আওয়ামী লীগ সবসময়ই সমাজের সুবিধাবঞ্চিত এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে মনোযোগী। ২০২৩ সালের মধ্যে পথশিশুদের নিরাপদ আবাসন, নারী শ্রমিক চার মাসের বেতন সহ মাতৃত্বকালীন ছুটি, প্রতিবন্ধী শিশুদের চলাফেরা, চিকিৎসা সহজ করা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের অধিকার রক্ষায় জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ইত্যাদির মাধ্যমে অবহেলিত মানুষের উন্নয়ন ধরে রাখার পরিকল্পনা আছে দলটির।
শ্রমিক কল্যাণ ও শ্রমনীতি
মালিক-শ্রমিক এবং শ্রম ও মজুরির সম্পর্ক শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার পূর্বশর্ত। সংবিধানের আলোকে এবং আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী শ্রমনীতি ও শ্রমিক কল্যাণে বহুমুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
- শিল্প শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা করা হবে।
- নারী শ্রমিকদের জন্য ৪ মাসের বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে।
- শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
- গার্মেন্টস শ্রমিকসহ সকল শ্রমিক, হতদরিদ্র এবং গ্রামীণ ভূমিহীন ক্ষেতমজুরদের জন্য বিশেষ বিবেচনায় অন্যান্য পদক্ষেপের সঙ্গে রেশনিং প্রথাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিশু কল্যাণ
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের কল্যানের জন্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিশেষ বিধান সংবিধানে যুক্ত করেছিলেন। ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্ম দিবস আমাদের জাতীয় শিশু দিবস। বিগত দশ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার শিশুর নিরাপত্তা বিধান এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
- শিশুশ্রম বন্ধ করার লক্ষ্যে গড়ে ওঠা সুদৃঢ় সামাজিক নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বৃত্তি ও নানাবিধ কর্মকান্ড উন্নত ও প্রসারিত করা হবে।
- শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যবহার, প্রলোভন বা জোর করে জড়িত করা হবে না। শিশু নির্যাতন বিশেষ করে কন্যা শিশুদের প্রতি বৈষম্য, নির্যাতন বন্ধ ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
- পথশিশুদের পুনর্বাসন ও নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল শিশুদের জন্য শিশুসদন প্রতিষ্ঠা এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা উন্নত ওপ্রসারিত করা হবে।
প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ কল্যাণ
প্রতিবন্ধী
প্রতিবন্ধীরা সমাজেরই অংশ। দেশে ১৬ লক্ষ প্রতিবন্ধী রয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রতিবন্ধীদের মেধার বিকাশ ও স্বাভাবিক জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যা উন্নত ও প্রসারিত করা হবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের উদ্যোগে জাতীয়ভাবে এবং জাতিসংঘেও অটিজম বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও কল্যাণমূলক প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
- প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক) শিশুদের সুস্বাস্থ্য, শিক্ষা, মর্যাদা ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা হবে। প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, চলাফেরা, যোগাযোগ,চিকিৎসা সহজ করা এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রবীণ কল্যাণ
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১১সালে বাংলাদেশে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা ছিল ১.১৩কোটি, যা প্রতি বছর ৪.৪১শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১.৩০কোটি, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ ভাগ। পরিবার ও সমাজের প্রতি তাদের অবদান বিবেচনায় প্রবীণদের সার্বিক মৌলিক অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা সুরক্ষায় বর্তমানে সরকার কাজ করে চলেছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
- সামাজিক ‘নিরাপত্তা-বেষ্টনি কার্যক্রমে’ প্রবীণদের অন্তর্ভূক্তির বর্তমান সংখ্যা ও সহায়তার পরিমাণ সম্প্রসারণে বাস্তবতার আলোকে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
- প্রবীণদের জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রে আয় সৃষ্টিকারী কার্যক্রম গ্রহণ, প্রবীণদের বিষয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পাঠ্য বই-এ আলাদা অধ্যায় সংযোজন, যানবাহন এবং আবাসিক স্থাপনাগুলোতে প্রবীণদের জন্য আসন/পরিসর নির্ধারণ,তৃণমূল পর্যায়ে প্রবীণদের জেরিয়াট্রিক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ এবং হাসপাতাল, বিমানবন্দর, বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহনে উঠা-নামার ব্যবস্থা প্রবীণ-বান্ধব করে গড়ে তোলা হবে।
ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অনুন্নত সম্প্রদায়
স্বাধীন দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যে সংবিধান জাতিকে উপহার দিয়েছেন, তাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ও অনুন্নত সম্প্রদায়সহ সকল নাগরিকের সমমর্যাদা ও অধিকার সুনিশ্চিত করেন। পঁচাত্তরে সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সংবিধান পরিবর্তন করে দেশকে পাকিস্তানি ধারায় নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা হয়। ২০১১ সালে সংসদে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী পাস করে আওয়ামী লীগ ’৭২-এর সংবিধানের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে। সকল ধর্মের সমান অধিকার এবং দেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-জাতিগোষ্ঠী ও উপজাতিদের অধিকার ও মর্যাদার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে ধর্মীয় ও নৃ-জাতিসত্তাগত সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান এবং তাদের জীবন, সম্পদ, উপাসনালয়, জীবনধারা ও সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য রক্ষার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আবারও সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার-এই মর্মবাণীরই প্রতিফলন।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
- অর্পিত সম্পত্তি সংশোধনী আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকৃত স্বত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।
- জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে। সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রনয়ণ করা হবে।
- সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জমি, জলাধার ও বন এলাকায় অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ভূমি কমিশনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। অনগ্রসর ও অনুন্নত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, দলিত ও চা-বাগান শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা এবং সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকবে।
- সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল প্রকার আইন ও অন্যান্য অন্যায় ব্যবস্থার অবসান করা হবে।
- ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের অধিকারের স্বীকৃতি এবং তাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবনধারার স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ ও তাদের সুষম উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। সূত্র: আওয়ামী লীগ ওয়েবসাইট
এসি