ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

সময়ের সম্ভাবনার পেশা ফটোগ্রাফি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩৬, ২১ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১২:৪৪, ২১ জানুয়ারি ২০১৮

ছবি মনের কথা বলে। যুগ যুগ বয়ে চলে স্মৃতি। ছবি সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। অনেকেই শখের বসে ছবি তুলতে তুলতে পেশায় পরিণত করেছেন ফটোগ্রাফি। বর্তমান যুগে বিয়ে, জন্মদিন, সামাজিক বা ব্যক্তিগত সব ধরণের উৎসব-অনুষ্ঠানে ছবি আমাদের জীবনের একটা অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এসব অনুষ্ঠানে প্রত্যেকটা ছবি এক একটি স্মারক হয়ে থাকে। তাই ছবিগুলো খুবই যত্মসহকারে তুলতে হয়। আর এই কাজগুলো করতে পারেন একজন প্রফেশনাল আলোকচিত্রী। তাই দিন দিন বাড়ছে আলোকচিত্রীর কদর। খুব সহজেই খণ্ডকালীন বা পূর্ণকালীন সময় দিয়ে ছবি তুলে দেওয়ার মাধ্যমে চোখধাঁধাঁনো আয়ও করা সম্ভব। তাই তরুণদের জন্য সময়ের সবচেয়ে সম্ভাবনাময়ী পেশা হচ্ছে ফটোগ্রাফি।

ফটোগ্রাফি পেশার খুঁটিনাটি দিকে নিয়ে একুশে টিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সাবেক সভাপতি এবং ওয়েডিং কালারস এর প্রধান নির্বাহী ও প্রধান আলোকচিত্রী আককাস মাহমুদ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টিভির অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান

একুশে টিভি অনলাইন : পৃথিবীতে এতো পেশা রেখে কেন ফটোগ্রাফিতে আসলেন?

আককাস মাহমুদঃ আমি মূলত সাংবাদিক ছিলাম। কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে ছিলাম উচ্চাবিলাসী। যে কারণে মনে হলো ভিন্ন কিছু করা দরকার। ছাত্র থাকা অবস্থায় ফটোগ্রাফি আমাকে টানতো। ভাবলাম ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসাবে নিলে ভাল করব। শুরুতে বাবা-মা হতাশ ছিলেন। তবে আমার আত্নবিশ্বাস ছিল যে, ফটোগ্রাফিতে ভাল করব। ১৯৯০সালে সেই স্বপ্নের পেশায় পথ চলা শুরু। প্রতিষ্ঠা করলাম পদ্মাস্টুডিও। প্রয়োজন অনুভব করলাম এ বিষয় কিছু প্রশিক্ষণ নেওয়া দরকার। সময়মতো বেগার্ট ইনস্টিটিউট ও গ্লোবাল ফটো এজেন্সি থেকে প্রশিক্ষণও নিলাম। এভাবেই যাত্রা শুরু।

একুশে টিভিঃ ফটোগ্রাফিতে কাজের ধরণটা কেমন?

আককাস মাহমুদঃ অনেক রকম ফটোগ্রাফার কাজ করে আমাদের আশপাশে। প্রত্যেকের কাজের ক্ষেত্র আলাদা। যেমন ফ্যাশন ফটোগ্রাফাররা ফ্যাশন শুট করে, ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফাররা জীবজন্তুর ছবি তুলে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফটোগ্রাফাররা মেশিনের ছবি তুলে, আবার ফরেনসিক ফটোগ্রাফারদের কাজ বিভিন্ন অ্যাসপেক্ট থেকে কোনো ক্রাইমের ছবি তোলা, যেমন কোনো খুন হলে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে লাশের ছবি তোলা, যাতে ছবি দেখে তদন্ত করতে সুবিধে হয়। সায়েন্টিফিক ফটোগ্রাফাররা আবার রিসার্চ ওয়ার্কের ছবি তুলে। এর বাইরেও রয়েছে ন্যাচার অর্থাৎ প্রকৃতির ছবি তোলা। ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফার, তাদের কাজ শুধু বিভিন্ন স্থানকে দর্শনীয় স্থানের মতো করে ছবি তোলা। সুতরাং যেকোনো ফটোগ্রাফিই পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া যায়।

একুশে টিভি অনলাইন: ক্যারিয়ার হিসেবে ফটোগ্রাফিতে সম্ভাবনা কেমন?

