সময় থাকতে শিক্ষকদের সমস্যার সমাধান করুন: কাদের সিদ্দিকী
প্রকাশিত : ১৯:৫২, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭
সময় থাকতে আমরণ অনশনে থাকা শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী। রোববার বিকাল ৫টার দিকে তিনি শহীদ মিনার পাদদেশে উপস্থিত হয়ে শিক্ষকদের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এ আহবান জানান।
আবদুল কাদের সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, শিক্ষকদের প্রতি যে বৈষম্য হচ্ছে, তা চলতে পারে না। আমি তার কাছে (প্রধানমন্ত্রীর) বলছি শিক্ষকদের দাবি অন্যায্য দাবি নয়। আপনি তাদের সমস্যা দেখুন, বিচার কুরুন, সমাধান টানেন। সময় থাকতে তাদের প্রতি ন্যায় বিচার করুন। সময় না থাকলে বিচার করার সুযোগ পাবেন না।
তিনি বলেন, আগে যদি জানতাম মুক্তিযুদ্ধ করতাম না। যারা মানুষ গড়ার কারিগর আজ তাদের না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। আমার খুব লজ্জা হচ্ছে। অফিসে সামান্য কর্মচারিরও সমান বেতন এ মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা পাচ্ছেন না। এতো কম বেতন বাড়ির কাজের লোকও পায় না। তিনি প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন পার্থক্রম সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা করার দাবি করেন। সেক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক ২৫ হাজার এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন ২৪ হাজার করার দারি রাখেন তিনি।
অনশনরত শিক্ষকদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমিও এক সময় ৩০৮দিন ঘরের বাইরে থেকে দেখেছি এ কাজ কতো কষ্টের। আপনারা (শিক্ষকরা) দাবি আদায়ে এক ও অভিন্ন থাকবেন। বিজয় আপনাদের সুনিশ্চিত। তবে আপনারা অনশন এক সঙ্গে না করে ভাগাভাগির মাধ্যমে করেন। নইলে একাধারে অনশন করলে মারাত্মক স্বাস্থ্যহানি হবে।
এদিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আজ রোববার সন্ধ্যায় শিক্ষকদের অনশন অব্যাহত ছিল।‘আমাদের দাবি আমাদের দাবি, মানতে হবে মানতে হবে’, ‘বিজয় না নিয়ে আমরা ফিরে যাব না’ আমরা ঘরে ফিরে যাবো না- যাবো না’ প্রভৃতি স্লোগানে শিক্ষকরা রোববারও মুখরিত করে রেখেছেন শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। বক্তব্য ও সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে দাবি তুলে ধরেছেন তারা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে শনিবার সকাল ১০টা থেকে অনশন করছেন শিক্ষকরা।
অনশনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাবেরা বেগম বলেন, আমরা মরে যাবো তবুও এখান থেকে যাবো না। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রেণীকক্ষে ফিরবো না। আমরা চাই আমাদের বেতন বৈষম্য দূর হোক। আমাদের আন্দোলন মর্যাদার। একই স্কুলে থেকে দুই রকমের মর্যাদা চাই না।
শিক্ষক নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বেতন বৈষম্য দূর করে প্রধান শিক্ষকদের পরের ধাপে (গ্রেডে) বেতন কাঠামো ঘোষণা করার আগ পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি চলবে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষক নেতারা।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মহাজোটের আহ্বানে কর্মসূচিতে আরও অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ, জাতীয় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফাউন্ডেশন, সহকারী শিক্ষক ফ্রন্টসহ ১০টি সংগঠনের অধীনে হাজার হাজার শিক্ষক।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে ঘোষিত ৮ম জাতীয় পে-স্কেল অনুযায়ী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা (২য় শ্রেণি) ১১তম গ্রেড অর্থাৎ ১২ হাজার ৫০০ টাকা এবং প্রশিক্ষণ ছাড়া প্রধান শিক্ষকরা ১২তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন ১১ হাজার ৫০০ টাকা।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডে অর্থাৎ ১০ হাজার ২০০ টাকা বেতন পাচ্ছেন আর প্রশিক্ষণ ছাড়া সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৫তম গ্রেডে ৯ হাজার ৭০০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে নতুন স্কেলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা ১০ম গ্রেড এবং প্রশিক্ষণ ছাড়া প্রধান শিক্ষকরা পাবেন ১১তম গ্রেডে, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। সহকারী শিক্ষক, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও প্রশিক্ষণ ছাড়া প্রধান শিক্ষকরা যে বেতন পাবেন তার পরের ধাপে তারা বেতন চান। অর্থাৎ প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে বেতন চান সহকারী শিক্ষকরা।
আরকে// এআর
আরও পড়ুন