ে গেছে নৌকা বাইচ, সার্কাস কিংবা পুতুল নাচের মতো গ্রামীণ বিনোদনের উৎসগুলো। 

শিক্ষাবিদ ও লেখক জাফর ইকবাল বলেন, “যখন আমাদের দেশে গ্রামে যাত্রা হতো, প্রত্যেকটা গ্রামে থিয়েটার হতো, নাটক হতো। ছেলেমেয়েরা তাতে অংশ নিতো। সেগুলো এখন আর নাই।”

বাঙালি সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসায় মানুষ ঝুঁকছে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার পথে। সংকট উত্তরণে সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ অবারিত করার পাশাপাশি বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ বিশিষ্টজনদের।

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, “একটা মানুষকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ করতে পারে সে যদি সংস্কৃতিবান হয়, নচেৎ সে কিন্তু পূর্ণাঙ্গ মানুষ না। কাজেই আমরা চাই স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে বাচ্চা, সাধারণ মানুষ, চাষী-কৃষক-জেলে সবাই যেন সংস্কৃতিতে অংশ নিতে পারে। সেরকম একটা দেশ আমি চাই।”

ড. রতন সিদ্দিকী বলেন, “সংস্কৃতি চর্চা যখন সীমিত হয় তখন মানুষ অন্ধ হয়, অন্ধকার, মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি দানা বেঁধে ওঠে। সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ উন্মুক্ত করতে হবে, অবারিত করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে।”

সংস্কৃতির বিকাশে বড় আয়োজনের পাশাপাশি সারাদেশে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সংগঠন, ক্লাবগুলোকে উৎসাহ দেয়ারও তাগিদ তাঁদের।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি