সমস্যার সমাধান করবেন কীভাবে?
প্রকাশিত : ১৭:৫৭, ১ নভেম্বর ২০২৩ | আপডেট: ১৮:০২, ১ নভেম্বর ২০২৩
আমাদের প্রতিদিনের জীবনে আমরা বিভিন্ন রকমের সমস্যার সম্মুখীন হই। সমস্যায় ভেঙ্গে না পড়ে সঠিকভাবে যদি আমরা মোকাবেলা করতে পারি অবশ্যই সাফল্য অর্জন করতে পারবো। আজ আমরা জানবো কিভাবে সমস্যা সমাধান করা যায়।
১. প্রথমেই বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিন
আসলে অধিকাংশ মানুষ কী করে? অধিকাংশ মানুষই সমস্যা নিয়ে ভাবে এবং সমস্যা নিয়ে টেনশন করে যে, কেন এমন হলো! কেউ কেউ ভাবে, যদি এটা না করতাম তাহলে এটা হতো না। কেউ কেউ ভাবে যে, আমার ওপর আল্লাহ একটা গজব ফেললেন। যত নেতিবাচক ভাবনা এই ভাবনা হচ্ছে সাধারণত, অধিকাংশই ঐভাবে ভাবে। আর ভাবতে ভাবতে সে ক্ষুব্ধ হয়, সে দুঃখিত হয় তার বিরক্তি আসে এবং হতাশা তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। সমাধান নিয়ে ভাবার তার যে শক্তি আগ্রহ উৎসাহ এটা সে হারিয়ে ফেলে। আসলে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক আপনার কারণে হোক বা অন্যের কারণে হোক আপনি কিন্তু পেছনে যেতে পারবেন না কখনো। আগের অবস্থায় কখনো যেতে পারবেন না আপনাকে সামনে যেতে হবে।
কী করতে হবে? প্রথমে বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিতে হবে যে, এই হচ্ছে বাস্তবতা। যে আমার ওপরে একটা মামলা হয়েছে বা আমাকে কেউ অপবাদ দিয়েছে বা আমার কেউ ক্ষতি করেছে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমার এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে হ্যাঁ হয়েছে রাইট এটা বাস্তবতা।
২. নিজের করণীয় নিয়ে ভাবুন
এখন ভাবতে হবে যে কীভাবে এটা সমাধান হবে? আমি কী করতে পারি? এবং যুগে যুগে কালে কালে যারা সফল মানুষ তারা কিন্তু সেটাই করেছেন। কারণ একজন মানুষ তাকে আপনি মেরে ফেলতে পারেন তার মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু আপনি তাকে পরাজিত করতে পারবেন না যদি সে নিজে মানসিকভাবে পরাজিত মনে না করে।
৩. হেমিংওয়ে যেভাবে সমস্যাকে সমাধানে রূপান্তর করেছিলেন…
মানুষ আসলে কখনো পরাজিত হয় না। মানুষকে কখনো পরাজিত করা যায় না এবং যে অনন্য মানুষ সে স্মার্ট মানুষ যে দক্ষ মানুষ যে প্রাজ্ঞ মানুষ সে কখনো পরাজিত হয় না, সে ছাই থেকে সোনা তুলে নিয়ে আসে। কারণ সে ভাবে সবসময় সমাধান নিয়ে।
লেখক ছিলেন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। তার প্রথম বই যেটা আমি পড়ি দা ওল্ড ম্যান এন্ড দা সি। এবং ওল্ড ম্যান এন্ড দা সি এটার একটা বাক্য ছিল। এ ম্যান ক্যান বি ডেস্ট্রয়েড বাট নট ডিফিটেড।
একজন মানুষকে ছাতু বানিয়ে ফেলতে পারবেন। কিন্তু তাকে পরাজিত করতে পারবেন না। বাক্যটা আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল। ছাতু হয়ে যাওয়া আর পরাজিত হওয়া এক জিনিস না। পরাজিত হয় একজন মানুষ মানসিকভাবে এবং ভাবনায় সে যদি অজেয় হয় তাকে কেউ পরাজিত করতে পারে না। এবং এই যে হেমিংওয়ের জীবন- এটাও খুব রোমাঞ্চকর জীবন রোমাঞ্চকর জীবন। তিনি আমেরিকা-কানাডা-ফ্রান্স সাংবাদিকতা করেছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইটালিতে রেডক্রসের অ্যাম্বুলেন্স চালিয়েছেন। স্পেনের যে গৃহযুদ্ধ সেই গৃহযুদ্ধেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন এবং সেই গৃহযুদ্ধে অংশ নিয়ে তার একটা উপন্যাস রয়েছে অমর উপন্যাস। সেটা হচ্ছে ফর হুম দা বেল টোলস। তো যখন তিনি তরুণ সাংবাদিক, তখন সুইজারল্যান্ডের লুসানে বৃটেন ফ্রান্স ইটালি এবং তুরস্কের মধ্যে আলোচনা চলছে যুদ্ধ নিয়ে। তিনি সাংবাদিক হিসেবে
সেখানে গিয়েছেন খবর সংগ্রহের জন্যে এবং তখন লেখক হিসেবে তিনি অপরিচিত ছিলেন, দু-চারটা লেখা বেরিয়েছে।
জীবিকার প্রয়োজনে তিনি সাংবাদিকতা করতেন কিন্তু তার মনছবি ছিল লক্ষ্য ছিল সাহিত্যিক হওয়া যে তিনি সাহিত্য করবেন। তো তার এই যে লেখা, লেখার একজন খুব খ্যাতিমান সমালোচক প্রশংসা করলেন। তো প্রশংসা পেয়ে তিনি খুব উৎসাহিত হলেন এবং স্ত্রী প্যারিসে ছিল। স্ত্রীকে লিখলেন যে, শিগগিই চলে আসো সুইজারল্যান্ডে এবং আসার সময় আমার যে একটা অসমাপ্ত উপন্যাস রয়েছে ছোট গল্প রয়েছে ১২টা এবং অন্যান্য যা লেখা আছে সমস্ত লেখাগুলো নিয়ে আসো।
হেমিংওয়ে আবার ডুপ্লিকেট কপিও রাখতেন কার্বন কপি করে। এখনকার দিনের মতো তখন কী ছিল না? অ্যা দিলাম আর মানে প্রিন্ট হয়ে বেরিয়ে আসল এটা ছিল না। তখন কার্বন পেপার ছিল কার্বন পেপারে লিখলে ডুপ্লিকেট হয়ে থাকত বা টাইপ করলে ডুপ্লিকেট কপি হতো। তো স্ত্রী মানে আসলে মহিলারা যে-কোনোকিছু গুছিয়ে সাজিয়ে সবকিছু নিয়ে যা যা নেয়া সম্ভব সব নিয়ে যাত্রা করতে তারা পছন্দ করেন বেশি। স্যুটকেস ভরে শুধু অরজিনাল কপি না কার্বন কপি সেকেন্ড কপি সব নিয়ে রওয়ানা দিলেন এবং যখন তিনি ট্রেনে যাচ্ছেন। ট্রেন থেকে সুটকেসটা হারিয়ে গেল সব লেখাসহ।
এখন নতুন লেখক হয়েছেন তিনি বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায় নিয়মিত লেখা ছাপানোর জোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন এর মধ্যে লেখাগুলো সব হারিয়ে গেল। লেখাগুলো তিনি যথেষ্ট সময় নিয়ে ভালো সাহিত্যিক ভাষায় খুব উপমা অলংকার দিয়ে লিখে ছিলেন খেটেখুটে লিখেছিলেন গল্প। তো এত অল্প সময়ের মধ্যে তো অত খেটেখুটে অত শব্দ অত উপমা অলংকার এগুলো দিয়ে লেখা সম্ভব না। কিন্তু লিখতে হবে। দেখেন লিখতে হবে উনি সমাধান কী ভাবলেন? একজন সাংবাদিক তার যে ভাষা সংবাদের যে ভাষা এই ভাষাটা সবসময় সহজ হয়।
সাংবাদিকতার গুরু ছিলেন বিশেশ্বর চৌধুরী। তিনি প্রথমে আমাকে বলেছিলেন যে, দেখো, সাহিত্য করবে না। এই পত্রিকায় যা ছাপা হবে এটা যেরকম একজন শিক্ষিত মানুষ পড়বে, একজন পানওয়ালা যে বানান করে পড়ে সেও পড়বে। যে বানান করে করে পড়ে সেও যেন বুঝতে পারে সেভাবে লিখবে। তো একজন সাংবাদিক স্বাভাবিকভাবে তার লেখাটা ছোট ছোট বাক্য হয় এবং সহজবোধ্য হয় সহজ শব্দমালা ব্যবহার করা হয়। আর সাংবাদিকদের লিখতে হয় খুব দ্রুত। কারণ এই সময়ের মধ্যে লিখে শেষ করে দিতে হবে। এরপরে হলে ছাপা হবে না। তো দ্রুত লেখার জন্যে সাংবাদিকের যে লেখার স্টাইল এই স্টাইলটা প্রয়োগ করলেন সাহিত্যে। ছোট ছোট বাক্য ছোট ছোট প্যারা এবং অসাধারণ হলো তার
লেখনী। এবং তার প্রথম উপন্যাস বেরোলো ‘দ্য সান অলসো রাইজেস’ এবং প্রথম উপন্যাসই বাজিমাত।
এবং একজন বিখ্যাত সমালোচক তার এই উপন্যাসের আলোচনায় লিখলেন যে, হেমিংওয়ে এমন ভাষায় লিখেছেন যে মনে হচ্ছে তিনি অন্য কারো লেখা পড়েন নি। একেবারে স্বতন্ত্র তার স্টাইল।
কেন সম্ভব হলো? কারণ যেহেতু স্যুটকেসভর্তি লেখা হারিয়ে গেছে এবং দ্রুততম সময় লিখতে হবে তিনি তার সাংবাদিকতার লেখার যে স্টাইল এই স্টাইলটা প্রয়োগ করলেন। তিনি যদি প্রচলিত ঢংয়ে প্রচলিত স্টাইলে উপন্যাস লিখতেন তাহলে এটা সেভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারত না। কিন্তু নতুন স্টাইল সহজ সাধারণ স্টাইল অবলম্বন করার কারণে একটা নতুন গদ্যরীতি তিনি তৈরি করতে পারলেন। তো আসলে আপাতদৃষ্টিতে প্রথম কী হয়েছিল? পুরো স্যুটকেস ভর্তি লেখা হারিয়ে গেছে বিপর্যয়! কিন্তু এই বিপর্যয় এই সমস্যাটাই হেমিংওয়ের দৃষ্টিভঙ্গিটা পাল্টে দিল
এবং তার জীবনও বদলে গেল। তিনি গত শতাব্দীর একজন অমর কথাশিল্পী হিসেবে অমর হয়ে গেলেন ঝরঝরে ভাষার কারণে। কারণ ঝরঝরে ভাষায় নিজের অন্তরের কথা যত সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা যায় আলঙ্করিক ভাষায় এটা অত সাবলীলতা সবার জন্যে হয় না।
৪. সমাধানের সুপ্ত বীজকে খুঁজে বের করুন
আসলে আমরা সবসময় বলেছি প্রত্যেকটা সমস্যার মধ্যে সুপ্ত থাকে কিসের বীজ? হ্যাঁ সম্ভাবনার বীজ সাফল্যের বীজ। প্রত্যেকটা সমস্যার মধ্যে সুপ্ত থাকে সম্ভাবনার বীজ সাফল্যের বীজ। এবং ইতিহাস যদি দেখেন ভুরি ভুরি উদাহরণ। আপনি দেখেন এই যে, কর্ণফুলী পেপার মিলস। কর্ণফুলী পেপার মিলস যখন করা হলো এটার মূল লক্ষ্য ছিল এই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলের বাঁশ। পাকিস্তান আমলে এখন থেকে কত? এখন থেকে ৬০ বছর আগে যখন কর্ণফুলী পেপার মিল করা হলো কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে এই বাঁশের ওপর নির্ভর করে। পার্বত্য এলাকার বাঁশ যাবে, বাঁশ দিয়ে কাগজের মণ্ড তারপরে কাগজ তৈরি হবে। তো যে বছর মিল তৈরি হলো তার পরের বছরই পার্বত্য এলাকায় বাঁশ গাছে ফুল ধরল এবং ফুল সাধারণত কখনো ২১ কখনো ৩০ কখনো ৫০ বছর পরে ফুল হয়। আর বাঁশে যখন ফুল হয় ফুল হওয়ার পরে ফল হয় এবং ফল হওয়ার পরে সব বাঁশ গাছ মরে যায়। তিন বছরের আগে আর ঐ বীজ লাগিয়ে ওখান
থেকে গাছ হবে তিন বছর কমছে কম। তো পরের বছরই সব বাঁশ মরে গেল। শুকনো বাঁশ দিয়ে তো আর কাগজের মণ্ড হবে না। মিল বন্ধ হওয়ার উপক্রম। স্বাভাবিকভাবে মিল চালু রাখলে বসিয়ে বসিয়ে শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে। আর বন্ধ করলে এত শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে কর্মচারী বেকার হয়ে যাবে। তো ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ চিন্তা করল কী করা যায়? তারা কিন্তু আর সমস্যা নিয়ে ভাবে নাই, বাঁশ গাছ যা মরে গেছে গেছে এই মরা বাঁশ গাছ আর
জ্যাতা করা যাবে না। তিন বছরের আগে এখান থেকে কোনো সম্ভাবনা নাই, তিন বছর মিল বন্ধ রাখা যাবে না।
তো কী করো? আমাদের তো তখন নদীবাহিত অঞ্চল ছিল সব জায়গা থেকে যেখান থেকে পারো বাঁশ যোগাড় করো এবং সেই সাথে সাথে গাছের অনুসন্ধান করো যে, নরম গাছ যে গাছ দিয়ে কী হবে? কাগজের মণ্ড তৈরি করা যাবে এবং দুমাসের মধ্যে তারা বিকল্প সাপ্লাই চেইন তৈরি করে ফেলল। এটা আমাদের চট্টগ্রাম হিলেরই ইতিহাস হচ্ছে।
দুমাসের মাথায় বিকল্প সাপ্লাই চেইন তৈরি হয়ে গেল এবং আজকে ৬০ বছর ধরে কর্ণফুলী পেপার মিলের উৎপাদিত কাগজ দিয়ে আমরা লেখাপড়া করেছি, আমাদের ছেলেমেয়েরাও লেখাপড়া করছে, নাতি-নাতনিরাও লেখাপড়া করছে। যদি তারা বসে থাকতেন যে, হায়রে! বাঁশ হায়রে বাঁশ! তুই তো গেলি আমার আবার সাথে নিলি। তাহলে কী হতো? মিল আর চালু হতো না। তো সবসময় কী করতে হবে? ভাবতে হবে সমাধান নিয়ে। সমাধান নিয়ে যখন ভাববেন তখন আসলে সমাধান বেরিয়ে আসবে। হাতভাঙা নিয়েও ফক্সবারি যেভাবে তার সমস্যা সমাধানের কাজে লেগেছিলেন…
এই যে খেলাধুলা, আমাদের কোয়ান্টারা খেলাধুলা করে। খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ সবারই থাকে। তো একজন হাই জাম্পার তার নাম হচ্ছে, ফক্সবারি। সে এমন কোনো খেলা নাই খেলে নাই। কোনো খেলাতে সে সুবিধা করতে পারে নি। মোটিমুটি তাল গাছের মতো লম্বা ছিল ছয় ফুট চার ইঞ্চি। কিন্তু বাস্কেটবলেও সুবিধা করতে পারে নি। কারণ বাস্কেটবলে বলা হয় যে, লম্বা হলে সুবিধা বেশি সেটাও পারে নি। শেষ পর্যন্ত হাই জাম্পে নাম লেখায়।
