সদাচরণ নামাজ রোজার মতোই দামি
প্রকাশিত : ১৪:৪১, ১৫ জুন ২০১৯ | আপডেট: ১৪:৪৯, ১৫ জুন ২০১৯
সদাচরণ এমন এক সৎকর্ম যার মাধ্যমে অতি সহজে পরকালীন সাফল্যের সর্বোচ্চ স্তরে মানুষ পৌঁছে যেতে পারে। যে সদাচারী হতে পেরেছে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বোত্তম নিয়ামত অর্জন করেছে। সদাচার এমন একটি সৎকর্ম যা পরকালে নেকীর পাল্লায় সবচেয়ে ভারী এবং যা সদাচারীকে অতি সহজে জান্নাতে নিয়ে যায়।
সদাচার নবীদের ভূষণ। সব মহাপুরুষরা সদাচারী ছিলেন। আমাদের মহানবী ছিলেন সদাচারের মূর্ত প্রতীক। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন: নিশ্চয়ই আপনি সচ্চরিত্রতার সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছেন। (সূরা কালাম ৬৮:৪)
যারা রাসূলের (সা.) অনুসারী বলে দাবি করেন তাদের অবশ্যই সদাচারী হতে হবে। যে যত বেশি সদাচারী সে তত বেশি নবীজীর জীবনের অনুসারী। সত্যিকার অর্থে নবীজীর অনুসারী কখনো বদরাগী বা কটুভাষী হতে পারে না। নবীজীর প্রিয়ভাজন হতে হলে, শেষ বিচারের দিনে নবীজীর উম্মতের কাতারে শামিল হতে হলে অবশ্যই সদাচারী হতে হবে।
সদাচরণ জান্নাতে যাবার মহাসড়ক। যে কেউ অতিসহজে জান্নাতে যেতে চায় তাকে সদাচারী হতে হবে।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলে করীম (সা.) বলেন, তোমরা কি জান কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশি জান্নাতে নিয়ে যাবে? এটা হলো আল্লাহর ভয় ও সদাচরণ। আর কোন জিনিস সবচেয়ে বেশি জাহান্নামে নিয়ে যাবে। তাহলো মুখ ও লজ্জাস্থান। (তিরমিজি)
সদাচারের ওজন ও মর্যাদা সবচেয়ে বেশি থাকা সত্ত্বেও আমাদের সমাজে মুসলমানরা সদাচারী হবার চর্চা থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। যে যত বড় মুসলমান ততো অসদাচারী হবার দিকে ঝুকে যাচ্ছেন। অথচ আল্লাহর রাসূল (সা.) সদাচরণকে নামাজ রোজার মতোই দামি বলেছেন।
আয়শা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেন, একজন বিশ্বাসী শুধুমাত্র তার সদাচরণের মাধ্যমে এমন ব্যক্তির সমান মর্যাদা অর্জন করতে পারে যে রাতভর নামাজ পড়ে ও দিনভর রোজা রাখে। (আবু দাউদ)
রাসূল (সা.) এর পক্ষ থেকে সদাচরণের গুরুত্বকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করার পরও সমাজের অধিকাংশ মানুষ নামাজ রোজা পালনের জন্য যতটুকু যত্নশীল তার একশতাংশও আচার আচরণের সংশোধনের জন্য তৎপর নয়। আমাদের প্রত্যেকের উচিত সদাচরণকে প্রাত্যহিক অভ্যাসে পরিণত করা। যাতে আল্লাহ আমাদেরকে সার্বক্ষণিক রোজা পালনকারী ও নামাজ আদায়কারীদের কাতারে অন্তর্ভুক্ত করেন ও জান্নাতে সর্বোচ্চ স্থানের উত্তরাধিকারী করেন।
নবী করীম (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয় যে সর্বোত্তম উন্নত চরিত্রের অধিকারী, নম্র ব্যবহারকারী, যে মানুষকে ভালবাসে ও মানুষ তাকে ভালবাসে। (হযরত আবু হুরায়রাহ হতে তারগীব ও তারহীবে বর্ণিত)
আমাদের মধ্যে অনেকেই কাজেকর্মে রাগান্বিত আচরণ, দুর্বব্যবহার, কাউকে উপহাস, অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকেন। এগুলোর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিজের এই আচরণগুলো পরিশুদ্ধ করে হাসিমুখে কথা, সুন্দর বাক্য বিনিময়, মানুষকে ভালবাসা, অন্যের কষ্টকে অনুভব করা ইত্যাদি সদগুণাবলীর অভ্যাস গড়ে তুলুন। সদাচার ধর্ম গোত্র বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রতি হওয়া উচিত।
তথ্যসূত্র : ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরীর প্রশান্তি ও প্রাচুর্যের সোপান গ্রন্থ।
এএইচ/