আককাস মাহমুদঃ একটা সময় ছিলো ফটোগ্রাফারদের তেমন কদর ছিল না। এমনকি সম্মানও করতো না লোকজন। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। ফটোগ্রাফাদের আয় ও সম্মান বেড়েছে। এ পেশাতে এখন অনেক শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা আসছেন। এছাড়া এই পেশায় ভালো আয়েরও সুযোগ রয়েছে। এমনকি ইন্টারনেটে ফটোগ্রাফি বিষয়ক ব্লগগুলোতে লেখার সুযোগ রয়েছে। ফটোগ্রাফি বিষয়ক আর্টিকেল লিখে এসব ব্লগ থেকেও আয় করা যায়।

একুশে টিভি অনলাইন : ফটোগ্রাফিতে কী পরিমাণ আয় করা সম্ভব। বিস্তারিত যদি বলতেন?

আককাস মাহমুদ: ফটোগ্রাফারদের ধীরে ধীরে কদর বাড়ছে। উদাহরণ হিসেবে বলতে চাই আগে বিবাহের বাজেট বা পরিকল্পনায় ফটোগ্রাফির জন্য কোনো বাজেট থাকতো না। কিন্তু এখন মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। এখন ফটোগ্রাফির জন্য আলাদা বাজেট রাখা হয় বিয়েতে। অনেকে ভাল বাজেট রাখেন। কেউ কেউ ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা বাজেট রাখেন। এরকম যদি মাসে যদি ১০টি ইভেন্ট পাওয়া যায়। তাহলে ৪ মাসে ১ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। নিজেদের বিয়েকে স্মৃতি হিসেবে রাখতে অনেক কাপল বিয়ের আগে ফটোশুট করে। অনেক কাপল আবার বিয়ের ফটোশুট করে। এরাই মূলত ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা দিয়ে থাকে। নভেম্বর চলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে এই ফটোগ্রাফির সিজন।

একুশে টিভি অনলাইন: ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার হিসেবে আয়ের সুযোগ কেমন?

আককাস মাহমুদঃ ফ্রিল্যান্সিং ফটোগ্রাফি করেও মাসে ভালো টাকা আয় করা সম্ভব। নিজের ব্যস্ততার ফাঁকে সময় বের করে বিয়ে জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ফটোশ্যুটের কাজ করতে পারেন। এতে কাজে দক্ষ হয়ে উঠার পাশাপাশি সম্মানজনক আয়ও করতে পারেন। মাসে কম করে হলেও বিশ-ত্রিশ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।

একুশে টিভি অনলাইন : এ পেশায় আপনার অভিজ্ঞতা বা অর্জন সম্পর্কে যদি বলতেন?

আককাস মাহমুদঃ আমি ৩০ বছর এপেশায় কাজ করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর ফটোগ্রাফি শুরু করেছি। বেশকিছু পুরস্কারও পেয়েছি। এরমধ্যে ২০১৬ সালে উইকি লাভার্স মনুমেন্ট ও ট্রাভেলার্স অফ বাংলাদেশ জুরি পাই। বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) সভাপতি হিসেবে ৩ বছর দায়িত্ব পালন করেছি।

২০০০ সালে বিল ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের সময় তার অফিসিয়াল ফটোগ্রাফার হবার সুযোগ হয়েছিলো। এছাড়া নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বাংলাদেশ সফরের সময়ও তার অফিসিয়াল ফোটোগ্রাফার হওয়ার সুযোগ হয়েছিলো। এগুলো আমার জীবনের বড় অর্জন।

একুশে টিভি অনলাইন : যারা এ পেশায় আসতে চান তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?

আককাস মাহমুদঃ সময়ের হাত ধরে ফটোগ্রাফি এখন সম্মানজনক পেশা। এই পেশায় মর্যাদার পাশাপাশি রয়েছে ভালো আয়ের সুযোগও। ফটোগ্রাফারদের বসে থাকতে হয় না। বাংলাদেশে অনেক ইনিস্টিটিউট আছে। যেখান থেকে ফটোগ্রাফির উপর প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়। ফটোগ্রাফির উপরে ডিপ্লামা করতে পারলে ভালো। ফটোগ্রাফি পেশা হিসেবে নিয়ে লেগে থাকলে অবশ্যই সাফল্য হবে।

একুশে টিভি অনলাইন : আপনার মূল্যবান সময় দেওয়া জন্য ধন্যবাদ।

আককাস মাহমুদঃ একুশে টিভি পরিবারকেও ধন্যবাদ।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি