সংবিধান, মহামারী এবং জরুরী অবস্থা: একটি পর্যালোচনা
প্রকাশিত : ১৬:৫৫, ২৪ মে ২০২০ | আপডেট: ১৬:৫৬, ২৪ মে ২০২০
সম্প্রতি বেশ কয়েকজন পণ্ডিত, গবেষক এবং আইনজীবী মত প্রকাশ করেছেন যে বর্তমানে দেশে কোভিড-১৯ নামক মহামারী নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে বৈধতা দানের জন্য এবং অধিকতর পদক্ষেপ গ্রহণ করার সুবিধার্থে জরুরী-অবস্থা জারি করা প্রয়োজন। তাদের অনেকের মতে মহামারী হতে উদ্ভুত পরিস্থিতি সংবিধানে ১৪১ক অনুচ্ছেদে উল্লেখিত ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স (অভ্যন্তরীণ গোলযোগ) এর অর্থে গ্রহণ করা যায় বিধায় তা জরুরী অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রযোজ্য শর্ত পূরণ করে। এ প্রবন্ধের লেখক সঙ্গত কারণেই এক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করে যা নিচে আলোচনা করা হলো।
প্রথমেই বলা উচিত যে ইংরেজি ‘ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স’ শব্দটির সু-প্রতিষ্ঠিত আইনগত অর্থ বিদ্যমান আছে অথচ বাংলা শব্দ ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগ’ এর কোন বিশেষ আইনগত তাৎপর্য নেই। প্রতীয়মান হয় যে ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগ’ শব্দটিকে ‘ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স’ এর বাংলা পরিভাষা হিসেবেই গ্রহণ করা হয়েছে। উপমহাদেশের পাবলিক আইনে ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স শব্দটির উপস্থিতি বেশ পুরনো। দেখা যায়, দি গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া এ্যাক্ট, ১৯৩৫-এ গভর্নর জেনারেল কর্তৃক জরুরী অবস্থা ঘোষণার পূর্বশর্ত হিসেবে যুদ্ধ বা ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স এর উল্লেখ আছে (দ্র. ধারা ১০২)। পূর্ববর্তী দি গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া এ্যাক্ট, ১৯১৯-এ জরুরী-অবস্থার উল্লেখ থাকলেও ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স শব্দটি অনুপস্থিত। পরবর্তীকালে ভারত এবং পাকিস্তানের সংবিধানে ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স শব্দটির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ভারতের সংবিধানে অবশ্য পরবর্তীকালে জরুরী-অবস্থা ঘোষণার পূর্বশর্ত হিসেবে ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স শব্দটি সশস্ত্র বিদ্রোহ (আর্মড রিবেলিয়ন) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। পাকিস্তানের সংবিধানে ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স জরুরী অবস্থা ঘোষণার পূর্বশর্ত হিসেবে বিদ্যমান আছে। লক্ষণীয় যে, জরুরী-অবস্থা ঘোষণার পূর্বশর্ত হিসেবে উপর্যুক্ত আইনগুলোতে যখন ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স সন্নিবেশিত হয়েছে তখন তা যুদ্ধ এবং বহিরাক্রমণের সাথে এক কাতারে স্থান পেয়েছে। উল্লেখ্য যে, যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ প্রভৃতি আন্তর্জাতিক হিউম্যানিটারিয়ান আইনের অধিভুক্ত বিষয় হিসেবে পরিগণিত।
আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি ১৯৫০-এর দশক থেকেই হিউম্যানিটারিয়ান প্রেক্ষাপট থেকে মোটামুটিভাবে একটি নির্দিষ্ট অর্থদ্যোতক টার্ম হিসাবে ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স শব্দটি ব্যবহার করার চেষ্টা করে এসেছে। ১৯৫৫ সালে ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স এর ক্ষেত্রে হিউম্যানিটারিয়ান মানদণ্ড প্রয়োগ অনুসন্ধানের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠিত হয়েছিল। পরবর্তী বছরগুলোতে বিভিন্ন কমিশন এবং রেডক্রস কনফারেন্সগুলোতে ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স এর সংজ্ঞা, আওতা ও অন্যান্য বিভিন্ন দিক আলোচিত হতে থাকে। ১৯৭১ সাল নাগাদ ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স শব্দটি মোটামুটি সুনির্দিষ্টভাবেই সশস্ত্র-সংঘাত নয় এমন অভ্যন্তরীণ রায়ট বা বিরোধ বা গোলযোগপূর্ণ বা হিংসাত্মক অবস্থা নির্দেশক টার্ম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। পরবর্তীতে ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স শব্দটি জেনেভা কনভেনশন, ১২ আগস্ট ১৯৪৯-এর এডিশনাল প্রোটকলের (প্রোটোকল নং-২, ৮ই জুন ১৯৭৭) ১.২ নং অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত হয়।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে অন্তত দুটি জিনিস প্রতীয়মান হয় - (১) ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স শব্দটির সুনির্দিষ্ট অর্থদ্যোতকতা প্রচলিত আছে, এবং (২) অন্তত ব্রিটিশ-উপনিবেশিক শাসনামলে প্রণীত উপমহাদেশের পাবলিক আইনে বা আন্তর্জাতিক হিউম্যানিটারিয়ান আইনে যে অবস্থার নির্দেশক হিসেবে ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা মহামারী সৃষ্ট অবস্থা ইঙ্গিত করে না। এখন প্রশ্ন হলো, আমাদের সংবিধানের প্রেক্ষিতে ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগ শব্দটিকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত? অর্থাৎ, সংবিধান ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স শব্দটি যে অর্থদ্যোতকতা সহকারে ইতিমধ্যেই প্রচলিত ও গৃহীত হয়েছে তার আলোকে ব্যাখ্যা করতে হবে, নাকি তাকে সাধারণ এবং ব্যাপকতর অর্থবোধক শব্দ হিসাবে গ্রহণ করা উচিত হবে? এক্ষেত্রে যুক্তি হলো সাধারণভাবে কোন আইনগত শব্দ বা টার্ম, তা আইনের যে শাখারই অধিভুক্ত হোক না কেন, যখন সুনির্দিষ্ট অর্থ পরিগ্রহ করে এবং গ্রহণযোগ্যতা পায়, তখন উক্ত শব্দ বা টার্মটি যদি অন্য যে কোন আইনের টেক্সটে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তবে তা আইনসভার ভিন্ন উদ্দেশ্যের সুস্পষ্ট উপস্থিতির অবর্তমানে প্রচলিত অর্থেই গ্রহণ করা হয়েছে বলে ধরে নেয়া উচিত।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৫ক অনুচ্ছেদে ‘আন্তর্জাতিক চুক্তি’ (বা বিদেশের সহিত সম্পাদিত চুক্তি) বা ‘ট্রিটি’ শব্দের উল্লেখ আছে। আন্তর্জাতিক চুক্তি বা ট্রিটি শব্দটি সংবিধান বা জেনারেল ক্লজেস এ্যাক্ট, ১৮৯৭-এ ব্যাখ্যা করা হয় নাই। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো আন্তর্জাতিক চুক্তি বা ট্রিটি শব্দটি আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে ব্যাখ্যা করা উচিত হবে, নাকি শুধু সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য শব্দটিকে সাধারণ কিন্তু ব্যাপকতর অর্থে ব্যাখ্যা করা যুক্তিসঙ্গত হবে? উত্তর হলো আন্তর্জাতিক চুক্তি বা ট্রিটি শব্দটিকে আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে যদি সাধারণ এবং ব্যাপকতর অর্থে গ্রহণ করা হয় তাহলে সংবিধানের ১৪৫ক অনুচ্ছেদের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব হয়ে পরবে। একইভাবে, ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স শব্দটি তার প্রচলিত অর্থ অনুসারেই ব্যাখ্যা করা উচিত (যা মহামারী অবস্থা নির্দেশ করে না)। এর একটি কারণ হলো, আমাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পূর্বেই উপর্যুক্ত শব্দটি একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ পরিগ্রহ করেছে এবং তা বহুল গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এবং দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে জরুরী-অবস্থা ঘোষণা সংক্রান্ত বিধানাবলী (অনুচ্ছেদ ১৪১ক-১৪১গ) যখন সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়েছিল তখন ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স শব্দটিকে তার প্রচলিত অর্থ থেকে ভিন্নতর বা ব্যাপকতর অর্থে গ্রহণ করা হয়েছিল এমন কোন উদ্দেশ্য বা ইঙ্গিত তৎকালীন আইনসভার কার্যবিবরণী থেকে পাওয়া যায় না।
উপরিউক্ত মতামতের স্বপক্ষে শক্ত পরমকারণমূলক (টেলিওলজিক্যাল) যুক্তি বিদ্যমান আছে। যদি ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স শব্দটিকে ব্যাপকতর অর্থে গ্রহণ করা হয় তাহলে তা কার্যত জরুরী-অবস্থা জারির ক্ষেত্র প্রসারিত করবে। অর্থাৎ, আজ যদি মহামারীর কারণে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়, তাহলে কাল অন্য কোন লঘুতর কারণে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হতে পারে। এভাবে জরুরী অবস্থা ঘোষণার ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের ওপর আরোপযোগ্য আইনগত সীমারেখা শিথিল হয়ে পরবে। এটা একদিকে যেমন নির্বাহী বিভাগের জরুরী অবস্থা ঘোষণা করার ক্ষমতা বিস্তৃত করবে, আবার অন্যদিকে উক্ত বিভাগের জবাবদিহিতার দায়বদ্ধতা হ্রাস করবে। যেহেতু জরুরী অবস্থা ঘোষণার অনুষঙ্গ হিসেবে বাংলাদেশে মৌলিক অধিকারসমূহ বলবৎকরণের অধিকার স্থগিত করা হয়ে থাকে তাই তা ঘোষণার ক্ষেত্রে আইনগত সীমারেখা শিথিল হলে সমূহ সম্ভাবনা আছে যে ব্যক্তির মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রযোজ্য সাংবিধানিক নিশ্চয়তা অপেক্ষাকৃত কম সুরক্ষা পাবে।
জরুরী অবস্থা বিষয়ক আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ এ প্রবন্ধে আলোচনা করতে চাই। তা হলো জরুরী অবস্থা জারির ন্যায্যতা আদালতে বিচার্য হতে পারে কি না? এবং, জরুরী অবস্থা জারির ন্যায্যতা নির্ধারণের বিচারিক মানদণ্ড (স্ট্যান্ডার্ড অব রিভিউ) কি হবে? প্রথম প্রশ্নটি মূলত আদালতের এখতিয়ারের সাথে সম্পর্কিত এবং তা নির্ধারিত হবে প্রযোজ্য সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে সংবিধানের ১৪১ক অনুচ্ছেদে। যত্নসহকারে ১৪১ক অনুচ্ছেদের পাঠ লক্ষ্য করলে দেখা যায়, জরুরী অবস্থা এবং জরুরী অবস্থা ঘোষণা আদতে দুটো আলাদা বিষয়। জরুরী অবস্থা যে কোন কারণে উদ্ভব হতে পারে; কিন্তু জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে হলে ১৪১ক অনুচ্ছেদে উল্লেখিত দুটো ভিন্ন ধরনের শর্ত একত্রে পূরণ হওয়া আবশ্যক। প্রথমত, যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ অথবা ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্স (অভ্যন্তরীণ গোলযোগ) প্রভৃতির উদ্ভব হওয়া অথবা আসন্ন হওয়া। আইনানুসারে যুদ্ধ প্রভৃতি জরুরী অবস্থা উদ্ভব হওয়ার সরাসরি কারণ বিধায় এদের কারণ-ভিত্তিক শর্তাবলী বলা যায়। দ্বিতীয়ত, প্রথমোক্ত কারণ বা কারণসমূহ বিদ্যমান থাকা অথবা আসন্ন হওয়ার ফলে বাংলাদেশ বা এর যে কোন অংশের নিরাপত্তা (সিকিউরিটি) বা অর্থনীতির (একোনোমিক লাইফ) বিপদের সম্মুখীন হওয়া বা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়া। যেহেতু রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক বিপন্নতা কারণ-ভিত্তিক শর্তাবলী হতে উদ্ভুত হতে হবে সেহেতু এদের ফলাফল-ভিত্তিক শর্তাবলী বলা যেতে পারে। তবে এখানে উল্লেখ্য যে, আসন্ন যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ এবং অভ্যন্তরীণ গোলযোগের ক্ষেত্রে শুধু নিরাপত্তার বিপন্নতা হেতু জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা যাবে।
সংবিধানের ১৪১ক অনুচ্ছেদে উল্লেখিত ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির শর্তাবলীর জন্য আলাদা বিচারিক মানদণ্ড প্রযোজ্য হতে পারে। জরুরী অবস্থা জারির ক্ষেত্রে কারণ-ভিত্তিক শর্তগুলো পূরণ হয়েছে কি না তা আদালত প্রকরণগত (ফর্মাল) এবং বস্তুনিষ্ঠ (সাবস্ট্যানটিভ) - উভয় প্রকারেই যাচাই করতে পারেন। প্রকরণগত যাচাই বলতে এখানে বুঝিয়েছি যে জরুরী অবস্থা জারির ঘোষণার ক্ষেত্রে কারণ-ভিত্তিক শর্ত যথাযথভাবে উল্লেখ বা দাবি করা হয়েছে কি না তা নিরীক্ষা করা। বস্তুনিষ্ঠ যাচাই বলতে বুঝিয়েছি যে জরুরী অবস্থা জারির ক্ষেত্রে উক্ত শর্তগুলোর আইনগত অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। এখানে লক্ষণীয় যে, কারণ-ভিত্তিক শর্তসমূহ যথা, যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ এবং অভ্যন্তরীণ গোলযোগ প্রভৃতি হলো লিগ্যাল/জুরিডিক্যাল টার্ম বা কনসেপ্ট। এ টার্মগুলোর সুনির্দিষ্ট আইনগত প্রায়োগিক অর্থবাচকতা আছে। এর ফলে আদালতের পক্ষে এ সমস্ত শর্ত যথাযথভাবে পূরণ হয়েছে কি না তা যাচাই করে দেখা সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আইনসভা কর্তৃক সংবিধানের ৬৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যুদ্ধের ঘোষণা না করা স্বত্ত্বেও যদি যুদ্ধের অজুহাতে জরুরী অবস্থা জারি করা হয় তাহলে তা আপাতদৃষ্টিতে প্রকরণগতভাবে আইনের অনুবর্তী হলেও বস্তুনিষ্ঠভাবে সঠিক হবে না। ফলে, জরুরী অবস্থার ঘোষণার বৈধতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে কারণ-ভিত্তিক শর্ত মানা হয়েছে কি না তা আদালত বস্তুনিষ্ঠ যাচাইয়ের মাধ্যমে নির্ণয় করতে পারবে।
অন্যদিকে ফলাফল-ভিত্তিক শর্তগুলো যথা, ‘নিরাপত্তা’ এবং ‘অর্থনৈতিক বিপন্নতা’ প্রভৃতি শব্দের অর্থ ও তাৎপর্য অতিশয় ব্যাপক। জরুরী অবস্থার প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক বিপন্নতা ইত্যাদি শব্দগুলোর তেমন কোন লিগ্যাল/জুরিডিক্যাল তাৎপর্য নেই। বরঞ্চ, এগুলো মূলত দেশের বা এর কোন অংশের সামষ্টিক পরিস্থিতির বাস্তবভিত্তিক মূল্যায়ন নির্দেশ করে। যার ফলে এ-শর্তগুলোকে বস্তুনিষ্ঠভাবে যাচাই করা আদালতের পক্ষে অভিপ্রেত নাও হতে পারে। এমতাবস্থায়, জরুরী অবস্থা ঘোষণার বৈধতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ফলাফল-ভিত্তিক শর্ত মানা হয়েছে কি না তা নির্ণয়ে আদালত প্রকরণগত যাচাই প্রক্রিয়া সমীচীন মনে করতে পারে। উল্লেখ্য যে, জরুরী অবস্থা ঘোষণার বৈধতার জন্য কারণ-ভিত্তিক এবং ফলাফল-ভিত্তিক শর্তসমূহ সঠিকভাবে পূরণ হওয়া আবশ্যক।
পরিশেষে বলতে চাই যে জরুরী অবস্থা ঘোষণার ক্ষেত্রে যে কোন সরকারের জন্য শুধু আইনগত কারণ বিদ্যমান থাকাই যথেষ্ট নয়, বরং এর রাজনৈতিক যথার্থতাও (জাস্টিফিকেশন) থাকতে হয়। যারা বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরী অবস্থা ঘোষণার পক্ষপাতী তাঁরা সম্ভবত এ দিকটি উপেক্ষা করেছেন। লক্ষণীয় যে, দেশের জনসাধারণ লকডাউন পুরোপুরি মেনে চলতে সমর্থ না হলেও নীতিগতভাবে লকডাউনের প্রয়োজনীয়তা মেনে নিয়েছেন। এমতাবস্থায়, জরুরী অবস্থা ঘোষণা করার কোন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আছে বলে মনে হয় না। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামলে মহামারী সামাল দেওয়ার জন্য সাধারণ আইনের বিধানকে যথেষ্ট মনে করা হলে স্বাধীন প্রজাতান্ত্রিক গণতন্ত্রে তা কেন যথেষ্ট বলে পরিগণিত হবে না? মহামারী সামাল দেওয়ার জন্য বিদ্যমান আইনি কাঠামোতে কোন ঘাটতি থাকলে তা সৃজনশীলতার মাধ্যমেই কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
একে//
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।