সন্তানের সঙ্গে তোলা ছবি ফেসবুকে পোস্ট করছেন, যেসব ক্ষতি হতে পারে
প্রকাশিত : ১২:১৭, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
আধুনিক এই সময় প্রায় সবাই সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়। ব্যবসা কিংবা অফিশিয়াল যেকোনো কাজেই এখন নিয়মিত ব্যবহার হয় ফেসবকু-ইনস্টাগ্রাম-এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলগুলো। এর বাইরে আমরা অনেকেই ব্যক্তিগত ক্ষেত্রেও ব্যবহার করি এই মাধ্যমগুলো। বিশেষ করে আমরা কখন কোথায় যাচ্ছি, কী খাচ্ছি, কার সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি, পরিবারের সবার সঙ্গে ছবি তুলে পোস্ট করছি এবং অনেক ব্যক্তিগত তথ্য বা ভালো লাগা-মন্দ লাগার বিষয়ও তুলে ধরি সোশ্যাল মিডিয়ায়।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে অজান্তেই অনেক ব্যক্তিগত বিষয় আমরা শেয়ার করে থাকি। যা একদমই উচিত নয়। এ ব্যাপারে রিডার্স ডাইজেস্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এবার তাহলে সেখান থেকে বিষয়গুলো জেনে নেয়া যাক।
লোকেশন: সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে কখনো নিজের লোকেশন বা অবস্থান পোস্টে উল্লেখ করা উচিত নয়। লোকেশন শেয়ার করা স্বাভাবিক মনে হলেও বিষয়টি আপনার সন্তানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ, আপনার বাড়ি বা লোকেশন অন্য কারও কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যার মাধ্যমে আপনার সন্তানের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে অন্যজন। এমনটাও হতে পারে আপনার সন্তানের সব তথ্য যেমন নাম-পরিচয় ইত্যাদি ব্যবহার করে প্রতারণামূলক কাজ করতে পারে। আবার এমনও হতে পারে আপনার সন্তানকে ডিজিটালভাবে অপহরণও করতে পারে। ছবি বা তথ্য ব্যবহার করে আপনার সন্তানকে নিজের সন্তান বলে দাবি বা প্রচার অস্বাভাবিক কিছু নয়।
ব্যক্তিগত পরিচয়: ব্যক্তিগত পরিচয় বা পরিচয়যুক্ত কোনো বিষয় ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম-এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করবেন না। সন্তানের হাতের লেখা কোনো ছবিও নয়। ছেলের জন্মদিন বা স্কুল-কলেজের কোনো সেলিব্রেশনের ছবি। বিষয়টি উপভোগ্য মনে হলেও উচিত নয়।
আবার অনেকেই গাড়ির কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ক্রেডিটা কার্ড বা কোনো অর্জনে বেশি খুশিতে তার ডিজিটাল স্বত্ত্বার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন। এতে কিন্তু আপনার ব্যক্তিগত তথ্য থাকে। যে তথ্যগুলো সহজেই অন্য কেউ অনৈতিক ও অবৈধ কাজে ব্যবহার করতে পারে। এসব কাগজে আপনার প্রকৃত নাম, জন্মতারিখ, জন্মস্থান সবই উল্লেখ থাকে। তাই এ থেকে সাবধান।
সন্তানের খালি গায়ের ছবি: নানা কারণেই নিজ বাড়িতে বা আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি ছেলে-মেয়েরা খালি গায়ে বা নগ্ন অবস্থায় থাকে। ছোট হওয়ায় বিষয়টি পরিবার ও স্বজনের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়। আবার গোসলের সময় শিশুকে খালি গায়ে রাখা হয়। পানিতে তার খেলা করার দৃশ্য দেখতে চমৎকার লাগে। কিন্তু এ অবস্থায় ছবি-ভিডিও করা থেকে বিরত থাকতে হবে। হোক তা নিজ সন্তান বা অন্যের।
এসব ছবি-ভিডিও দুষ্টু চক্রের কারও হাতে পড়লে সেসব প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদনা করে খারাপ কাজে ব্যবহার হতে পারে। আর সন্তান বড় হওয়ার পর ছোটবেলার এই বিষয়গুলো তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
বিব্রতকর বিষয়গুলো: ছেলে-মেয়ে অসুস্থ হওয়া খুবই স্বাভাবিক বিষয়। এ অবস্থায় তার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দোয়া প্রার্থনা করেন অনেকে। এমনটা মোটেও উচিত নয়। সন্তান বড় হওয়ার পর এসব দেখলে তার কাছে বিব্রতকর মনে হতে পারে। আবার সন্তান অসুস্থ অবস্থায় তার অস্ত্রোপচার বা ইনজেকশন নেয়ার মুহূর্তের ছবি পোস্ট করে তাকে সাহসী প্রমাণ না করাই ভালো।
সন্তানের প্রতিভা: সন্তান কোনো কারণে কিছু বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা বা মেধা কিংবা আচরণ বা অভিনয়ে ভালো হতে পারে। তবে তাদের সেই বিষয় বা অভিনয়ের ছবি বা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা থেকে সতর্ক থাকুন। এসব সাময়িক ভালো লাগার ব্যাপার হলেও সন্তান বড় হওয়ার পর তার কাছে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। এমনকি তার ক্ষতির কারণও হতে পারে। বড় হওয়ার পর এসব কারণে সন্তান শেমিংয়ের শিকারও হতে পারে।
নেতিবাচক বিষয়: অনেক সন্তানই ছোটবেলায় বিছানায় প্রস্রাব, পড়ালেখায় অমনোযোগী বা বয়সের তুলনায় কম বিকশিত হতে পারে। এমনটা হলে সন্তানের অস্বাভাবিক কোনো আচরণগত বিষয় ফেম্রবন্দি করে পোস্ট করবেন না। এসব সন্তানের দুর্বল ও নেতিবাচক বিষয় প্রকাশ করে। সন্তান বড় হলে উত্যক্ত ও উৎপীড়নের শিকারও হতে পারে সে।
এমএম//