তো তার এক সহপাঠী তাকে চ্যালেঞ্জ করল যে, তুই চেয়ারটাও হাই জাম্প দিয়ে পার হতে পারবি না। তো সে বাজি ধরল ঠিক আছে বাজি। ঐ চেয়ার পার হতে গিয়ে সে পড়ে গেল এবং তার একহাত ভেঙে গেল। লাফ দিয়ে চেয়ার পার হতে গিয়ে চেয়ার পার হতে পারল না। এবং সবাই কোচটোচসহ সবাই বলল যে, এর দ্বারা কিছু হবে না। ঢ্যাংঢ্যাঙা এখনো কোনো মানে কোনো কাজের না কিচ্ছু হবে না। কিন্তু ফক্সবারি তার মনছবি ঠিক করে ফেলল লক্ষ্য ঠিক করে ফেলল যে, আমি হাই জাম্পার হবো। কীভাবে আমি জাম্প করব! এবং অনেক কসরত করল। তখনকার প্রচলিত জাম্পিং নিয়ম ছিল ওয়েস্টার্ন রোল এবং সিজোর্স। কিন্তু সে কোনোটাই আয়ত্ত করতে পারল না। ওয়েস্টার্ন রোল হলো মাথাটা নিচ দিকে দিয়ে একপা ওপরে দিয়ে পরের পা তারপরে দেয়া। সে কোনোটাই কোনোটাই সে সুবিধা করতে পারল না।
তখন ভাবতে ভাবতে সে একটা নতুন পথ বের করল যে, আমি যখন সোজা হচ্ছি না তাহলে বাঁকা হয়ে দেখি পারি কিনা! কীভাবে দৌড়ে দৌড়ে দৌড়ে গিয়ে উল্টো ঘুরে পেছন দিক থেকে দুই পা থ্রো করা আগে বডি থ্রো করে দেয়া এবং সে পেরে গেল। তার কোচ এবং অন্যান্যরা বলল যে, দেখো তুমি যে শরীরটাকে আগে দিচ্ছ মাথাটা আগে দিচ্ছ তোমার তো ঘাড় মচকে যাবে। পড়বা গিয়া ঐ পারে, ঘাড় মচকাবে। বলে যে, না ঘাড় মচকাবে না আমার পা গিয়ে ঠিকমতো পড়বে। আমি মাথা আগে দিচ্ছি, কিন্তু পা পড়বে নিচে। এবং তাকে যত নিরুৎসাহিত করা হোক তার কিন্তু উৎসাহের কোনো ঘাটতি ছিল না। সে সে প্র্যাকটিস করতে শুরু করল। এবং প্রথমদিনই যখন ঘরোয়া কম্পিটিশন সে ছয় ফুট পার হয়ে গেল জাম্প করে। তো অন্যরা বলল যে, এটা তো কেমন, সামনের দিকে দৌড়ে হঠাৎ পেছন দিকে গিয়ে লাফ দেয়া। এটা কেউ দেখবে? তো তাকে কিন্তু সে বলল যে, না আমি এভাবেই দেবো।
১৯৬৮ সালে মেক্সিকো অলিম্পিকে অলিম্পিক টিমে সে চান্স পেয়ে গেল। প্রতিযোগিতার দিন বাকি সব প্রতিযোগী লাফ দিচ্ছে এভাবে, আর সে লাফ দিচ্ছে উল্টা। এবং স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক খুব দুয়ো দুয়ো টিটকারি দিতে লাগল! এটা একটা জাম্প হলো।
কিন্তু ডিক ফক্সবারি- সে প্রত্যেক জাম্পে প্রতিযোগীদের হারাতে শুরু করল এবং অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয় করল। এবং নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়ে তুলল। এবং হাই জাম্পের ইতিহাস বদলে গেল। এখন হাই জাম্প অধিকাংশ প্রতিযোগী এই ফক্সবারির স্টাইল অনুসরণ করেই দেয়।
অর্থাৎ একজন মানুষ যদি সমাধান নিয়ে ভাবে, সে কিন্তু মডেল হয়ে যেতে পারে। তার ইউনিকনেস সে অনন্য কিছু, নতুন কিছু সে আবিষ্কার করে ফেলে এবং সে ইউনিক হয়ে যেতে পারে। তো আসলে ফক্সবারি যদি প্রচলিত পন্থায় ব্যর্থ না হতো এবং ব্যর্থ হয়ে সে যদি সমাধানের উপায় চিন্তা না করত তাহলে অলিম্পিকের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড সে গড়তে পারত না।
প্রত্যেকটা মানুষ যারা পৃথিবীতে সফল হয়েছেন, তারা সবসময় সমস্যা নিয়ে ভাবেন নাই, তারা সবসময় সমাধান কী হতে পারে এটা নিয়ে ভেবেছেন। তো সবসময় যখনই আপনি সমাধান নিয়ে ভাববেন দেখবেন যে, সমাধান বেরিয়ে আসছে।
আসলে তারুণ্যে হেমিংওয়ের ঐ যে বাক্যটা ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সি। ম্যান ক্যান বি ডেস্ট্রয়েড বাট নট ডেফিটেড। আসলে মানুষকে যে-কোনোকিছু দিয়ে পারমাণবিক বোমা দিয়ে তাকে ধ্বংস করা যেতে পারে কিন্তু তাকে পরাজিত করা যায় না। ছাই থেকে সে অমরত্ব লাভ করে।
৬. স্রষ্টার ওপর ভরসা রাখুন এবং সাহায্য প্রার্থনা করুন
তো যখনই কোনো সমস্যা আসবে কেন হলো কী কারণে হলো কী নিয়ে হলো কে করল! নেভার! সবসময় চিন্তা করবেন যে, সমাধানটা কী! কারণ আপনি কালের অতীতে কখনো যেতে পারবেন না। এগোতে হবে কালের ভবিষ্যতে।
এবং যখনই ভবিষ্যৎ চিন্তা করবেন এবং স্রষ্টার ওপরে কী রাখবেন? ভরসা রাখবেন, তখন কী হবে? হাদীস শরীফ বাংলা মর্মবাণীর ৪২৪ হাদীস শরীফ কী?
“আল্লাহ বলেন, বান্দার ধারণা অনুসারেই আমি তার সামনে প্রতিভাত হই। সে যখন প্রার্থনা করে, আমি তার সাথেই থাকি। সে যদি মনে করে আমি তাকে অনুগৃহীত করব, আমি তাকে তখন অনুগৃহীত করি। আর যদি সে মনে করে আমি তার প্রতি বিরূপ, তবে সে বিরূপতারই সম্মুখীন হয়”।
তো আমরা সবসময় কী ভাবি? যে আল্লাহ আমাদেরকে অনুগৃহীত করবেন । এবং তিনি আমাদেরকে সবসময় অনুগৃহীত করেছেন এবং তিনি আমাদেরকে সবসময় অনুগৃহীত করবেন। এজন্যে সবসময় কী ভাববেন? সমস্যা যখন আসবে সমাধান নিয়ে ভাববেন। এবং স্রষ্টার সাহায্য প্রার্থনা করবেন। যে স্রষ্টা আমার সাথে আছেন, আমি সমস্ত সমস্যাকে অতিক্রম করব। সেটা পরীক্ষা হোক মামলা হোক মোকদ্দমা হোক অসুখ হোক বিসুখ হোক চক্রান্ত হোক ষড়যন্ত্র হোক আর্থিক বিপর্যয় হোক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক। সবসময় ভাববেন যে, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন ভগবান আমাদের সাথে আছেন স্রষ্টা আমাদের সাথে আছেন এবং তিনি আমাদেরকে অনুগৃহীত করবেন, জয়ী করবেন সব পরিস্থিতির ওপরে এবং ইনশাআল্লাহ আপনি জয়ী হবেন। তো এত সুন্দর সময় কাটোনোর সুযোগ যে আপনারা আমাকে দিলেন এজন্যে আমার অভিনন্দন গ্রহণ করুন। ভালো থাকুন আনন্দে থাকুন।
কেআই//