ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৬ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

সব বাহিনীরই ছিল গোপন কারাগার, চলতো অকথ্য নির্যাতন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:১৬, ৫ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

পুলিশ লাইনসের ভেতরে গোপন কারাগারসহ সব বাহিনীর ভেতরেই গোপন বন্দিশালার সন্ধান পেয়েছে গুম কমিশন। তবে বন্দিশালার প্রকৃত সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। গুমের শিকার ৩৩০ ব্যক্তির ফিরে আসার ক্ষীণ আশা বলেও জানিয়েছে গুমের তদন্তে গঠিত কমিশন। 

গতকাল মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাজধানীর গুলশানে কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

গুম কমিশনের প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কমিশনে ১ হাজার ৭৫২টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্যে ১ হাজারটি অভিযোগ এবং এগুলোতে সংযুক্ত নথিপত্রের যাচাই-বাছাই প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কমিশনে ২৮০ জন অভিযোগকারীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৪৫ জন কর্মকর্তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। গুমের শিকার হয়ে ফিরে না আসা ৩৩০ জনের বর্তমান অবস্থা বা ভাগ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান চলমান আছে। তবে সাধারণভাবে বলা যায়, তাদের ফিরে আসার আশা ক্ষীণ।

কমিশন প্রধান বলেন, গুমকা-ে সরকারের পক্ষে সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশেই গুমের ঘটনা ঘটেছে।

প্রসঙ্গত, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারকের নেতৃত্বে ‘গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি’ গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ২৭ আগস্ট অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের ওই কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

কমিশনপ্রধান বলেন, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নাগরিকদের গুম করার অভিযোগ আছে, তাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অনুসন্ধান করছে কমিশন। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে, গুমের সঙ্গে জড়িত কতিপয় ব্যক্তির জন্য পুরো বাহিনী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যেসব সদস্য গুমের সঙ্গে জড়িত, তা তাদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়। কারণ অপরাধীরা অনেক সময় আইনের হাত থেকে বাঁচতে তার ধর্ম, কমিউনিটি, সামাজিক গ্রুপ ইত্যাদির আড়ালে লুকাতে চেষ্টা করে। কিন্তু

বিচার কখনও ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে হয় না, তা হয় সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে। কারণ ফৌজদারি অপরাধ একটি ব্যক্তিগত দায়। এতে কমিউনিটিকে দোষারোপ করার কোনো সুযোগ নেই।

কমিশনপ্রধান বলেন, গুমের সঙ্গে জড়িত নির্দেশদাতাদের দায় আছে। তাদের সংখ্যাও অনেক। প্রত্যেক বাহিনীতে নির্দেশদাতা ও গোপন বন্দিশালা ছিল। তিনি বলেন, কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, গুমের সঙ্গে জড়িত কতিপয় ব্যক্তির জন্য পুরো বাহিনী আতঙ্কগ্রস্ত বা প্যানিক স্ট্রিকেন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যেসব সদস্য গুমের সঙ্গে জড়িত, তা তাদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হলে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কালিমা মোচন হবে এবং বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এটাই আইনের শাসনের মর্মবাণী। তিনি বলেন, এই কমিশন ‘কমিশনস অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’-এর অনুবলে গঠিত হয়ে সম্পূর্ণ পাপমুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজ করছে। এ জন্য এই কমিশনের কাজে কোনো বাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যদের নিয়মিত

কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

কমিশনপ্রধান বলেন, ঢাকা, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ডিজিএফআই, সিটিটিসি ও র?্যাবের নিয়ন্ত্রণাধীন বেশ কিছু গোপন বন্দিশালার সন্ধান পাওয়া মাত্রই তা পরিদর্শন করে অপরিবর্তিত রাখার নির্দেশনা প্রদান করে কমিশন। যেমন- কমিশন গঠনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ডিজিএফআইয়ের জেআইসি (আয়নাঘর) এবং র?্যাব হেডকোয়ার্টারের টিএফআই পরিদর্শন করে আলামত ধ্বংসের প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য এই দুটিসহ মোট তিনটি গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করেছেন।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ভারত এক হাজার ৬৭ জনের একটি তালিকা দিয়েছে, সেটি গুমসংক্রান্ত কমিশন মিলিয়ে দেখছে। সেই তালিকায় গুম হওয়া কোনো ব্যক্তি আছে কি না, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এ তালিকা ভারত আরও দেবে।

মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপার ও বিজিবির সেক্টর কমান্ডারদের কাছ থেকে আগস্টের পর ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা ১৪০ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদের মধ্যে গুমের শিকার কোনো ব্যক্তির নাম এখনও পাওয়া যায়নি। ধামরাই থেকে গুম হওয়া মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে গত ২২ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়েছে। এ বিষয়ে কমিশন অনুসন্ধান করছে।

পুলিশ লাইনসে গোপন বন্দিশালা প্রাপ্তির তথ্য তুলে ধরে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য নূর খান জানান, বগুড়া পুলিশ লাইনসে গোপন বন্দিশালা পাওয়া গেছে। এখানে বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হতো। পুলিশ লাইনসের ভেতরে কারাগারের মতো গোপন বন্দিশালা তৈরি করে রাখা হয়েছিল। এটি একেবারেই অ্যাবসার্ড (অযৌক্তিক) একটা ব্যাপার। সেটি আমরা বগুড়ায় পেয়েছি। আমাদের ধারণা, অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের আরও পাব।

বন্দিশালার বিষয়ে নূর খান বলেন, এগুলো গত ১৫ বছরের মধ্যেই বানানো হয়েছে। সম্ভবত গত ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। এখানে বিভিন্ন জেলা থেকে বন্দিদের এনে রাখা হতো, জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হতো। এখান থেকেও অনেকের মৃত্যু ঘটে থাকতে পারে।

এর আগে ডিজিএফআইয়ের সদর দপ্তর, সিটিটিসির সদর দপ্তর, র?্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন ও পুলিশের বিভিন্ন গোয়েন্দা কার্যালয়ে গোপন বন্দিশালার সন্ধান পায় কমিশন। সেগুলো অক্ষত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি