ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সদা পরিবর্তনশীল পদ্মা, শাসনের কাজটি চ্যালেঞ্জ (ভিডিও)

মুহাম্মদ নূরন নবী, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৩২, ২০ জুন ২০২২ | আপডেট: ১৩:৩৪, ২০ জুন ২০২২

সদা পরিবর্তনশীল নদী পদ্মা। একে শাসনের কাজটি চ্যালেঞ্জে ভরা। কাজ শেষেও সব সময় তীক্ষ্ণ নজরে রাখতে হবে পদ্মার গতিবিধির পরিবর্তনকে। এরকম মনিটরিং গাইডলাইন দিয়েও রেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। ২৫ জুন উদ্বোধনের পর থেকেই পদ্মাসেতু পরিচালনাকারীরা থাকবেন এর মূল দায়-দায়িত্বে।

গতিপথ বদলিয়ে বাধাহীনভাবে পানি চলে যাওয়াই হল নদীর নিয়ম। সেতু নির্মাণের সময় নদীকে শাসন করতে হয়, নাহলে সেতুকে যথাস্থানে ধরে রাখা যায় না। পদ্মাসেতুতে এই কাজটি ছিল সবচেয়ে কঠিন। যার কারণে নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে হয়েছে, নকশার পরিবর্তন করতে হয়েছে এবং পরিকল্পনার বদলও করতে হয়েছে।

এই সেতুটির নদী শাসনের কাজ এখনও শেষ না হলেও যখন শেষ হবে তারপর থেকে এই সেতুটি যতদিন থাকবে নদীকে যথাযথ মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখতে হবে। না হলে যথাস্থানে ধরে রাখা যাবে না সেতুকে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদী শাসনে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, “নদীটা অশান্ত, আনপ্রেডিক্টেবল। এটা যখন যে কোন দিকে রওয়ানা দিতে পারে। গাণিতিকভাবে দেখেছি, ৬ কিলোমিটারে ১২ বছরের মধ্যে নড়াচড়া করে। এটা বিবেচনা করেই সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখার প্রস্তাব রাখছি। আশা করি, সরকার এই কাজটি করবে।”

আমাজনের পর পদ্মাই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নদী। এতোটাই খরস্রোতা যে, নিজে নিজেও পারে তলদেশ খনন-তথা উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে একাকার করতে। 

৩০ থেকে ৩৫ লাখ কিউসেক ফিট পার সেকেন্ড পানি আসে বর্ষায়। পানির সাথে আসে বিপুল পরিমাণ পলিও। এতে, প্রতিনিয়ত কোথাও উঁচু আবার কোথাও গভীর হয় নদী। বদলায়, গতিপ্রকৃতি ও মরফোলজিও।

নদীকে নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক আইন-কানুন মানার বাধ্যবাধকতাও আছে। পানি আর পলি সামলেই শাসন করতে হচ্ছে পদ্মাকে।

পদ্মাসেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, “পৃথিবীর বড় দুটি ড্রেজার এখানে কাজ করছে। এই নদী শাসন কাজটা বিশ্ব রেকর্ড। নদীতে দিনে ১০ ফিটেরও বেশি সেলিমাপ পড়ে। নভেম্বর বা অক্টোবরের শেষে কাজ করতে হয়। এর আগে সম্ভব হয় না।”

অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, “আমি সন্তুষ্ট যে, মান বজায় রাখতে পেরেছি। তবে এই ধরনের জটিল নদীতে অনিশ্চয়তা আছে। স্ট্রাকচারও মনিটর করতে হবে আর নদী শাসন খুব ঘনিষ্ঠভাবে মনিটর করতে হবে।”

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম সাইফুল আমিন বলেন, “

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ড্রেজারগুলো দিয়ে পরিকল্পনামাফিক কাটা হচ্ছে নদীর তলদেশ। দূর-দূরান্ত থেকে বালু এনে জিওটেক ব্যাগে ভরে ফেলা হচ্ছে নদীতে। ৮শ’ ও ১শ’ ২৫ কেজি ওজনের এ ধরনের ব্যাগ ছিল এক কোটি ৯০ লাখ ৯০ হাজার ৫শ’ ২১টি।

আবার দুই তীরে থাকা কনক্রিটের ব্লকও নামছে নদীবক্ষে ও তীরে। বিহার থেকে আনা বিশাল বিশাল পাথরখণ্ড তো আছেই।

পদ্মাসেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, “এক হাজার কেজির একটা একটা পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। এটা বাংলাদেশে আগে হয়নি। এপর্বে জাজিরাপ্রান্তের ১২ কিলোমিটার শেষ। এখন মাওয়াপ্রান্তে ১ কিলোমিটারের মত কাজ বাকি আছে।”

আগামী বছর নদীশাসনের মূল কাজ শেষ হলেও মনিটরিংয়ে সব সময় থাকবে পৃথক বরাদ্দ। মনিটরিং গাইডলাইন ম্যানুয়্যালের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ এবং পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের পরামর্শ বিশেষজ্ঞ কমিটির।

অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, “মনিটরিং করতে হবে যাতে ওভারলোড না হয়। প্রচণ্ড ঝড় হচ্ছে এসময়ে যেন ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেতুর মনিটরিং এবং নদী শাসনের মনিটরিং কি হবে সেই কাজ তৈরি করেছি।”

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি