ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

সম্পদ গড়ার মূল হাতিয়ার সুস্বাস্থ্য

প্রকাশিত : ১১:০৫, ১০ জুন ২০১৯ | আপডেট: ১১:০৬, ১০ জুন ২০১৯

যার গাড়ি-বাড়ি, অর্থ-সম্পদ আছে প্রাচীনকাল থেকে তাকেই বুদ্ধিমান ও দূরদর্শী বলে আসছে। কিন্তু আধুনিককালে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যক্তিরাই হলেন বুদ্ধিমান ও দূরদর্শী।

স্বাস্থ্য যার ভালো তার সবকিছুই ভালো। অসুস্থতা খরচের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। সুস্থ্য ব্যক্তি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে, বেশি দিন বেঁচেও থাকে, তার জন্য রোজগারের পথও খোলা থাকে। তাই ধন-সম্পদ গড়ার মূল হাতিয়ার হলো সুস্বাস্থ্য।

অর্থ, জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট এগুলোকে মানুষ সাধারণত সম্পদ হিসেবে মনে করে। এ জন্য সারাজীবন পরিশ্রম করে ব্যাংকে অর্থ জমা করে, উদ্দেশ্য একটাই জমি ক্রয়। জমি কিনলো, এবার বাড়ি বা ফ্ল্যাট করার আশায় অর্থ জমা করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যদি একটু সুখে থাকা যায়। স্বাদের বাড়ি বা ফ্ল্যাটও হয়ে গেলো।

কিন্তু অনিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন, সুষম খাওয়া-দাওয়ার অভাব, বিভিন্ন রকম বদঅভ্যাস গড়ে তোলার কারণে  শুরু হলো হাসপাতালে আনাগোনা।

নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে থাকলো, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হলো। নানা রকম ওষুধ চলতে থাকলো। ব্যাংকে জমাকৃত অর্থে হাত পড়তে পড়তে শেষ পর্যায়ে। সুখে থাকার জন্য বাড়িতে অসুস্থ হয়ে কাটাতে হলো। সুখ তো অনেক দূরে চলে গেল। অর্থ-সম্পদও নিজের আর রইল না।

ভবিষ্যতের কথা ভেবে সঞ্চয়ের প্রবণতা মানুষের বহু প্রাচীন অভ্যেস। গ্রামে ঘরের বাঁশের খুঁটিতে ফুটো করে, টিনের কৌটায়, মাটির ব্যাংকে কিংবা কমার্শিয়াল ব্যাংকে টাকা জমানোর অভ্যেস কমবেশি সবারই আছে। কিন্তু চাইলেও সবাই পারে না কাক্ষিত পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করতে। পারে কেবল বুদ্ধিমান ও হিসেবিরাই।

আধুনিককালে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যক্তিরাই হলেন সেই হিসেবি বুদ্ধিমান ও দূরদর্শী। তারা জানেন, সুষম প্রাকৃতিক খাবার, ব্যায়াম আর নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মাধ্যমে তারা অর্জন করেছেন যে সুস্বাস্থ্য, তা-ই হতে পারে তাদের অর্থ সঞ্চয়ের মূল হাতিয়ার। কীভাবে?

‘সুস্বাস্থ্য প্রাচুর্যের অন্যতম ভিত্তি’-বলেছেন ব্রুস পিয়েনসন, তিনি আমেরিকার স্বাস্থ্যসেবা-দানকারী একটি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তার ভাষায়, ক্রনিক রোগীদের ক্ষেত্রে ওষুধ, ডাক্তার ও হাসপাতালের পেছনে খরচের পরিমাণটা কিন্তু আদতে কম নয়।

একটি জনস্বাস্থ্য বীমা প্রতিষ্ঠানের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অসুস্থ মানুষদের চিকিৎসাখাতে বাৎসরিক মোট ব্যয়ের পরিমাণ সুস্থদের তুলনায় চারগুণ বেশি, অথচ যা হতে পারতো তাদের অবসর জীবনের একটি বড় সঞ্চয়।

হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারসহ অনেক জটিল রোগের একটি বড় কারণ মেদস্থূলতা। গবেষণায় দেখা গেছে, ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে মেদস্থূলদের খরচের পরিমাণ অন্যান্যদের তুলনায় তিনগুণ বেশি।

আমেরিকান সরকার কর্তৃক পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, সে দেশে প্রতিজন ডায়াবেটিক রোগীর বাৎসরিক অতিরিক্ত খরচের পরিমাণ ৫৫০ ডলারের বেশি, কারো কারো ক্ষেত্রে এটি ১২০০ ডলার পর্যন্ত।

উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে এ খরচ ৬০০ ডলারেরও বেশি। এ রিপোর্টের শেষে উল্লেখ করা হয়েছিলো, ওজন কমিয়ে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে এসব রোগ এড়ানোর মাধ্যমে গড়ে তুলুন ভবিষ্যতের বড় সঞ্চয়।

শুধু তা-ই নয়, ধূমপান বর্জনের মাধ্যমে সিগারেট খরচ বাঁচিয়েও প্রতিবছর সঞ্চয়ের পরিমাণ বহুগুণ বাড়াতে পারেন আপনি। এভাবে ধূমপান থেকে সৃষ্ট শ্বাসতন্ত্রের রোগ অ্যাজমা ও জীবনঘাতী ক্যান্সারসহ ফুসফুসের বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগের সম্ভাবনা আপনি ঠেকিয়ে রাখতে পারেন, ভবিষ্যতের সঞ্চয়কে করতে পারেন অধিকতর মজবুত।

এ সংক্রান্ত যাবতীয় গবেষণা শেষে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, ভাজাপোড়া ও তেল-চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন করুন। ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং টেনশন থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও বিজ্ঞানসম্মত সুস্থ জীবন-অভ্যাস গড়ে তুলুন। এই সুস্থ্য জীবনই নিশ্চিত করবে আপনার ভবিষ্যত সঞ্চয়।

তথ্যসূত্র : স্বাস্ব্য বিষয়ক বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি