ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

সঠিকভাবে হাত ধোয়ার নিয়ম

ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দীন

প্রকাশিত : ১০:০৪, ১৫ অক্টোবর ২০২০

আজ বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস। প্রতিবছর ১৫ অক্টোবর এটি পালিত হয়। ২০০৮ সাল থেকে পালিত হচ্ছে। এ দিবসের উদ্দেশ্য মানুষকে সচেতন করা। 

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মতো শ্বাসতন্ত্রে আক্রমণকারী ভাইরাসগুলো তখনই ছড়ায় যখন তা চোখ, নাক বা গলার শ্লেষ্মার মধ্য দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হাতের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। ভাইরাসটি একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমণের প্রধান মাধ্যমও হাত।

বিশ্ববাপী মহামারী আকারে যখন ভাইরাসটি ছড়ায় তখন এর বিস্তার রোধের সবচেয়ে সহজ, সাশ্রয়ী ও কার্যকর উপায়গুলোর একটি হল ঘনঘন সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া।

সঠিকভাবে হাত ধোয়ার বিষয়ে বিস্তারিত নিচে তুলে ধরা হল:

১. কেমন করে আমি ঠিকমতো হাত ধোব?

হাতকে পুরোপুরি ভাইরাস মুক্ত করতে হলে ঝটপট হাতে সাবান মাখানো ও আলতোভাবে ধুয়ে ফেলায় কাজ হবে না। কার্যকর হাত ধোয়ার পদ্ধতি প্রতিটি ধাপ নিচে উল্লেখ করা হলো।

প্রথম ধাপ: প্রবাহমান পানি দিয়ে হাত ভেজানো।

দ্বিতীয় ধাপ: ভেজা হাতের পুরোটায় ভালোভাবে সাবান মাখানো।

তৃতীয় ধাপ: অন্তত ২০ সেকেন্ড হাতের সামনের ও পেছন ভাগ, আঙুলগুলোর মধ্যে ও নখের নিচের অংশ ভালোভাবে ঘষতে হবে।

চতুর্থ ধাপ: প্রবাহমান পানি দিয়ে পুরো হাত ভালোভাবে কচলে ধুয়ে নিতে হবে।

পঞ্চম ধাপ: পরিষ্কার কাপড় বা শুধু এককভাবে ব্যবহার করা হয় এমন তোয়ালে দিয়ে হাত মুছে নিতে হবে।

২. কতক্ষণ ধরে হাত ধুতে হবে?

অন্তত ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে হাত ধোয়া উচিত। পর্যাপ্ত সময় দিয়ে হাত ধোয়া নিশ্চিত করতে হ্যাপি বার্থডে গানটি পুরোটা দুই বার গাওয়ার সময় নেওয়া যায়।

হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহলসমৃদ্ধ স্যানিটাইজার নিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় ধরে তা হাতের পুরোটায় মাখাতে হবে।

৩. কখন হাত ধোয়া উচিত?

কোভিড-১৯ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত সময়গুলোতে হাত ধোয়া নিশ্চিত করতে হবে:

নাক ঝাড়া এবং হাঁচি ও কাশি দেওয়ার পর।

গণপরিবহন, বাজার বা উপাসনালয়ের মতো জনসমাগমস্থল ঘুরে আসার পর।

ঘরের বাইরের কোনো কিছু স্পর্শ করে, এমনকি টাকা ধরার পরেও।

কোনো অসুস্থ লোককে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়ার আগে, নেওয়ার সময় এবং নেওয়ার পরে।

খাওয়ার আগে ও খাওয়ার পরে।

আর স্বাভাবিক অবস্থায় নিম্নোক্ত সময়গুলোতে হাত ধোয়া উচিত:

টয়লেট ব্যবহারের পরে।

খাওয়ার আগে ও পরে।

ময়লা-আবর্জনা হাতানোর পরে।

বাইরের পশু-প্রাণি এবং গৃহপালিত পশু-পাখি ধরার পরে।

শিশুর ডায়াপার বদলানো বা শিশুকে টয়লেট ব্যবহারে সহযোগিতা করার পরে।

যখন হাত নোংরা দেখাবে বা নোংরা বলে মনে হবে।

৪. ছেলে-মেয়েকে হাত ধোয়ায় কীভাবে সাহায্য করা যায়?

ছেলে-মেয়ের জন্য হাত ধোয়াটা সহজ করে তাদের এক্ষেত্রে সহযোগিতা করা যায়। তারা যাতে নিজেরাই সাবান নিতে পারে ও পানি নাগালের মধ্যে পায় সে জন্য একটি টুল বা চৌকি এনে দিতে হবে বেসিনের কাছে, যার উপর দাঁড়িয়ে তারা হাত ধুতে পারে। হাতে সাবান মাখিয়ে ভালোভাবে যাতে ঘষা হয় সে জন্য বিষয়টি তাদের কাছে আনন্দদায়ক করতে তাদের পছন্দের গান গেয়ে শোনানো যায়।

৫. হাত ধোয়ার জন্য কি গরম পানি দরকার?

না। হাত ধোয়ার জন্য যে কোনো তাপমাত্রার পানি হলেই চলবে। সাবান ব্যবহার করলে জীবাণুনাশের জন্য ঠাণ্ডা ও গরম উভয় পানিই সমান কার্যকর।

৬. হাত কি তোয়ালে দিয়ে মুছে শুকাতে হবে?

শুষ্ক ত্বকের চেয়ে ভেজা ত্বক থেকে জীবাণু সহজে ছড়ায়। তাই হাত পুরোপুরি শুকিয়ে নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। অন্য কোথাও জীবাণু ছড়ানোর আগে তা দূর করতে হাত পরিষ্কার কাপড়, টিস্যু বা ব্যক্তিগত ব্যবহার্য তোয়ালে দিয়ে মুছে শুকিয়ে নেওয়াই সর্বোত্তম।

৭. কোনটা বেশি ভালো: হাত ধোয়া নাকি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা?

সাধারণত সঠিকভাবে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা উভয়ই বেশিরভাগ জীবাণু ধ্বংসের জন্য খুবই কার্যকর। ঘরের বাইরে থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করাটাই বেশি সহজ। তবে তা ব্যয়বহুল এবং জরুরি পরিস্থিতিতে সহজলভ্য নাও হতে পারে। অ্যালকোহলসমৃদ্ধ হ্যান্ড স্যানিটাইজার করোনাভাইরাস মেরে ফেললেও তা সব ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস নির্মূল করে না। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, রোটাভাইরাস বা নোরোভাইরাসের ক্ষেত্রে এটা খুব একটা কার্যকর নয়।

৮. সাবান না থাকলে কী করতে হবে?

সাবান ও পানি না পাওয়া গেলে ক্লোরিনযুক্ত পানি বা অন্তত ৬০ শতাংশ হ্যান্ড স্যানিটাইজার সবচেয়ে ভালো বিকল্প। এগুলোও না পাওয়া গেলে যদি সাবান মিশ্রিত পানি বা ছাই পাওয়া যায় তাহলেও ব্যাকটেরিয়া দূর করতে তা ব্যবহার করা যেতে পারে, যদিও তার কার্যকারিতার মাত্রা কম। এভাবে হাত পরিষ্কার করলে, যত দ্রুত সম্ভব সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার সুযোগ পেলেই তা করতে হবে এবং সে পর্যন্ত হাত দিয়ে কোনো কিছু ধরা বা অন্যদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে  হ্যান্ড হাইজিন অনুশীলনে রোগজীবাণু সংক্রমণ ৫০% কমে যায়।
অস্ট্রেলিয়ায় ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে হাসপাতালে ৮০% হাতের স্বাস্থ্যবিধি সম্মতি অর্জন করেছে এবং ধরে রেখেছিল।

৯. করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে আর কি ভূমিকা রাখতে পারি?

হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা: 

হাঁচি-কাশির সময় কোনুই বা টিস্যু দিয়ে নাক ও মুখ ভালোভাবে ঢাকতে হবে, ব্যবহৃত টিস্যু তাৎক্ষণিকভাবে ময়লার বিনে ফেলতে হবে এবং হাত ধুতে হবে।

নাক, চোখ, মুখে হাত দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

অন্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা: 

করমর্দন, কোলাকুলি বা চুমু খাওয়া, খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়া এবং বাসন, গ্লাস, কাপসহ ঘরের বিভিন্ন তৈজসপত্র পরিষ্কার না করা এবং গামছা-তোয়ালে একাধিক ব্যক্তির সাথে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

ঠাণ্ডা বা জ্বরের উপসর্গ আছে এমন লোকের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।

নিজের বা সন্তানের জ্বর, কফ বা শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

যেসব জায়গায় বাইরের মানুষ বা একাধিক ব্যক্তি আসেন বা ব্যবহার করেন সেগুলো বার বার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে।

লেখক- নার্সিং কর্মকর্তা, জেলা সদর হাসপাতাল কক্সবাজার।

এমবি//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি