মায়াবতী ঝর্ণা
সবুজ প্রকৃতি ও স্বচ্ছ জলের মধুচন্দ্রিমা
প্রকাশিত : ১৩:২৫, ১৯ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ২১:০৫, ২৫ জুলাই ২০১৭
কয়েকদিন ধরে আলোচনা হচ্ছিল একটা ভ্রমণের। ভ্রমণে আগ্রহী আমরা কয়েক বন্ধু। জায়গা ঠিক না হলেও সবাই একমত কোনো এক পাহাড়ি ঝর্ণা দেখতে যাব। কারন চিরসবুজের পাহাড়ের বুক চিড়ে স্বচ্ছ জলরাশির ঝর্ণাধারা ভ্রমণপিপাসুর মনের তৃষ্ণা আরও বাড়িয়ে দেয়। প্রকৃতির আপন মহিমায় গড়ে ওঠা এসব জায়গায় গেলে বিষাদে ভরা মন নিমিষেই ভালো হয়ে যায়।
সবাই মিলে ঠিক করলাম সিলেটের জাফলং যাব। দিন ঠিক হলো, তবে শর্ত হলো রাতে যাব। কারণ রাতের বেলায় গাড়িতে ঘুম, দিনে বেড়ানোর পরিকল্পনা। রাতেই যাবার জন্য প্রস্তুত আমরা।
জুলাইয়ের ১ তারিখ। দিনের বেলায় কিছু কেনা-কাটা করে ভ্রমণের একটা প্রস্তুতি নিয়ে রাখলাম। কারণ রাত ১১টায় আমাদের সিলেট যাওয়ার কথা। রাতের খাবার এখনও শেষ করতে পারিনি। এরই মাঝে বন্ধু মাসুমের ফোন। রেডি, মনে আছে, গাড়ী কিন্তু সময় মতো… ইত্যাদি। ঝটপট খেয়ে রেডি হলাম।
সবাই মিলে নিদির্ষ্ট সময়ে ফকিরাপুল বাসস্টান্ডে যাই। বাস ছাড়ল, তিন ঘন্টা হয়েছে বসে আছি বাসের মধ্যে। আর বসে থাকতে মন চাইছে না ঝর্ণা দেখার নেশায়।
সকাল ৭টায় গাড়িতে চেপে শহরের বন্দরবাজার হয়ে মিরাবাজার, শিবগঞ্জ, এমসি কলেজ, সরকারি কলেজ পেরিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। মাসুম আর সুমনের আর তর সইছে না। প্রচন্ড ক্ষুদ্রায় বেচার দুজনের অস্থিরতা ভাব। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আমরা হালকা নাস্তা করলাম।
এরই মধ্যে জাফলংয়ের কাছাকাছি এসে পড়েছি। কাছে পৌঁছাতেই দেখা মিলল পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা ঝর্ণা। দূর থেকে মনে হবে, আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়। পাহাড়ের গায়ে নরম তুলার মতো ভেসে বেড়ানো মেঘরাশি।
পার্শ্ববর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় সবুজে ভরে উঠেছে। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে সীমান্তঘেঁষা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই জনপদকে।
জাফলং বল্লাঘাটে থেকে নৌকায় নদী পার হয়ে এগিয়ে চললাম কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। পথে খাসিয়াদের গ্রাম, গ্রামকে বলা হয় পুঞ্জি। এই পুঞ্জিগুলোতে দেখা যাবে ৩-৪ ফুট উঁচুতে বিশেষভাবে তৈরি খাসিয়াদের ঘর আর পানের বরজ।
মাতৃতান্ত্রিক খাসিয়া সম্প্রদায়ের পুরুষরা গাছ বেয়ে বরজ থেকে পান পাতা সংগ্রহ করে আর নারীরা পান পাতা ভাঁজ করে খাঁচা ভর্তি করে। পান পাতা ভাঁজ করার দৃশ্য সবারই নজর কাড়ে।
মেঘালয় রাজ্যের উংশিং পুঞ্জির পাশ দিয়ে অঝোর ধারায় ঝরছে এই মায়াবতি ঝর্ণাধারা। যেখানে মাথার ওপর চেপে ধরা আকাশ অনেক উঁচুতে আর ছাই বরণ মেঘমালা একটু পরপর রঙ বদলাচ্ছে। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে তারা ছুটে চলেছে অজানা গন্তব্যের দিকে।
আমরা ঝর্ণার একদম কাছে গিয়ে মনের তৃষ্ণা মেটাতে থাকলাম। পর্যটকের বেশ আনাগোনা দেখলাম। প্রকৃতির সুনিপুণ হাতের তৈরি ছায়া-সুনিবিড় শান্তিময় তরুচ্ছায়া। ঘন, গাঢ় চিরসবুজের পাহাড়ের বুক থেকে স্বচ্ছ জলরাশির ঝর্ণাধারা ভ্রমণপিপাসুদের মনের তৃষ্ণা আরও বাড়িয়ে দেয়। প্রকৃতির আপন মহিমায় গড়ে ওঠা এই জায়গায় গেলে শত পরিশ্রান্ত, ক্লান্ত ও বিষাদে ভরা মন-প্রাণ যেন নিমিষেই জুড়িয়ে যায়।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে বাস/ট্রেনে সিলেট; ভাড়া ২৫০ থেকে ১২শ` টাকা। সিলেট থেকে লোকাল বাসে জাফলং মামার বাজার; ভাড়া ৬০ টাকা। জাফলং বল্লাঘাট থেকে ১০ টাকা দিয়ে পিয়াইন নদী পার হয়ে খাসিয়া পুঞ্জি। দেখা যাবে মায়াবী ঝর্ণার হাতছানি। অথবা জাফলং বল্লাঘাট থেকে ট্যুরিস্ট নৌকায় যাওয়া যায়।
//আর//এআর
আরও পড়ুন