সবচেয়ে বড় পরিসরে এবারের বইমেলা
প্রকাশিত : ১৮:৩৫, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ২০:০৬, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিলেন বাংলার সূর্য সন্তানরা। রফিক, শফিক, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেকের তাজা রক্ত নতুন ইতিহাস গড়েছিলেন। তাঁদের আত্মোৎসর্গের ফলে প্রাণ পায় বাংলা ভাষা। অমর একুশের চেতনাকে ধারন ও নতুন প্রজন্মের কাছে শহীদদের আত্মাদানের বার্তা পৌঁছে দিতে প্রতিবছর মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবারও শুরু হতে হচ্ছে বইমেলা।
বাংলা একাডেমি আয়োজনে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন শুরু হয়ে মেলা চলবে মাসের শেষদিন পর্যন্ত। বইয়ের প্রদর্শনী ও বেচা-কেনার এমন বর্ণাঢ্য আয়োজন সারাবিশ্বেই বিরল। বাঙালির আবেগঘন ভালোবাসার অনিন্দ্য সুন্দর প্রকাশ বইমেলা একই সঙ্গে প্রাণের মেলা হিসেবে খ্যাত। শুধু বইকে কেন্দ্র করা হলেও কালক্রমে এটি হয়ে উঠেছে বঙ্গ-সংস্কৃতির বৃহৎ উৎসবে।
পহেলা ফেব্রুয়ারি বৃস্পতিবার বিকেল ৩টায় বইমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে তিনি মেলা পরিদর্শনে করবেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সম্মানিত বিদেশি অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এগনিস মিডোস (যুক্তরাজ্য), ড. জয়েস অ্যাসউনটেনটেঙ (ক্যামেরুন), ইব্রাহিম এলমাসরি (মিশর), অরনে জনসন (সুইডেন)। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান। স্বাগত ভাষণ দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
বইমেলা উপলক্ষে ২২ ও ২৩শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলনে স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ফ্রান্স, স্পেন, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ ৮টি দেশের ১৫ জন কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবী অংশগ্রহণ করবেন।
বাংলা একাডেমি সূত্রে জানাগেছে, অন্যবার থেকে এবার মেলার পরিসর বাড়ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রকাশনা সংস্থা ও স্টলসমুহ। আজ মঙ্গলবার সকালে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ স্টল স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে শেষ সময়ের রং-তুলির কাজ। স্টল স্থাপনের স্টল রং করা, ব্যানার ঝোলানো, স্টলে বইয়ের সেলফ বসানো, লাইটিং করার কাজ এখন চলছে পুরাদমে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে একুশে টিভি অনলাইনকে বাংলা একাডেমির পরিচালক ও একুশের বইমেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং একাডেমি সম্মুখস্থ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৫ লাখ বর্গফুট জায়গায়। অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১২টি চত্বরে বিন্যস্ত করা হয়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৩৬টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৮৩টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মোট ৪৫৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭১৯টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমি-সহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৫৫৩৬ বর্গফুট আয়তনের ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১৩৬টি লিটল ম্যাগাজিনকে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যাঁরা বই প্রকাশ করেছেন তাঁদের বই বিক্রি/প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতবারের চেয়ে বেশি জায়গায় স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। লেখক, কবি, সাহিত্যিক, বিভিন্ন অঙ্গনের সিনিয়র ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবীসহ বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রবেশের জন্য এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে একটি গেট বসানো হবে।
মেলার সার্বিক বিষয় জানতে চাইলে জনতা প্রকাশনির ব্যবস্থাপন নাসির আহমেদ একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, বইমেলায় টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দু’টো মূল প্রবেশপথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের ৬টি পথ থাকবে। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।
এবারের মেলাতে তার প্রকাশনির ১০০টি নতুন বই আসবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তিনি। এসময় তিনি বাংলা একডেমির সমলোচনা করে বলেন, মেলাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে আমি ভালো কোনো স্টল বরাদ্দ পাইনি। দলীয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ভালো জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বই অনুযায়ী তিনি প্যাভিলিয়ন পাওয়া যোগ্য এমন দাবি করে বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে সঠিক জায়গায় স্টল বরাদ্দ পাইনি। এমনকি প্যাভিলিয়ন পেতে আবেদন করলেও দেওয়া হয়নি।
বইমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের নিরাপত্তাকর্মীরা। নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে আড়াইশত ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। মেলা প্রাঙ্গণ ও পাশ্ববর্তী এলাকায় (সমগ্র মেলা প্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহিদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চাঁনখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধূলিনাশক পানি ছিটানো, ভ্রাম্যমাণ টয়লেট স্থাপন এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত স্বাধীনতা স্তম্ভ ও এর পার্শ্ববর্তী স্থানকে নান্দনিকভাবে বইমেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে যাতে স্বাধীনতার স্তম্ভের আলোক-বিচ্ছুরণে মেলা প্রাঙ্গণ আলোকিত হয়ে ওঠে।
সোহরাওয়াদী উদ্যানে পাঞ্জেরি পাবলিকেশনের স্টল স্থাপনের কাজ পেয়েছে আরপিকে মিডিয়া। এটির মালিক ইবরাহিম খলিল বলেন, ‘আমরা পাঞ্জেরি পাবলিকেশনের স্টল স্থাপনের কাজ পেয়েছি। এই স্টলটি তৈরি করতে খরচ হবে সাড়ে সাত লাখ টাকা।
বইমেলার সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে বইমেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, এবার মেলাতে সব্বোর্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। মেলাতে সব্বোর্চ নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়েছে ব্যারের কন্ট্রোল রুম। এছাড়া গত বছরের থেকে এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি রাখা হয়েছে। এছাড়া আইন শৃঙ্খালা বাহিনীর সদস্যেদের অস্থায়ী ক্যাম্পের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও দোয়েল চত্বরের কাছে নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার হচ্ছে।
টিআর/টিকে