ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪

বিবিসির বিশ্লেষণ

সংলাপে আ. লীগ কেন সাড়া দিল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:২৬, ১ নভেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৫:৩২, ১ নভেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে বহুল প্রতীক্ষিত রাজনৈতিক সংলাপ শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আজ সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের বৈঠকের মধ্য দিয়ে এ সংলাপ শুরু হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে জাতীয় পার্টি, যুক্তফ্রন্ট, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ক্ষমতাসীন দল। 

নির্বাচনকালীন সরকারসহ ঐক্যফ্রন্টের সাত দফাসহ আরও নানা বিষয়ে আলাপ হওয়ার কথা রয়েছে আজ। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বিএনপির পক্ষ থেকে সংলাপে বসার আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করার পর এখন কেন সংলাপে রাজি হয়েছে আওয়ামী লীগ?

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টের কারণে সংলাপে রাজি হয়েছে তার দল।

‘বিএনপির সঙ্গে সরাসরি সংলাপে বসার ব্যপারে আওয়ামী লীগ আগ্রহ প্রকাশ করেনি। বিএনপি রাজনৈতিকভাবে যেহেতু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের আশ্রয় দেওয়া প্রশ্রয় দেওয়া এবং এরপর ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকা-এ সব কারণেই বিএনপির সঙ্গে বসার মত যৌক্তিক কোনও পরিবেশ ছিল না।’

‘এখন যেহেতু ঐক্যফ্রন্ট একটা নতুন নেতৃত্ব এসেছে, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগ বসবে। ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা করেই হয়তো আমার মনে হয় যে তারা যদি নির্বাচনে যায়, সে ব্যপারে আমাদের একটা পরামর্শ থাকবে বা আলোচনার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্তে আসবে।’

বিশ্লেষকদেরও অনেকে মনে করেন, আওয়ামী লীগের এখন সংলাপে বসার বড় কারণই হচ্ছে, সংলাপটি সরাসরি বিএনপির সঙ্গে হচ্ছে না। বরং হচ্ছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন একটি জোটের সঙ্গে।

তারা বলছেন, যে কারণে আওয়ামী লীগের এতদিনের যে অবস্থান, যে তারা বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় না, সেটি একভাবে ঠিক রেখেই আলোচনায় বসা যাচ্ছে, সেটি আওয়ামী লীগের জন্য এক ধরনের রাজনৈতিক স্বস্তি।

একই সঙ্গে তারা এও মনে করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকেও হয়তো চাপ রয়েছে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যপারে।

কারণ বিএনপিকে ছাড়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের মতো আরেকটি নির্বাচন হলে সেটি হয়ত আন্তর্জাতিক মহল মেনে নেবে না, যা আওয়ামী লীগের জন্য একটি চাপ হয়ে উঠতে পারে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলছেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হয়তো একটা চাপ আছে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই বলেছে যে তারা নির্বাচনে কোনও অবজারভার পাঠাবে না। কোন কারণ বলেনি। কিন্তু এটা একটা ইন্ডিকেশন।’

‘২০১৪ সালের নির্বাচনটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মেনে নিয়েছিল। কারণ আওয়ামী লীগ সফলভাবে চিত্রায়িত করতে পেরেছিল যে বিএনপি একটা জঙ্গি দল। কিন্তু এখন গত পাঁচ বছরে দেশে ‘গভর্নেন্সের’ যে চেহারা! এজন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়-সেটা একটা চাপ হতে পারে,’ বলেন তিনি।

সংলাপে বসার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ভোটারদের মধ্যে আস্থা বাড়াতে সক্ষম হবে বলেও অনেক বিশ্লেষক মনে করেন।

গত কয়েক বছর ধরেই আওয়ামী লীগ বলে এসেছে, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সংবিধানে যা বলা আছে, সেটিই চূড়ান্ত। ফলে এ নিয়ে সংলাপের কোনও দরকার নেই।

এ মাসের মাঝামাঝি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর এই জোট যখন তাদের সাত দফা ঘোষণা করে, তখনও আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছিলেন, এ নিয়ে আলোচনার কিছু নেই।

ফলে দশম জাতীয় সংসদের অধিবেশন যে দিন শেষ হলো, সে দিন সংলাপে সম্মতি জানিয়ে দলটির ঘোষণায় বিস্মিত হয়েছিল খোদ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও।

কিন্তু বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ মনে করেন, নিজের প্রয়োজনেই আওয়ামী লীগ সংলাপে রাজি হয়েছে।

‘এটা একটা কৌশল হতে পারে যে সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করার জন্য সরকার একটা উদ্যোগ নিয়েছে। আরেকটা কারণ হতে পারে যে, তারা হয়তো উপলব্ধি করেছেন, বর্তমান যে সংকট তা সংলাপ ছাড়া সমাধান করা সম্ভব নয়।’

‘একটা সমঝোতায় এসে যদি সবাই মিলে আমরা একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারি, সেটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে, তাদের জন্যও মঙ্গলজনক হবে।’

গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশের যাত্রার সময় থেকে প্রায় প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নিরসনে সংলাপ বা আলোচনার আয়োজন দেখা গেছে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফলাফল শূন্য হলেও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা এবারের সংলাপে সমঝোতার মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সূত্র: বিবিসি

একে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি