ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

সবার অংশগ্রহণে একাদশ সংসদ নির্বাচন চায় ইসি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৩৮, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২২:৫১, ৬ অক্টোবর ২০১৭

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। ইসির প্রতি অনাস্থার যে অভিযোগ বিরোধী দলগুলো করে আসছে এই নির্বাচনের মাধ্যমে সেটির অবসান চায় সংস্থাটি। তবে কমিশন এমনটি চাইলেও আগামী নির্বাচন  কতটা অংশগ্রহনমূলক ও প্রশ্নহীন হবে তা নির্ভর করবে সে সময়ের পরিবেশ ও পরিস্থিতির উপর। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

একাদশ নির্বাচন সামনে রেখে প্রায় দেড় বছর আগে (নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ের) রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ইসির রোডম্যাপে ৭টি কর্মপরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-১. আইনি কাঠামোগুলো পর্যালোচনা ও সংস্কার। ২. নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও যুগোপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ গ্রহণ। ৩. সংসদীয় এলাকার নির্বাচনী সীমানা পুনর্নিরধারন। ৪. নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ। ৫. বিধিবিধান অনুসরণপূর্বক ভোটকেন্দ্র স্থাপন। ৬. নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা। ৭. সুষ্ঠু নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসি। তফসিল ঘোষণার পরবর্তী ৯০ দিন নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী যেন সব দল ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে সেজন্য কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ইসি। এর  ধারাবাহিতকায় সুশীলসমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এরইমধ্যে সংলাপ শেষ করেছে। গত ১৬ আগস্ট গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ শেষ হয়েছে। এছাড়া পবিত্র ঈদুল আযহার পরে দেশের ১৬ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষ করছে ইসি। বাকি দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করে তাদের দেওয়া মতামতের উপর ভিত্তি করে সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসবে কমিশন।

তবে ইসির দেওয়া রোডম্যাপে নির্বাচনকালীন সরকার কীভাবে পরিচালিত হবে, রাজনৈতিক স্থিতি কীভাবে বজায় থাকবে সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে  এম নূরুল হুদা বলেন, সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ-গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে সংলাপে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের কাছ থেকে সুপারিশের পাশাপাশি সহযোগিতাও চাওয়া হচ্ছে। সবার প্রস্তাব আমরা গ্রহণ করেছি। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব প্রায় অভিন্ন। সংলাপ শেষ হলে আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব।

নির্বাচন কমিশন যে রোডম্যাপ দিচ্ছে কিংবা যে পদ্ধতিতে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন দল সেগুলোকে বাস্তবসম্মত মনে করলেও এগুলোকে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বলে দাবি করছে রাজপথের বিরোদী দল বিএনপি। কোনো আলোচনা না করে এই রোডম্যাপ দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না বলে দাবি করছে দলটি। এদিকে ইসির নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কোনো আলোচনা না করে এই রোডম্যাপ দিয়ে তো সমস্যার সমাধান হবে না। এটা সরকারের নতুন নীলনকশা। তিনি বলেন, রোডটা তো থাকতে হবে। এখন পর্যন্ত আমরা রোড দেখতে পারছি না। ম্যাপ দিয়ে কি হবে?

নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ একাদশ নির্বাচন অংশগ্রহনমূলক ও প্রশ্নহীন হবে কি না সেটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। অনেকে আবার ইসির কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আশাবাদীও।  

এ বিষয়ে জানতে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্ট এম হাজিফ উদ্দিন খান বলেন, বেশকিছু শঙ্কা থাকলেও আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আমি মনে করি। ইসির সংলাপে আমরা বেশ কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছি। সেগুলো যদি সঠিকভাবে ব্যস্তবায়ন হয় তবে আগামী নির্বাচন গণন্ত্রণের জন্য আশার আলো দেখাবে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন যেসব কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে তাতে অনেকটাই আশার আলো দেখছেন এই বিশেষজ্ঞ।  

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশন ধারাবাহিকভাবে যে সংলাপ করছে তা বলা চলে আশার দিক। তবে শুধু সংলাপ করলে হবে না। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংলাপে আসা সুপারিশগুলো বিবেচনায় আনতে হবে। তিনি  বলেন, সংলাপের মধ্য দিয়ে যে সুপারিশ আসবে, সেগুলো তারা বিবেচনা করবে। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে আইনকানুন ও বিধিবিধানে যে ধরণের পরিবর্তন আনা দরকার, সেগুলো তারা করবে। তাহলেই সংলাপ সফল হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আশা প্রকাশ করে বলেছেন, এই কমিশনের অধীনে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।  নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে শঙ্কা থাকলেও আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মপরিকল্পনায় সবার অংশগ্রহণমূলক ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সমালোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তিনি। মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচন কমিশন সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতে অবিরাম কাজ করে চলছে।

নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে ব্যর্থ হলে এই কমিশন কী করবে এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেন, এটা তো অনেক পরের বিষয়। এখন এ বিষয়ে কথা বলে লাভ কি? এখন এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার কিছু আছে বলে মনে করছি না। তবে আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কাজ করে যাচ্ছে ইসি। আশা করি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা যা করছি তার সমালোচনা না করলে মনে হবে আমরা বিপন্ন হয়ে গেছি। আমি সব সমালোচনাকেই স্বাগত জানাই। কারণ সমালোচনা হলো সাহায্যকারী। কোনো ভুল থাকলে শোধরানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়।

সংলাপে সুধীজন, সাংবাদিক নেতা ও রাজনৈতিক দলের অনেকেই আগামী সংসদ নির্বাচনে সেনা সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে- এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি? এমন প্রশ্নে জবাবে মাহবুব  তালুকদার  বলেন,  সংলাপ শেষে  সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য পৌঁছালে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কেননা বিদ্যমান আইনানুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় (সশস্ত্র বাহিনী) সেনাবাহিনী নেই। সরাসরি নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করে না সেনাবাহিনী। ফলে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে মোতায়েন করা হয়। পুরো কমিশনে আলোচনা ছাড়া বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এ পর্যায়ে কমিশনও সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না। একটু সময় লাগবে।

নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচনে ভোট গ্রহণে ইভিএম ব্যবহারের দরজা আমরা বন্ধ করে দিইনি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর সরকার সহযোগিতা করলে এর ব্যবহার সম্ভব। বর্তমান কমিশন সরকার, কোনো দল বা দেশি-বিদেশি সংস্থার প্রভাবমুক্ত থেকে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। প্রভাবমুক্ত থেকেই নির্বাচন করতে পারবে বলে কমিশনের বিশ্বাস আছে। তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন অবস্থায় বর্তমান ইসির পক্ষে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ কবিতা খানম এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান

//এআর

 

 

 

 

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি